• facebook
  • twitter
Friday, 1 August, 2025

বাংলা ভাষাকে কোনঠাসা করার কেন্দ্রীয় চক্রান্তকে রুখে দেওয়ার আহ্বান

শুনতে অনেকটা অপ্রিয় লাগলেও আজ স্পষ্ট করেই বোধহয় বলা প্রয়োজন যে, বাংলাভাষাকে পদলিত করছেন। অন্যভাষার মানুষেরা নন, খোদ বাঙালিরাই।

প্রতীকী চিত্র

বরুণ দাস

ভারতে ভাষা সমস্যা নতুন কোনও বিষয় নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাষার ওপর অনৈতিক আক্রমণ নেমে এসেছে। যাদের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে, তাঁরা রুখে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে দক্ষিণী রাজ্যগুলো। কেন্দ্র তখন সাময়িকভাবে পিছু হটতে বাধ্য হযেছে। ফলে সাময়িকভাবে রক্ষা পেয়েছে আঞ্চলিক ভাষা। কিন্তু যাঁরা পারেননি, তাঁদের ভাষার অবলুপ্তি ঘটেছে। ভাষা নিয়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত টানাপোড়েন স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে। আজও যার রেশ বহমান।

আমাদের পশ্চিমবাংলাও এই সমস্যা থেকে মোটেই মুক্ত নয়। এ রাজ্যে বাঙলাভাষার ওপর আক্রমণও নতুন কোনও ঘটনা নয়। রাজ্যবাসীর একাংশ মনে-প্রাণে চাইলেও এবং রাজ্যে বামফ্রন্ট আমলে আইন পাশ হলেও কোনও এক অজানা কারণে বাংলাভাষা রাজ্যের সরকারি কাজে আজও ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। লালফিতের বজ্রকঠিন ফাঁস থেকে মুক্তি পায়নি মাতৃভাষা ব্যবহারের কাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম। বাংলা ও বাঙালিদের কাছে এটা সত্যিই এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।

কিন্তু সত্যিই কি এটা আপামর বাঙালির কাছে আদৌ দুর্ভাগ্যজনক? কি বলে এরাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতি? একবার খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা যাক। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, যা ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলো সেরেছে, তা কেন পুবের রাজ্যগুলো পারছে না? কোথায় আমাদের ব্যর্থতা? হাতে আইন থাকতেও কেন আমরা সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারছি না? আমাদের দূর্বলতাই বা কোথায়? নাকি আসলে আন্তরিকতারই ঘাটতি ?

বলাবাহুল্য, ওপরের দিকে খুতু ফেললে নিজের গায়েই এসে পড়ে। তাই অনেকেই ওপরে খুতু ফেলতে চান না। কিন্তু প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব না হলে সমস্যার গভীরে পৌঁছন সম্ভব নয়। তাই বহুশ্রুত প্রবাদ বাক্য মেনে গায়ে খুতু মেখেই বাস্তবের সামনে দাঁড়ানো যাক। কি সেই বাস্তব? বাঙালিদের একটা অংশ মুখে মাতৃভাষা নিয়ে মাতামাতি করলেও অধিকাংশ বাঙালি কি মাতৃভাষার বিষয়টা সচেতনভাবেই এড়িয়ে যান এবং আজও এর কোনও ব্যাত্যর ঘটেনি!

এখন প্রশ্ন হলো, কেন তাঁরা সচেতনভাবে মাতৃভাষার বিষয়টা এড়িয়ে যান? তাঁরা সম্ভবতঃ কোনওভাবেই বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী মন। নিজেদেরকে ‘প্রাদেশিক ভাবতে রীতিমত লজ্জ্বাবোধ করেন। নিজের মাতৃভাষা নিয়ে কোনও গর্ব বা গৌরব বোধ করেন না। বরং অন্য ভাষার প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখান! ‘আত্মবিস্মৃত’ কিম্বা আত্মঘাতী বাঙালি আর কাকে বল! বাঙালিরা সত্যিই ওই বিশেষ তকমা পাওয়ার অধিকারী! তাঁদেরকে ওই বিশেষ তকমা থেকে বঞ্চিত করা অন্যায়।

