অতনু রায়: ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আজ তৃতীয় দিন। কিন্তু ইতিমধ্যেই একটা ছন্দপতনের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। ধনধান্য অডিটোরিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ও অন্যান্য ফেডারেশন পদাধিকারীদের অনুপস্থিতি চোখে পড়লেও সেটা নিয়ে আরও এগিয়ে ভাবেননি কেউ। কিন্তু নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বরে উৎসবের দ্বিতীয় দিনেও স্বরূপের অনুপস্থিতি চোখে লাগে।
একতারা মঞ্চে ‘সিনে আড্ডা’ নামে সাতদিন যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় তার মাস্টারমাইন্ড হওয়া সত্ত্বেও সেখানে শুক্র-সন্ধেয় স্বরূপের অনুপস্থিতি আর যাই হোক, বোঝাচ্ছে যে, একতারাতে চেনা সুর বাজছে না। উৎসব চত্বরে সিনে ফেডারেশনের স্টল এবারেও আছে, কিন্তু সেটা জনশূন্য। বারবার ফোন করার পরেও রাত ১০টা পর্যন্ত ফোন ধরেন না ফেডারেশন সভাপতি। যে মানুষটা ফোন ধরতে না পারলে নিজেই ফোন করে নেন, তাঁর কাছ থেকে সেই পাল্টা ফোন না আসায় খটকা বাড়ল বই কমল না।
Advertisement
ফেডারেশনের অন্যতম মুখ জয় চন্দ্রকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক সুজিত হাজরাকে ফোন করায় তিনি জানালেন, “টেকনিশিয়ানদের মধ্যে একটা ক্ষোভ ও প্রচণ্ড দুঃখ আছে, সেই জায়গা থেকেই আমাদের কমিটি সর্বসম্মতি ক্রমে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে”। কী কারণে এই সিদ্ধান্ত সেই বিষয়ে অবশ্য এই সময়ে কোনও উত্তর দিতে চাননি সুজিত।
Advertisement
তাঁর কথায়, ‘যা বলার, যথাসময়ে আমরা বলব’। তবে কি উৎসবের মূলমঞ্চ থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সহ বেশ কিছু পরিচালক, যাঁদের সঙ্গে ফেডারেশনের আইনগত জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তাঁদের উপস্থিতিই ভেতরে জমে থাকা এই ক্ষোভ ও দুঃখের অন্যতম কারণ? এই প্রশ্নেও নীরর থেকেছেন সুজিত।অবশেষে একটু বেশি রাতে ফোনে পাওয়া যায় ফেডারেশন সভাপতিকে।
তিনি বরাবরের মতোই কুশল বিনিময় করেছেন, তবে আসল ঘটনা এড়িয়ে গেছেন। কোনো সদুত্তর মেলেনি। তবে তাঁর অনুপস্থিতি কিন্তু একতারা মঞ্চে ‘সিনে আড্ডা’র দর্শকদের চোখ এড়ায়নি সেটা কানাঘুষোয় বোঝা গেল। একতারা মঞ্চের অনুষ্ঠানের ভাবনার কারিগরের অনুপস্থিতি তার রূপায়নে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা আজ সন্ধেয় আরো স্পষ্ট হবে। তবে, স্বরূপ বিশ্বাসের অনুপস্থিতি উৎসবের কোনও একটা কোণে বোধনের আগেই বিসর্জনের বাজনা বাজিয়ে রাখল কিনা, প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক বলছেন, “স্বরূপ বাংলা ছবি আর ইন্ডাস্ট্রিকে সত্যিই খুব ভালবাসেন। সেই কারণেই হয়ত তৈরি হওয়া ক্ষোভ ও দুঃখ নিয়ে ফেস্টিভ্যাল চলাকালীন অশান্তি তৈরি না করে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। রাজ্যের একটা সম্মান জড়িয়ে উৎসবের সঙ্গে। সেটার কোনো ক্ষতি হোক বা আগত অতিথিদের সামনে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি হোক, চাননি তিনি। এজন্য ওঁর সাধুবাদ প্রাপ্য”।
কিন্তু, সাংবাদিকতার বোধ বলছে, এখানে খবর আছে। ফেডারেশনের স্বরূপ দেখতে আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হওয়া পর্যন্ত। কোনোভাবেই উৎসব চলাকালীন সমস্যাটা কথা বলে মিটিয়ে নেওয়া যায় না? এই প্রশ্নের উত্তরে কিছুক্ষণের নীরবতার পরে ফেডারেশন সভাপতি জবাব দিয়েছেন, “দেখেছেন, ঠান্ডাটা কিন্তু আবার পড়তে শুরু করেছে”।
সেটা ঠিক। শুক্র সন্ধে গড়িয়ে রাত হতেই আস্তে আস্তে ঠান্ডা হাওয়া দিতে শুরু করেছে, যা আজ শনিবার সকালে আরো বেশি। তবে ফেডারেশন এবং অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে সম্পর্কের শৈত্যের কবে অবসান হয় সেটা দেখার জন্য উৎসব শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে, পুরো উৎসবে স্বরূপ বিশ্বাস না থাকলে নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বরে একটা প্রশ্ন অলক্ষ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকবে: একতারাতে সেই চেনা সুর বাজবে আবার কবে?…ফেডারেশন ছাড়াই তবে ফেস্টিভ্যাল হবে!
Advertisement



