• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

১৩তেই তৈরি ২৬-এর রূপরেখা, ‘৬-৪-২’ হতে পারে টলিউড মাস্টারপ্ল্যান

'আজকে মানুষ সিনেমামুখী হচ্ছেন না। কারণ, ভাল চিত্রনাট্য বা চরিত্রায়ণের ছবি কম হচ্ছে'

অতনু রায়: ‘আজকে মানুষ সিনেমামুখী হচ্ছেন না। কারণ, ভাল চিত্রনাট্য বা চরিত্রায়ণের ছবি কম হচ্ছে’; বক্তা ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। শনিবার ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইম্পা) হাউসে স্ক্রিনিং কমিটির বৈঠকে এই কথা বলেন তিনি। একাধিক শীর্ষস্থানীয় প্রযোজক এবং ইম্পা সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত’র উপস্থিতিতেই হয় এই বৈঠক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক প্রযোজক জানালেন, ‘স্বরূপদা বলেন, আমাদের একটা স্ট্যান্ড পয়েন্ট রাখতেই হবে। এত কিছু করছি কারণ, আমরা চাইছি যে বাংলা ছবিতে লগ্নিটা বাড়ুক। লগ্নি যত বাড়বে, ছবির সংখ্যা তত বাড়বে, এমপ্লয়মেন্ট তত বাড়বে। ফলে মানুষ আরো সিনেমামুখী হবে। আজকে মানুষ সিনেমামুখী হচ্ছে না কেন? কারণ, ভাল বিনোদনমূলক চিত্রনাট্য বা চরিত্রায়ণ বেশি হচ্ছে না। কিন্তু যখনই সেটা হচ্ছে, কোনো তারকা না থাকলেও মানুষ সিনেমাহল ভরিয়ে দিচ্ছেন। !’

Advertisement

স্বরূপের এই বক্তব্য ঘিরে নাকি ইতিমধ্যেই দ্বিধাবিভক্ত প্রযোজক মহল। এক অংশের মতে বেশির ভাগ ভাল ছবি হচ্ছে আর একদল, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁরা স্বরূপের কথায় সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করছেন। ফেডারেশন সভাপতি নাকি পরিচালক ও প্রযোজকদের বলেন, শুধু কলকাতা বা তার আশেপাশের জন্য ভাবলে হবে না মফস্বলের জন্য ছবি ভাবতে হবে। মফস্বলের হলগুলো বাঁচলেই সিনেমার প্রসার ও প্রচার হবে। শহরকেন্দ্রিক ছবি দিয়ে মফস্বলের হারানো বাজার ধরা যাবে না, বক্তব্য স্বরূপের। বৈঠকে উপস্থিত মফস্বলের এক্সিবিটররা সহমত প্রকাশ করেন ফেডারেশন সভাপতির কথায়। স্বরূপ নাকি দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানিয়ে দেন, ইন্ডাস্ট্রিতে লগ্নি আনতে হবে এবং লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। তবেই আরও লগ্নি আসবে, ভাল ছবি হবে।

Advertisement

বৈঠকে ২০২৬ সালের বাংলা ছবির অফিসিয়াল ক্যালেন্ডার প্রকাশ নিয়ে আলোচনা হয়। ইতিমধ্যেই একই দিনে বা স্লটে একাধিক বড় বাজেটের ছবি রিলিজ হওয়া ও শো ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা আটকাতে ইম্পা এবং ফেডারেশন একযোগে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রযোজনা সংস্থার বছরের ছবির সংখ্যার নিরিখে প্রাইম রিলিজ উইন্ডো দেওয়া হবে। বছরে মোট ১১টা প্রাইম রিলিজ উইন্ডো করা হয়েছে। সেগুলো হল ২৩ জানুয়ারি, সরস্বতী পুজো, ভ্যালেন্টাইনস্ ডে, পয়লা বৈশাখ, দু’ভাগে গরমের ছুটি, ইদ, স্বাধীনতা দিবস, দুর্গাপুজো, কালীপুজো আর বড়দিন।

ইম্পা সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত বলেন, প্রাইম রিলিজ উইন্ডো পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ২ কোটি টাকা বাজেটের ছবি বানাতে হবে, তবে সেটা যৌথ প্রযোজনার ছবি হলে হবে না। কোনো প্রাইম রিলিজ উইন্ডোতেই সর্বাধিক ৩টের বেশি ছবি মুক্তি দেওয়া যাবে না। এই ছবিগুলোকে ব্যবসার জন্য অন্তত দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। বৈঠকের মত, যে প্রযোজনা সংস্থা ৬টা ছবি করবে, তাঁর কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা লগ্নি হবে। সেটা ১৫ বা ২০ কোটিতেও পৌঁছতে পারে। সে যদি ব্যবসা করার সুযোগটাই না পায়, তাহলে তো সে দেউলিয়া হয়ে যাবে! এই বিষয়ে ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি অধরা থেকেছেন।

তবে বৈঠক সূত্রে খবর, ফেডারেশন সভাপতি নাকি ডিস্ট্রিবিউটারদের এও অনুরোধ করেছেন যে তাঁরা যেন হিন্দি ছবিকে নন-প্রাইমটাইম শো দেন। বৈঠকে উপস্থিত দুই ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা এবং পঙ্কজ লাডিয়া জানান, হিন্দি ছবি নন-প্রাইমটাইম শো হলে দিতে চায় না। স্বরূপ নাকি তাঁদের বলেন, হিন্দি ছবি কি বাংলায় ব্যবসা করতে চায় না? যদি না চায়, ঠিক আছে, বাংলায় তাহলে সেই হিন্দি ছবি ব্যবসা করবে না। খবর, তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ ভারতে তো হিন্দি সিনেমা নিয়ে ঢুকতে পারে না! হিন্দি সিনেমাটা দেখে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার, ত্রিপুরা আর ওইদিকে গুজরাট, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র। তাও অনেক জায়গাতেই হিন্দি সিনেমার ‘পুল’ কম। তাহলে বাংলায় নন-প্রাইমটাইমে ছবি দিতে কীসের অসুবিধা? আর যখন বাংলা ছবি থাকছে না, সেই সময় প্রাইমটাইম শো দেওয়া হোক। এই বিষয়ে বেশিরভাগ প্রযোজক ও ডিস্ট্রিবিউটরই সহমত পোষণ করেছেন। দীর্ঘ বৈঠকে ফেডারেশন সভাপতি প্রযোজকদের সারা বছরের প্ল্যানিংও করতে বলেন।

বিশ্বস্ত সূত্রে শোনা যাচ্ছে, প্রযোজক-অভিনেতা দেব নাকি ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসকে বলেন যে তিনি শুধু প্যাশন থেকে ছবি প্রযোজনা করেন। তাতে স্বরূপ নাকি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, প্যাশন দিয়ে একটা ছবি হতে পারে, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি কী করে চলবে? একশোটা ছবি তো আর প্যাশন দিয়ে হবে না, সেটা হবে ব্যবসা হলেই। টাকা না থাকলে প্যাশন কী দিয়ে হবে? খবর, তাতে কিছুটা মতানৈক্যের পরিস্থিতি হলেও নাকি নিজেকে সামলে নেন দেব। স্বরূপের দাবি, লগ্নি দরকার। লগ্নি থাকলে তখন প্যাশন থাকবে।…

Advertisement