অনেক বাঙালিই অপ্রয়োজনে কথায় কথায় হিলিভাষায় কথা বলেন। হিন্দিভাষী প্রতিবেশী রাজ্যের মানুষের সঙ্গে নিজের মাতৃভাষা বাংলায় নয়, হিন্দিতে কথা বলতেই তাঁরা ভালোবাসেন। যদিও ওই হিন্দিভাষী প্রতিবেশী রাজ্যের মানুষেরা দীর্ঘদিন এরাজ্যে থাকায় বাংলা বুঝতে এবং কথা বলতে বেশ অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু ওই বিশেষ শ্রেণির বাঙালিরা হিন্দি ভাষাতেই অনঢ়! তাঁরা কিছুতেই বাংলাভাষা বলবেন না। যেন ‘জলস্পর্শ করব না আর চিতোর রাণার পণ।’

একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, পাড়ায় বিক্রি বা ফেরি করতে আসা অবাঙালি বাসনওয়ালা, মুড়িওয়ালা, ছাতা কিম্বা জুতো সারাইওয়ালা আইসক্রিমওয়ালা, শহরের টানা-রিক্সাওয়ালা থেকে অটো-টোটোওয়ালা সবার সঙ্গেই এই বাঙালিরা শুদ্ধ কিম্বা অশুদ্ধ হিন্দিভাষাতে কথা বলতেই বেশি পছন্দ করেন। এমন কি অনেক সময়ে ‘ভুল করে’ অবাঙালি মনে করে কোনও কোনও বাঙালির সঙ্গেও তাঁরা রীতিমত হিন্দিতে কথা বলে থাকেন! এ ঘটনাও মোটেই বিরল নয়।

অধিকাংশ শিক্ষিত ও সচেতন বাঙালিই নিজের মাতৃভাষা বাঁচিয়ে রাখতে কার্যক্ষেত্রে কোনও সক্রিয় ভূমিকাই পালন করেন না। জাতীয় কিম্বা আন্তর্জাতিকতার সস্তা আলোয়ান গায় চাপিয়ে আর যা হোক, মাতৃভাষার মান-মর্যাদা বজায় রাখা যে কোনওভাবেই সম্ভব নয় একথা আর কবে বুঝবেন ‘কাক হয়ে পুচ্ছ লাগিয়ে ময়ূর সাজা’ অপরিণত মানসিকতার বাঙালি? কলহপ্রিয় বাঙালি’, “সমালোচনাপ্রিয় বাঙালি’ আর ‘কলহপ্রিয় বাঙালি হবেই কি তাঁরা আজীবন থাকতে চান?

অথচ এরাই আবার হিন্দিভাষার বিরুদ্ধে যখন-তখন বিষোদগার করেন! জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে রুখে দাঁড়ান! দ্বিচারিতা আর কাকে বলে। যারা অন্য ভাষার প্রশ্নে বিগলিত হয়ে ওঠেন, তাঁরাই আবার হিন্দিভাষার বিরোধিতায় আকাশ-পাতাল এক করে ফেলেন! আসলে নিজের মাতৃভাষার ওপরই যাদের সামান্যতম টান বা ভালোবাসা নেই, তাঁরা অন্য ভাষার ওপর টান অনুভব করবেন কিভাবে? এই গূঢ় বাস্তবতাকে (অপ্রিয় সত্য) কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় কি?

“বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’-কবি-কৃত কথাগুলো বলতে কিম্বা শুনতে যতোটা ভালো লাগে, বাস্তবক্ষেত্রে ঠিক ততোটাই অসুবিধে সৃষ্টি করে। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক না সংযোগ কিম্বা মিলনের ক্ষেত্রে ভাষা একটা প্রধান বিষয় নিঃসন্দেহে। সেতুবন্ধনের মাধ্যম ভাষা। ভাষার অন্তরায়ের জন্য আমরা ইচ্ছে থাকলেও অপরের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করতে পারি না। পরন্তু জাতীয় স্তরে সরকারি কাজেও অসুবিধে। আর সেজন্যেই জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষার প্রয়োজন আছে বৈকি।

শুধু আমাদের দেশেই নয়, সোভিয়েত রাশিয়াতেও প্রায় দেড় শতাধিক ভাষা ছিল। জারতন্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে তাঁরা কিন্তু একটা জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষা (রুশভাষা) তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মহামতি ভি. ই. লেনিন জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষার প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন বলেই এ বিষয়ে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নিতে পেরেছিলেন। ‘শতফুল বিকশিত হোক’-এর মহান প্রবক্তাও চিনের জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন। শুধু বুঝতে অপারগ আমরা। অনাবশ্যক বিপ্লবীয়ানা দেখাতে গিয়ে সব বিষয়েই কেবল পিছিয়ে আছি। বিরোধিতার জন্যেই যেন আমাদের বিরোধিতা।

