• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

সাঁওতালি সংস্কৃতিতে মজছে যাদবপুর এ্যাথলেটিক ক্লাবের এবারের পুজো

চাদর বদরের ঐতিহ্যবাহী সাঁওতালিদের গ্রামে গিয়ে, চাক্ষুষে সবটা দেখে এবং অনুভব করে তবেই শিল্পী নিজের ভাবনায় তা ফুটিয়ে তুলছেন। তাঁদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এই চাদর বদর একটি কাঠের বাক্সের ভিতরে ঝোলানো কাঠের পুতুলের সাহায্যে করা হয়। পর্দা দিয়ে তিন বা চার দিক খোলা থাকে। অভিনেতা প্রাচীন সাঁওতাল সংস্কৃতির শব্দ এবং শ্লোক দ্বারা পুতুল ব্যবহার করে উপজাতীয় বাদ্যযন্ত্রের সাথে গল্প বর্ণনা করেন।

দুর্গাপুজো শুধুমাত্র বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের রোজগারের পথও বটে। তাই শারোদৎসবের মাসখানেক আগে থেকেই প্রস্তুতি তুঙ্গে ওঠে আপামর বাঙালি জাতির। উৎসবকে ঘিরে যাদের রুটি-রুজি আবর্তীত হয়, তাঁদের অবদানের কথা মনে করিয়ে, দর্শনার্থীদের সামনে তা তুলে ধরবে যাদবপুর এ্যাথলেটিক ক্লাব। আমাদেরই দেশের কোনও এক কোণে, কোনও এক জনপদের মাঝে নীরবে লালিত হওয়া শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে আধুনিকতার আলোকমালায় আলোকিত করার উদ্দেশ্য নিয়েই ৫১ তম বর্ষে কারিগর শ্রী বাপাই সেন-এর হাত ধরে যাদবপুর এ্যাথলেটিক ক্লাবে এবারের পুজোর ভাবনা ‘নতুনের মাঝে পুরাতন শিল্প থাকুক চিরন্তন।’

‘চাদর বাদর’ বা ‘চাদর বাঁধানি’ আদিবাসি সাঁওতাল পুতুলের খুবই বিরল একটি রূপ এবং সাঁওতাল সংস্কৃতির একটি উজ্বল প্রতীক। পুতুল খেলা যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন দেশে লোকসংস্কৃতির সাথে যুক্ত হয়ে আছে এবং লোক শিক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এ ইতিহাস প্রায় কয়েক হাজার বছরের । এই মৃতপ্রায় শিল্পধারাটি একদা পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার, অসম ও ওড়িশার বসবাসকারী সাঁওতাল জনজাতির মধ্যে প্রচলিত ছিল। বর্তমানে চাদর বদরের এই পুতুল ও তার শিল্পীদের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় এবং ঝাড়খণ্ডের দুমকা অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখতে পাওয়া যায়। এই শিল্পধারাটি ক্রমশঃ অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার মূল কারণ হল সাঁওতাল জনজাতির স্বল্পসংখ্যক সদস্য পুতুল তৈরির মৌলিক শিক্ষা গ্রহণ করছে এবং নিজেদের জীবনধারার সাথে তা যুক্ত করেছে। ফলে প্রাচীন এক বহমান ধারা ক্রমশঃ স্তব্ধ হয়ে যেতে বসেছে।

Advertisement

চাদর বদরের ঐতিহ্যবাহী সাঁওতালিদের গ্রামে গিয়ে, চাক্ষুষে সবটা দেখে এবং অনুভব করে তবেই শিল্পী নিজের ভাবনায় তা ফুটিয়ে তুলছেন। তাঁদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এই চাদর বদর একটি কাঠের বাক্সের ভিতরে ঝোলানো কাঠের পুতুলের সাহায্যে করা হয়। পর্দা দিয়ে তিন বা চার দিক খোলা থাকে। অভিনেতা প্রাচীন সাঁওতাল সংস্কৃতির শব্দ এবং শ্লোক দ্বারা পুতুল ব্যবহার করে উপজাতীয় বাদ্যযন্ত্রের সাথে গল্প বর্ণনা করেন। পুতুলগুলিতে সংযুক্ত থাকে স্ট্রিং। সেই  স্ট্রিং ব্যবহার করে পুতুলগুলি অভিনয়কারী দ্বারা চালিত হয়। পুজোর কয়েকটি দিন মণ্ডপে এই চাদর বদর প্রদর্শীত হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোগক্তারা। যাদবপুরের এই পুজোর চেয়ারম্যান বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার। সম্পাদক দীপাঞ্জন দত্ত জানান, ৩ অক্টোবর পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধন করবেন সাংসদ সায়নী ঘোষ এবং বিধায়ক দেবব্রত মহাশয়। মণ্ডপ সজ্জার কাজও চলছে দ্রুত গতিতে।  সময়টা খারাপ চললেও উমা এসে সবটা ঠিক করে দেবেন বলেই আশাবাদী যাদবপুর এ্যাথলেটিক ক্লাবের সদ্যসরা।

Advertisement

Advertisement