• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ছবি মুক্তির আগে আজও আমার ভীষণ টেনশন হয় প্রসেনজিৎ

দেবী চৌধুরাণী। প্রসেনজিৎ ভবানী পাঠক। এ পুজোয় ছবি রিলিজ নিয়ে কতটা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত প্রসেনজিৎ! মনখোলা আড্ডায় অভিনেতা, সঙ্গে দেবযানী লাহা ঘোষ।

নিজস্ব চিত্র

প্রশ্ন: পুজো প্রায় দোরগোড়ায়। আর বাঙালির পুজো মানেই উৎসবের আমেজ, আর প্রাণ ঢালা আনন্দ। পুজোর আগাম শুভেচ্ছা আর এবারের পুজোয় তো তোমার নতুন ছবি রিলিজ।

প্রসেনজিৎ: আমার তরফ থেকেও পুজোর শুভেচ্ছা সক্কলকে। সকলের পুজো ভালো কাটুক, আনন্দে কাটুক।

Advertisement

প্রশ্ন: এবারের পুজোর রিলিজ তো ধুন্ধুমার। তোমার ছবিও পুজোয় রিলিজ করছে। টেনশন হচ্ছে একটু আধটু?

Advertisement

প্রসেনজিৎ: পুজোয় রিলিজ বলে না। আমার সবসময়ই ছবি রিলিজ করার আগে টেনশন হয়। ৩০-৩৫ বছর আগেও হত। এখনও হয়। আগের থেকে এখন ধারা বদলেছে। প্রচারের মাধ্যম বদলেছে। আগে এত ইন্টারভিউ দিতে হত না। এখন হয়। আগে হয়তো পুজোয় আমারই তিনটে কিংবা দুটো ছবি একদিনে রিলিজ করত। তবে একথা ঠিক যে, ছবি রিলিজ হলে এখনও টেনশনেই থাকি।

একটা কথা আমার বলার দায়িত্ব, তাই বলি, আগের থেকে ধারা বদলেছে। এখন সিঙ্গল স্ক্রিন থেকে মাল্টিপ্লেক্স। তবে বিগত কিছু বছর ধরে, পুজোর সময় ভালো কাজ হচ্ছে। মানুষ হলে এসে সিনেমা দেখছেন। সৃজিত, এস ভি এফ, এই যে অটোগ্রাফ, বাইশে শ্রাবণ এল, সেই থেকে এক নতুন প্রজন্ম বাংলা ছবির জন্য হল ভরালো। এটা একটা ভালো বিষয়। আর পুজোর সময় যেহেতু হিন্দি সিনেমা বেশি থাকে না, তাই বাংলা ছবি দারুণ চলে। আসলে এটা আমাদের উৎসব।

প্রশ্ন: আচ্ছা, দেবী চৌধুরাণী একটা সময়ের গল্প বলে। নারীর প্রতিবাদ। সেখানে তোমার চরিত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রসেনজিৎ: দেখো, এই ছবির সঙ্গে আমরা যারাই যুক্ত তাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে। আজকের দিনে বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্য নিয়ে ফেরা মুখের কথা নয়। এর আগে আমি সাহিত্যনির্ভর ছবি করেছি চোখের বালি, নৌকাডুবি। তখন ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন। ভাবনা ছিল না। এখন এমন একটা বড় কাজ, এটা দায়িত্ব বটে। শুভ্রজিৎ এত ভালো করে চিত্রনাট্য লিখে কাজ করেছে, রিসার্চ করে কাজ করেছে। এই ছবি আট থেকে আশি, সব বয়সের মানুষকে আকর্ষণ করবে বলে আমার মনে হয়। আরেকটা কথা, এখন ওটিটির যুগ। পশ্চিমবাংলার বাইরে মানুষও না এই ইতিহাস বেস কাজগুলো দেখতে ইচ্ছুক হচ্ছেন। আসলে মানুষ ইতিহাস জানতে ভালোবাসেন। বাইরে যখন আমি বলছি, এই দেবী চৌধুরাণী ঝাঁসি কী রানির থেকেও প্রায় ৭০ বছর আগের ঘটনা, সবাই অবাক হচ্ছেন। আরেকটা জিনিস দেখো, এখন তো চারদিকে কত কিছু চলছে, আর তখন একজন সাধু আর একজন ফকির একসঙ্গে দেশ মায়ের জন্য লড়াই করেছেন। আর রয়েছে নারীশক্তি। মায়ের থেকে শক্তিশালী আর কিছু হয় না। আমার মনে হয় মাতৃশক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি।