আদালতের ভাষা নিয়েও কম হ্যাপা পোহাতে হয় না আমাদের মতো সাধারণ মানুষের! যে রাজ্যের যে-ভাষাই হোক না কেন, আইনজীবীদের সওয়াল কিম্বা মাননীয় বিচারপতিদের রায়দান কিন্তু আজও ইংরেজি ভাষাতেই দেওয়া হয়ে থাকে। যা আজও দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ নাগালের বাইরে। সম্মানীয় আইনজীবীরা কি বলছেন আর মহামান্য বিচারপতিরাই বা কি রায় দিলেন-তা বোধের অগম্য থেকে যায় সংশ্লিষ্ট বাদি-বিবাদি সহ সাধারণ মানুষের কাছে।

সম্প্রতি জনৈক প্রতাপ রানের সামাজিক মাধ্যমের ওয়ান থেকে একটি বার্তা নানাজনকে পাঠানো হচ্ছে। কি সেই বার্তা? দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় এখন থেকে মোট ৬টি ভাষায় অনূদিত হবে। ওই ভাষাগুলো হল, হিন্দি, গুজরাতি, তেলেগু, মারাঠি, কন্নড় ও অসমিয়া। ওই ভাষার মধ্যে বাঙলা তাষা নেই। অথচ আছে অসম রাজ্যের সাড়ে ৩ কোটি মানুষের ভাষা! বাদ প্রায় ১০ কোটি মানুষের ভাষা বাঙলা! এ কেমন নজির (নাকি বেনজির) ? প্রশ্ন তুলেছেন ‘ভাষাপ্রেমী’ অনেকেই।

তাঁদের প্রশ্ন, হয় সংবিধান স্বীকৃত সবকটি ভাষারই ব্যবহার (যা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার), নয়তো অধিকাংশ মানুষ যে ভাষা ব্যবহার করেন, সেই ভাষায়। কিন্তু সেপথে হাঁটছেন না কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় জনগণের দ্বিতীয় বৃহত্তর মাতৃভাষা বাঙলা। তাহলে জনসংখ্যার আধিক্যের হিসেবে এই তালিকা তৈরি করা হলে হিন্দির পরই বাঙলার স্থান হওয়া উচিত। অথচ সে তালিকার অসমিয়া আছে, বাংলা নেই! কি আশ্চর্য! যদিও জনসংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য-পরিসংখ্যানে ভুল আছে।

প্রশ্ন উঠেছে, উর্দু ভাষাকে বাদ ও গুজরাতি ভাষার ব্যবহার নিয়েও। কেন্দ্রীয় সরকারের মাখায় যেহেতু গুজরাতি প্রধানমন্ত্রী (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও গুজরাতের)- সুতরাং পক্ষপাতিত্ব নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন তুলেছেন ভাষাপ্রেমী প্রভাস রায়েরা। বাঙলার মানুষকে প্রতিবাদে শামিল হতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বাঙলাভাষা কেন ব্রাত্য থাকবে? এ প্রশ্ন আরও অনেক রাজ্যই ভুলতে পারে। হয়তো পরবর্তীকালে তুলবেও। এখানেই জাতীয় ভাষার প্রযোজনীয়ভার প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য।

যাঁরা মাতৃভাষার তথাকথিত প্রেমিক, বাঙলাভাষাকে দূরে ঠেলে দৈনন্দিন ইংরেজি ভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন নিজেদের জীবনে, তাঁরাই আবার ‘বহুত্বের বিউটি’ নিয়ে আসর গরম করতে পছন্দ করেনা! পয়লা বৈশাখ নয়, পয়লা জানুয়ারি নিয়ে মাতামাতি করেন, শুভ জন্মদিন নয়, ইংরেজদের কায়দায় হ্যাপি বার্থ-ডে উদযাপন করেন এবং জন্মদিনে পায়েস নয়, বার্থ-ডে কেক কাটতে পছন্দ করেন, তাঁরাই যখন মাতৃভাষার জন্যে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করেন, অবাক লাগে বৈকি!

কিম্বা যাঁরা কথায় কথায় কিন্তুর পরিবর্তে বাট, সত্যি কথা বলতে কি-র পরিবর্তে ইন-ফ্যাক্ট, আমি মনে করি-র পরিবর্তে আই থিঙ্ক, মধ্যাহ্নভোজনের পরিবর্তে লাঞ্চ কিম্বা রাতের আহারের পরিবর্তে ডিনার বলতে খুব বেশি পছন্দ করেন, তখন তাঁদের মাতৃভাষার প্রতি কপট প্রেম দেখে তাজ্জব বনে যেতে হয়! আরও আছে। যেমন সুপ্রভাতের পরিবর্তে গুডমর্নিং, শুভসন্ধ্যার পরিবর্তে গুডইভিনিং, শুভরাত্রির পরিবর্তে গুডনাইট। কাকা-কাকিমার পরিবর্তে আঙ্কেল-আন্টি বলেন!

