• facebook
  • twitter
Sunday, 21 December, 2025

স্বরসম্রাট-রত্ন আমজাদ আলি খান

দেখতে দেখতে ১২ বছরে পা রাখল স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল। দেশের অন্যতম সেরা রাগ-সঙ্গীতের উৎসব বলে সমাদৃত এই ফেস্টিভ্যাল। দেশের প্রাজ্ঞ পন্ডিত-উস্তাদরা এই রাগ-সঙ্গীতের আসরে অংশগ্রহণ করেন।

নিজস্ব চিত্র

স্বরসম্রাট-রত্ন পুরস্কার পেলেন আমজাদ আলি খান, প্রায় ৪০ বছর পর উস্তাদ আমজাদ আলি খান এবং পন্ডিত স্বপ্নন চৌধুরীর বাজনায় মজল কলকাতা।

দেখতে দেখতে ১২ বছরে পা রাখল স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল। দেশের অন্যতম সেরা রাগ-সঙ্গীতের উৎসব বলে সমাদৃত এই ফেস্টিভ্যাল। দেশের প্রাজ্ঞ পন্ডিত-উস্তাদরা এই রাগ-সঙ্গীতের আসরে অংশগ্রহণ করেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হল না। ১৪ এবং ১৫ ডিসেম্বর এই দুইদিন নজরুল মঞ্চে চলল স্বরসম্রাট উৎসব। এবারের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রবাদপ্রতিম সরোদশিল্পী উস্তাদ আমজাদ আলি খান। এবছর স্বর সম্রাট রত্ন পুরস্কার পেলেন তিনি। তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন আরেক বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী অমিয় রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আমজাদ আলি খান বলেন, “এই সম্মান পেয়ে আমার সত্যি ভাল লাগছে। তেজেন্দ্র প্রতি বছর ওঁর গুরুর নামে এই যে অনুষ্ঠান করে, এর জন্য ওঁর সাধুবাদ প্রাপ্য। তবে আমি চাইব তেজেন্দ্রর প্রথম গুরু উস্তাদ বাহাদুর খাঁ’র নামেও উনি এমন কোনও অনুষ্ঠান শুরু করুন।” ৪০ বছর পর আমজাদ আলি খান এবং বিশিষ্ট তবলাশিল্পী পন্ডিত স্বপন চৌধুরী একসঙ্গে মঞ্চে বাজালেন। কলকাতার কাছে এ এক বিরল অভিজ্ঞতা। বাজনা শুরু করার আগে আমজাদজি বলেন, “সারা দেশে যে ভাবে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে, তা সত্যি দুঃখের। আমাদের দেশে দুর্গারা আজ নির্যাতিতা। তাই রাগ দুর্গা দিয়ে আমি বাজনা শুরু করব। দুর্গার কান্নাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করব।” এরপর দুই দিকপালের সুরের মূর্ছনায় ভাসল কলকাতা। রাগ দুর্গার পর রাগ দরবারি এবং শেষে শ্রোতাদের অনুরোধে রাগ সাহানা শোনান তিনি।

Advertisement

প্রতিবছর স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করেন এই সময়ের অন্যতম আরেক সরোদশিল্পী পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর পরিবার। দায়িত্বে শ্রীরঞ্জনী ফাউন্ডেশন। তেজেন্দ্র নারায়ণের গুরু স্বরসম্রাট আলি আকবর খানের নামেই এই উৎসবের নাম। পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণের কথায়, “আলি আকবর খান কী বিরাট মাপের শিল্পী তা পরিমাপ করার ক্ষমতা আমার নেই! ওঁর নামে এই উৎসব, আমি চাইব রাগ সঙ্গীতের অনুষ্ঠান আরও বেশি বেশি করে প্রচার পাক। স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল শুধুমাত্র দিকপাল শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে না, নবীন প্রতিভাদের সব সময় সুযোগ দিয়ে এসেছে এই উৎসব। আমার ধ্রুব বিশ্বাস এই নবীন শিল্পীরাই একদিন দিকপাল হয়ে উঠবে। এবারেও অনেক নবীন শিল্পী তাঁদের প্রতিভা মেলে ধরার সুযোগ পাবেন”।

এবারে দুই দিনের অনুষ্ঠানে শিল্পীদের চাঁদের হাট।ছিলেন পন্ডিত সাজন মিশ্র-স্বর্নেশ মিশ্র (কন্ঠ সঙ্গীত), ওঁরা শোনালেন রাগ বাগেশ্রী। পন্ডিত কুমার বোস, পন্ডিত শ্রীনিবাস জোশী এবং ভিরাজ জোশীর মেলবন্ধন মনে রাখার মত। পণ্ডিত ভীমসেন জোশীর পুত্র এবং নাতি কলকাতাকে মুগ্ধ করলেন। ওঁরা জানান, ভিমসেন জোশী কলকাতাকে ‘সেকেন্ড হোম’ মনে করতেন। তাই কলকাতা তাঁদের কাছেও খুব স্পেশ্যাল। পিতা-পুত্র রাগ মুলতানি শোনান। সরোদশিল্পী পণ্ডিত দেবাশিস ভট্টাচার্য রাগ কাফি, পিলু বাজান। সেতার শিল্পী শুভেন্দ্র রাও শোনান রাগ মধুমন্তী এবং শেষে রাগ খামাজ। এবারে স্বর সম্রাট উৎসবে অন্যতম আকর্ষণ ছিল নবীন শিল্পীদের অনুষ্ঠান। নবীন প্রতিভাবান সরোদ শিল্পী ইন্দ্রায়ুধ মজুমদারের তত্ত্বাবধানে পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণের শিষ্যরা সেতার এবং সরোদের যুগলবন্দি শোনান। অসাধারণ ছিল সেই বাজনা। ছিলেন আরো অনেক বিশিষ্ট শিল্পীরা। এই শীতের আমেজে রাগ সঙ্গীতের ওমে দুইদিন মজে রইল গোটা কলকাতা।

Advertisement