প্রশ্ন: তুমি কী সুন্দর করে ব্যাপারটা বললে। তোমার প্রেক্ষিত ধরেই বলছি, আমরা আমাদের
মা-দিদিমাদের লড়াইটা দেখেছি। আমরা এখন মনে করি আমরা আধুনিক। আসলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, তা নয়। ওঁরা আরও বেশি লড়াই করে আমাদের পথটা স্মুদ করে দিয়েছেন।

প্রসেনজিৎ: যতই আধুনিক হয়ে যাক, মা যখন গোটা বাড়িকে আগলে রাখে, তার না একটা আলাদা শক্তি থাকে। এটা ঈশ্বর দেন। এই শক্তিটা ওভাবে পাওয়া যায় না। সংসার ধরে রাখা, মানুষকে ধরে রাখা। মায়েদের এই ভূমিকাটা বিশাল।

প্রশ্ন: এই ছবিতে তোমার সঙ্গে শ্রাবন্তী। এর আগেও শ্রাবন্তীর সঙ্গে কাজ করেছো। তবে এই ছবি কি একটু আলাদা?

প্রসেনজিৎ: নিশ্চয়। শ্রাবন্তী আমার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছে। তারপর আমার নায়িকার চরিত্রে। তবে এই ছবি একদম অন্যরকম। এই ছবির একটা দৃশ্য আছে যেখানে ভবানী পাঠক নিজের অন্তর থেকে অন্তরের শক্তি দেবী চৌধুরাণীকে দিচ্ছেন। সেইটা মানুষের ভালো লাগবে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছবির।

প্রশ্ন: এর আগেও আমরা দেখেছি, শুভ্রজিৎ আগের কাজে যেভাবে ওর গল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, এই ছবিতেও তেমনই আশা করা যায়?

প্রসেনজিৎ: ওর লেন্সিং আলাদা। গল্পের পারসপেকটিভ আলাদা। ও এত ভালো কাজ করেছে যে কী বলব। দারুণ চিত্রনাট্য করেছে। তবে ও ইতিহাস আর বঙ্কিমচন্দ্রকে নিয়ে কোনও নাড়াচাড়া করেনি।
ভবানী পাঠকের নামে ইংরেজরা ভয় পেত। ত্রাস ছিলেন। প্রপার রবিনহুড কাইন্ড অফ। সন্ন্যাসী দলের একটা মুভমেন্ট। তাঁর একটা ছোট দল নিয়ে তিনি ভয় ধরিয়ে ছিলেন। তার মধ্যে দেবী চৌধুরাণী। সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটা শুভ্রজিৎ এই ছবিতে হাইলাইট করেছে। এটা যতটা বাংলার ইতিহাস, ততটাই ভারতের ইতিহাস।

প্রশ্ন : এবারে তো চারটে হেভিওয়েট ছবি মুক্তি পেতে চলেছে। তুমি কি তোমার ছবি ছাড়া অন্য ছবিগুলো দেখতে যাবে।