আনকে আবার মাকে মাম্মি এবং বাবাকে ড্যাড বলতেও পছন্দ করেন! প্রশ্ন জাগে, আচ্ছা, বাংলা ভাষার ভান্ডারে কি উপযুক্ত শব্দের অভাব দেখা দিয়েছে যে, অন্যভাষা থেকে ধার করে আমাদের চলতে হবে? অর্থাৎ বাট, ইন-ফ্যাক্ট, আই থিঙ্ক, লাঞ্চ কিম্বা ডিলার না বললে আমাদের বাক্যগুলো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে? কিনা মাতৃভাষায় উচ্চারণ করলে শুনতে খারাপ লাগবে? অপর বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের বোঝাতে অসুবিধে হবে? নাকি মাতৃভাষার অভিজাত্য কিছুটা বাড়বে?

বাঙলাভাষার এমন দুর্দশা হয়নি যে, সম্পূর্ণ অকারণে অন্যভাষা থেকে ধার করে তাকে চলতে হবে কিম্বা ঠেকা কাজ চালাতে হবে! বাংলাভাষা কোনওভাবেই ঠেকনা দেওয়া কোনও ভাষা নয়; নয় কোনও পঙ্গুভাষা যাকে অন্যভাষার লাঠি ধরে চলতে হবে। যাঁরা অপ্রয়োজনে বাংলাভাষার স্বপক্ষে বড়ো বড়ো বুলি আওড়ান, তাঁরাই বাঙলাভাষাকে মনেপ্রাণে অপ্রাসঙ্গিক, অচ্ছুৎ ও পঙ্গু বলে মনে করেন! এবং শুধুমাত্র মিথ্যে আভিজাত্য প্রমাণে কথায় কথায় অকারণে অন্যভাষার আশ্রয় নেন।

অথচ এঁরাই যখন বাঙলাভাষাকে ‘যথাযথ মর্যাদা’ দিতে রাষ্ট্রের দৈন্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন অবাক হতে হয় বৈকি। ‘আমি বা আমরা যাহা পালন করিব না, তাহাই কেন অন্যদের পালন করিবার জন্য উপদেশ দিব?’-এমন একটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ওঠাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তেমন প্রাসঙ্গিক ও অপ্রিয় প্রশ্ন তুললে আপনি রাতারাতি কোনও সাম্প্রদায়িক সংগঠন বা দলের সমর্থক বলে বিবেচিত হবেন! কোনও আগমার্কা অসাধু লোক ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচারে ব্রতী হলে যেমন হয় আর কি!

শুনতে অনেকটা অপ্রিয় লাগলেও আজ স্পষ্ট করেই বোধহয় বলা প্রয়োজন যে, বাংলাভাষাকে পদলিত করছেন। অন্যভাষার মানুষেরা নন, খোদ বাঙালিরাই। নিজেদের মাতৃভাষাকে অকারণে তুচ্ছ, অবজ্ঞা, অমর্যাদা ও অসম্মান বাঙালির মতো অন্য কোনও সম্প্রদায়ের মানুষ এযাবৎ করেননি! নিজেদের ‘এলিট’ প্রমাণের জন্য মাতৃভাষা বাঙলাকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেওয়া মতো অনৈতিক কাজ একমাত্র বাঙালিদের দ্বারাই বোধহয় সম্ভব, অন্য কোনও সম্প্রদায়ের দ্বারা সম্ভব নয়।

অথচ এঁরাই কেমন উঁচুগলায় বাংলাভাষার ‘অপমান’ ও ‘অমর্যাদা’-এর জন্য সভা-সমাবেশে বা সামাজিক মাধ্যমে মেতে ওঠেন! লাইক, কমেন্ট আর শেষার-এর জন্য লালায়িত হয়ে পড়েন! মাতৃভাষার প্রতি প্রেম-ভালোবাসা প্রদর্শনের আড়ালে নিজেদের ‘প্রগতিশীল’ কিম্বা কেষ্টবিষ্ট প্রমাণের জন্য উঠ-পড়ে লাগেন! ভন্ডামি ও কপটতারও একটা সীমা থাকা দরকার। এঁরা সেটাও সম্ভবতঃ জানেন না! কিম্বা জানলেও তা মানার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করেন না। আত্মপ্রচারে মেতে ওঠেন।