• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

৮১ বছর বয়সি ভোটার ফর্ম না পেয়ে আতঙ্কে, বার্ধক্য ভাতা বন্ধের শঙ্কা

ব্লক অফিস থেকে শুরু করে বিএলও ও পঞ্চায়েত দপ্তর— সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাইছেন তিনি। বয়সের ভারে শরীর আর আগের মতো সঙ্গ দেয় না।

প্রতীকী চিত্র

২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। এমনকি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের দিন বুথে গিয়েও নিজের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। অথচ এ বার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় তাঁর হাতে পৌঁছল না ভোটার তালিকা সংশোধনের ফর্ম। ফলে আতঙ্ক গ্রাস করেছে বছর ৮১-র রমেন্দ্র দাসকে। তাঁর ভয়, যদি নতুন ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ে যায়, তবে বার্ধক্য ভাতাটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে সংসার চলবে কী ভাবে!

পতিরাম গ্রাম পঞ্চায়েতের নীচাবন্দর এলাকার বাসিন্দা এই প্রবীণের সম্বল বলতে ওই ভাতা আর রেশনের ফ্রি চাল। বহু বছর আগে বিড়ি বাঁধার কাজ করে সংসার চালাতেন রমেন্দ্র ও তাঁর স্ত্রী পূর্ণিমা দাস। কিন্তু বয়সের ভারে সেই কাজ আর পেরে ওঠেন না তাঁরা। আজ ছেলের মৃত্যুর ২৬ বছর পর, একমাত্র ভরসা সরকারের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিই।

Advertisement

কিন্তু দেখা গেল, স্ত্রী পূর্ণিমা এসআইআর ফর্ম পেলেন, আর রমেন্দ্র পেলেন না। যাঁর ভোটদানের ইতিহাস এত পুরনো, তাঁর নাম কেমন করে উধাও হয়ে গেল তালিকা থেকে? হতাশ কণ্ঠে রমেন্দ্রর প্রশ্ন, ‘আমার নাম নাকি নতুন তালিকায় নেই বলেই ফর্ম পাইনি। এখন যদি ভাতা-টাতাও বন্ধ হয়ে যায়, আমরা খেয়ে বাঁচব কী করে! আমাদের মতো বুড়ো মানুষেরা কি আর কোথাও কাজ করতে পারব?’

Advertisement

ব্লক অফিস থেকে শুরু করে বিএলও ও পঞ্চায়েত দপ্তর— সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাইছেন তিনি। বয়সের ভারে শরীর আর আগের মতো সঙ্গ দেয় না। কিন্তু বেঁচে থাকার সংগ্রাম তাঁকে পথ ছাড়তে দেয়নি।

এ বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থ ঘোষের বক্তব্য, শুধু নীচাবন্দর নয়, আরও বহু এলাকায় এমন ভুলভ্রান্তির ঘটনা সামনে এসেছে। আমরাও উদ্বিগ্ন। ‘সার’-এর নামে যে ভাবে অযথা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা একদমই কাম্য নয়। একজন প্রবীণের অধিকার খর্ব হলে তার দায়ভার কে নেবে?

স্থানীয় বিএলও তনুশ্রী মণ্ডল জানিয়েছেন, রমেন্দ্রর নামে কোনও সংশোধন ফর্ম এখনও আসেনি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁকে ব্লক দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

বিডিও সোহম চৌধুরী জানান, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। কীভাবে তাঁর নাম বাদ পড়ল, তার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এক প্রবীণ নাগরিকের ভোটাধিকার ও বেঁচে থাকার অধিকার জড়িয়ে থাকার এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, বিশেষ সংশোধন ব্যবস্থায় সামান্য ভুল কি মানুষের জীবন বাঁচিয়ে রাখার মতো সরকারি সুরক্ষা ব্যবস্থাকেও বিপন্ন করে দেবে?

Advertisement