প্রসেনজিৎ: আমি তো সবার ছবিই দেখি। তবে এক লাইনে বলব, ওজন বুঝি না, চারটে ছবিই কিন্তু বাংলা ছবি। ক’দিন আগে একটা ছবি এসেছিল তার ওজন জানতাম না, ‘অঙ্কটা কি কঠিন’। আমি ছবিটা হলে গিয়ে দেখেছি। আসলে ছবির ওজন ঠিক করে দর্শক। আর যে চারটে ছবি পুজোতে রিলিজ হচ্ছে, সেই চারটে ছবিই বাংলা। তাই এই চারটে ছবিই আমার ছবি। ক্লাসে কেউ ফার্স্ট হবে, সেকেন্ড হবে, থার্ড হবে, কেউ ফোর্থ হবে। তার মানে এই নয়, যে ফোর্থ হবে সে একেবারেই ব্যর্থ। সে শুধুমাত্র তৃতীয়ের নীচে। অর্থাৎ চারটে ছবিই গুরুত্বপূর্ণ। শিবু, নন্দিতাদি বহুদিন ধরেই আমাদের ভালো ছবি উপহার দিয়ে এসেছেন। রঘু ডাকাত, যেখানে দেবের মতো বড় স্টার আছে, সেরকমভাবে যদি ভাবা যায় প্রতিটা ছবিরই নিজস্ব ওজন আছে।

প্রশ্ন : আমরা জানি, কিছু ক্ষেত্রে তুমি ট্রেন্ড সেট করো। বাংলা সিনেমা যাতে অগ্রাধিকার পায় সেই সেই লড়াই তোমার দীর্ঘদিনের। তুমি কি মনে করো তোমার উত্তরসূরি সেভাবেই তৈরি হচ্ছে? কারণ দেবকে যদি দেখো, যেভাবে প্রচার করছে কমার্শিয়াল ছবিকে একটা অন্য মাত্রা দিয়েছে।

প্রসেনজিৎ:
একটা সময় আমরা হল ভিজিট করতাম, প্রচার করতাম। এখন আরও নতুন নতুনভাবে প্রচার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই গতিটা অন্য জায়গার থেকে অনেক ভালো। কোথায় পৌঁছতে হবে সেই গতিটা আমরা জানি। আর দেব যেহেতু এই ধরনের ছবি থেকে সরে এসে খাদানের মধ্য দিয়ে নতুন করে কমার্শিয়াল ছবিকে গুরুত্ব দিয়েছে, তাই ও জানে ওকে মানুষের কাছে যেতে হবে। এই যাওয়াটা সাধনার জায়গা। আগে হল ছিল না। তাই আমরা শহরভিত্তিক প্রচারে থাকতাম।

প্রশ্ন: বাংলা ছবির ক্ষেত্রে তাহলে আর শুধু মাল্টিপ্লেক্স নয়, সিঙ্গল স্ক্রিন বা আরও নতুন রকমের উন্নতি হোক।

প্রসেনজিৎ: বাংলা ছবি হলে দেখতে এলে বাংলা সিনেমার ব্যবসা বাড়বে, সংখ্যাও বাড়বে। মানুষ অনেক বেশি করে দেখবে।

প্রশ্ন: এবার পুজোয় হলে আসছে দেবী চৌধুরাণী। এই বিষয় তুমি দর্শকদের কী বলবে?

প্রসেনজিৎ: আমরা সাহিত্য নিয়ে একটা ছবি করেছি। শুভ্রজিৎ মিত্রের পরিচালনায় প্রচুর পরিশ্রম করেছি। আর সাহিত্য মানেই একটা দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব নিয়ে খুব পরিষ্কার বাংলা ভাষায় ছবি বানানোর চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস বাঙালিদের এই ছবি পছন্দ হবে। অনেক কিছুকে অস্বীকার করা যায়, কিন্তু দেড়শো বছর আগে যিনি বন্দে মাতরম লিখেছেন তাঁকে অস্বীকার করা যায় না। আবার হয়তো ৩০ বছর পর কেউ দেবী চৌধুরাণী বানাবে। এভাবে অনেক গল্প আছে যেগুলো একেকটা সময় পরপর ফিরে ফিরে আসে। আমি হাত জোড় করে সবাইকে অনুরোধ জানাবো, যাতে সবাই এই চারটে ছবিই হলে এসে দেখেন।

Advertisement