প্রশ্ন: শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী। একদিকে মিঠুন চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্ত, অঞ্জনা বসু। পরিচালক জানিয়েছেন, এটা বিচ্ছেদের গল্প। তুমি কী বলবে, এই ছবি নিয়ে?
উত্তর: আমি মনে করি এই ছবি চিরকালীন, টিপিক্যাল, ওল্ড ফ্যাশন, রোম্যান্টিক কমেডি ছবি। যেমন বয়স্কদের নিয়ে তৈরি রোম্যান্টিক ট্র্যাজেডি ছবি ‘এই রাত তোমার আমার’। এটা ঠিক তার বিপরীত। শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী বয়স্কদের নিয়ে নিপাট হুল্লাট রোম্যান্টিক ছবি। এই বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে। ছবির কনসেপ্ট ভালো লেগেছে। মূল বিষয় হল, মেইন স্ট্রিম ছবিতে আমি এর আগে কাজ করিনি। গল্প শোনার পর মনে হয়েছে, করাই যায়। পৃথিবীর অনেক অভিনেতা, যাদের থেকে আমি প্রেরণা পেয়েছি, তারা সকলেই দুই জায়গায় কাজ করেছেন। তাহলে আমি কেন পারব না৷ আর বুড়ো বয়েসে সুযোগ পেয়েছি যখন করি।
প্রশ্ন: মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে তোমার প্রথম কাজ। চরিত্র নিয়ে কী বলবে?
উত্তর: আমার মনে হয় শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী দেখে মানুষ খুব মজা পাবেন। বিশেষত আমার ক্যারেকটারটা দেখে মানুষের ভালো লাগতে পারে। আমি যে ধরনের কাজ করে থাকি তার ঠিক উল্টো কাজ করেছি। অন্যদিকে মিঠুনের থেকে আমরা মারামারি, নাচ, এসব চরিত্র দেখে অভ্যস্ত। এই ছবিতে ওর ক্যারেকটার আবার গম্ভীর। মানে ভাইস ভার্সা। আমাদের দু’জনকে নিয়ে পরিচালকের এই ব্যাপারটা, এই ভাবনাটা আমার ইউনিক লেগেছে।
প্রশ্ন: তোমার পরিচালিত এবং অভিনীত ছবি ‘চালচিত্র’। এত মানুষ দেখেছেন, ছবিটা এত ভালো হয়েছে, এ নিয়ে কী বলবে?
উত্তর: আমি ভাবিইনি ছবিটা এত মানুষ দেখবে। এত মানুষ পছন্দ করবে। এত পুরস্কার পাবে। নিজেদের টাকা দিয়ে সিনেমাটা করেছিলাম। যদিও হইচই ছবিটার জন্য আমাদের টাকা দিয়েছে। কিন্তু ছবিটা যে মানুষ মন থেকে পছন্দ করবে এটা আমার আশার বাইরে।
প্রশ্ন: আসলে তুমি তোমার প্রিয় মানুষকে নিয়ে কাজ করেছ। তোমার আবেগ ভালোবাসা দিয়ে কাজ করেছ। চালচিত্র ছবির এটা বড় ইউএসপি।
উত্তর: এটা সত্যি কথা। মৃণালদার জন্য এটা করতে পেরে আমি খুব খুশি।
প্রশ্ন: তোমার অভিনীত ছবি ‘এই রাত তোমার আমার’ মানুষ এত পছন্দ করেছেন। তারপর আবার শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতি। একটা নিপাট গল্প বলবে।
উত্তর: আসলে কী বল তো, মানুষ চাইছে অন্য ধরনের সিনেমা দেখতে। একটু অন্য স্বাদের বাংলা ছবি থেকে নিপাট আনন্দ কোথাও উবে গেছে। আমি জানি না, হয়তো আমার বয়স হচ্ছে। আমার আর ডার্ক সিনেমা ভালো লাগে না। সেই খুন, রাজনীতি, গুরুগম্ভীর ছবি দেখতে দেখতে ক্লান্ত। আগে কেমন বসন্ত বিলাপ, মৌচাকের মত অনাবিল আনন্দের সিনেমা হত। সেই আনন্দ পাওয়ার সিনেমা এখন বাংলায় কম হয় বলে আমার মনে হয়। মানুষ এই শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতি ছবিটা দেখে নিপাট আনন্দ পাবে। হল থেকে বেরোবে মুখে হাসি নিয়ে।
প্রশ্ন: পরিচালক পথিকৃৎ-এর সঙ্গে কাজ করে কেমন লেগেছে?
