শ্রী সুকুমার সেন
পূর্ব প্রকাশিতর পর
বাদ্যযন্ত্র ‘খোল’ ও পোড়া মাটির তৈরি বলে এই নাম পেয়েছে।
বসন-ভূষণ শব্দ
কাপড় এসেছে সম্ভবত *‘কর্পপট’ (মানে কাপাসের সুতোয় বোনা খন্ড?) থেকে। আধুনিক আর্য ভাষায় শব্দটির অর্থ নিন্দনীয় ছিল। মধ্যবাংলাতেও নিন্দনীয় অর্থ পাওয়া যায়। যেমন ‘কাপড়্যা সন্ন্যাসী’’ (অর্থাৎ ছেঁড়া কাপড়-পরা উদাসীন ভিক্ষুক)। এখন বাংলায় শব্দটির অর্থ খুব ব্যাপক হয়েছে। ‘কাপড়-চোপড়’ বলতে পোষাক সাজ-সরঞ্জাম সব বোঝায়।
শাড়ি এসেছে সংস্কৃত শাট (শাটক, শাটী) থেকে। শাট শব্দের মানে ছিল ফালি করে বোনা কাপড়। বহুকাল আগে সরু ফালি সেলাই করে জোড়া দিয়ে পরবার কাপড় তৈরি হত, মেয়ে পুরুষ সকলের জন্যে। প্রাচীন দেবমূর্তি লক্ষ্য করলেই এ ব্যাপারে বোঝা যাবে। তখন কাপড় হাঁটুর নীচে নামত না। এখন শাড়ি শব্দটি মেয়েদের পাড়াওয়ালা পরিধেয় বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। ‘’ডুরে শাড়ি’’ এই নাম থেকেও শাড়ির উৎপত্তি বোঝা যায়। ‘ডুরে’ এসেছে বাংলা ডোর (—শক্ত সুতো) থেকে। হিন্দী ডুরি (মানে, শতরঞ্চি) শব্দের সঙ্গেও সম্বন্ধ আছে। শতরঞ্চিও এভাবে বোনা হয়।
ধুতি এসেছে সংস্কৃত *ধুবত্রিক (*ধবত্রিক), মানে যা ধোয়া বা পাখলানো যায়। সুতরাং সাদা এবং আটপৌরে পরিধেয়। এখন পুরুষের ব্যবহার্য কাপড়। পাড় না থাকলে ‘থান ধুতি’, বা থান’। কাপড়ের দীর্ঘ ‘থান’ থেকে এই কাপড় কেটে নেওয়া হত (এবং এখনও হয়) বলে এই নাম এসেছে ‘স্থান’ (মানে, ভূমিখণ্ড, তার থেকে বস্ত্রখন্ড)।
‘কাচা ধুতি’ বা ‘কাচা’ হল দেবপূজার মতো কাজ-কর্মের পরিধেয়। শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘কৃত্য’ থেকে (মানে, করণীয়)। এই মধ্য বাংলায় সুপরিচিত কাচ শব্দটিও যুক্ত। ‘কাচ’ মানে নট-নটীর ভূমিকায় গান। শব্দটি কোনও কোনও অঞ্চলে এখনও নটসজ্জার অর্থে প্রচলিত আছে।
কোমর থেকে হাঁটু অবধি আঁট করে পরা কাপড় বোঝাতে মধ্য বাংলায় ‘ধটি’ বা ‘ধড়া’ বা ‘ধড়ি’ শব্দ পাওয়া যায়। যেমন বীর ধটী (যোদ্ধার মতো কাপড় পরা), পীত ধড়া (গোপাল কৃষ্ণের বসন) ইত্যাদি। শব্দটি বাংলা ধড় শব্দের সঙ্গে যুক্ত। শব্দটি আধুনিক কালেও লোপ পায়নি, রয়ে গেছে ‘ধড়া-চূড়া’য় (কৃষ্মের সাজ থেকে এখন সামরিক পোষাকে এসে দাঁড়িয়েছে।)
রেশমের কাপড়কে বলত ‘পাটশাড়ি’। পাট এসেছে সংস্কৃত পট্ট থেকে। মানে শক্ত সুতোয় বোনা ফেট্টি বা ফালি। রেশমের সুতো কাপাসের সুতোর চেয়ে অনেক বেশি শক্ত।
(ক্রমশ)