উত্তর: আমি মনে করি, একটা ছবিতে পরিচালক শেষ কথা। সে যা বলবে, সে যেভাবে ছবিটা রেডি করতে চাইবে সেটাই সব। সে কারণে আমি পথিকৃৎ-এর সব কথা শুনে কাজ করেছি। যেভাবে বলেছে, এখানে এটা লাগবে ওখানে ওটা, আমি সব শুনে আমার ১০০ শতাংশ দিয়ে কাজটা করেছি।
প্রশ্ন: এই ছবির প্লট নিয়ে কিছু বলবে? মানে কিছু কী রিভিল করবে?
উত্তর: দেখো, প্রেমের ট্র্যাজেডি হয়, প্রেমের কমেডি হয়, যেখানে একজনকে কেটে পড়তে হয়। অন্য দু’জন মিলে যায়। শেষটা বলছি না, কিন্তু ভীষণ ইন্টারেস্টিং ছবি। সিম্পল ছবি। এ ছবিতে আগেও যেমন বললাম, কোনও ডবল লেয়ার, রহস্য কিছুই নেই। কিন্তু আবার সব আছে। নিপাট সরল সিনেমা। হ্যাঁ, অবশ্যই ইমোশনাল সিন আছে। নইলে তো মানুষ… (হাসি)। আমি এই ছবিটা দেখে, হেসে, মজা নিয়ে লাস্টে একটু চোখ ছলছল করে বাড়ি চলে যাব। বেশি গালে হাত দিয়ে ভাবার মত বিষয় নেই। এই জন্যই আমি এই ছবি করতে এসেছি, যেখানে ছবি দেখে মানুষ খুব আনন্দ পাবে।
প্রশ্ন: এই রাত তোমার আমার ছবিতে পরম আর এই ছবিতে পথিকৃৎ দুজন কিন্তু তোমাকে দুটো রূপে ভেবেছে।
উত্তর: ঠিক কথা। একদম ঠিক কথা। দেখো, আমি খুব চুজি। আমি ৪৫ বছরের কেরিয়ারে নিজের ছবি নিয়ে ২৫টা ছবি করেছি। আমি গুনেছি সিরিয়াসলি। নিজের ছবি মিলিয়ে ২৫টা। খুব কম কাজ। এর মধ্যে কিছু ছবি আমার নিজের ভালো লাগেনি। অভিনয়ের দিক দিয়ে বলছি। তাতে আমার নিজের ছবি আছে, অন্য পরিচালকেরও ছবি আছে। তবে ‘এই রাত তোমার আমার’কেও আমার নিজের ছবি মনে হয়েছে। আর এই ‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতিও’ আমার নিজের ছবি। এই ছবি হিট করুক ফ্লপ করুক, এই ছবি আমার ছবি। আমি দর্শকের কাছে অনুরোধ করব এই ছবি দেখতে আসার জন্য। ‘এই রাত তোমার আমার’ দেখে যে দর্শক কেঁদেছিলেন। এই ছবি দেখে সেই দর্শক হাসবেন। এই ছবি সেই দর্শকের জন্যই। আর এটাই তো সব। অভিনয়ের নিখাদ অতল। চরিত্র বদল। মানুষের মনে গেঁথে যাওয়া।
আমি মানুষকে বলব বিশ্বাস করে ছবিটা দেখতে আসুন। পথিকৃৎ এটা ডিজার্ভ করে। আর এই ছবিতে আমি খেটেখুটে একটা গান লিখেছি। আমি জানি গানটা ওয়ার্ক করবে। মানুষ ভালোবাসবে। অলরেডি কনসার্টে আমি গানটা গেয়েছি। প্রচুর হাততালি পেয়েছি।
প্রশ্ন: একাধারে ছবি করছো, একাধারে মঞ্চ কাঁপাচ্ছো, এ বিষয়ে যদি কিছু শেয়ার করো।
উত্তর: আসলে আমি থিয়েটারের লোক। একটা বয়সের পরে থিয়েটারটা ছেড়ে দেওয়া উচিত। সিনেমাটা করা য়ায়। তবে ‘লিয়ার’ নাটকটা আমি খুবই প্যাশন থেকে করেছি। ভাবিনি প্রতিটা শো হাউস ফুল হবে। দর্শক এইভাবে আমাদের ভালোবাসা দেবে ভাবিনি। লিয়ারে প্রত্যেকে দারুণ অভিনয় করছে। দর্শকদের ভালোবাসায় আরো কয়েকটা শো করতে হবে।