• facebook
  • twitter
Thursday, 6 February, 2025

কেন ২০২৪-এর ২৫ ডিসেম্বর গত দশ বছরে উষ্ণতম বড়দিন?

মানব সভ্যতার ইতিহাসে ২০২৪ সম্ভবত উষ্ণতম বছর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। এ বছরের বেশির ভাগ সময়ই দেশের পূর্ব উপকূলকে চাপ রেখেছে বঙ্গোপসাগর। বছরের শেষের দিকেও সেই প্রবণতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি।

ফাইল চিত্র

বুধবার বড়দিনেও শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আর গায়ের কোট খুলে ঘাম মুছছে শহরবাসী। এমন দৃশ্য কলকাতার ইতিহাসে খুবই বিরল। তবে আবহাওয়া দপ্তরের রেকর্ড থেকে জানা গিয়েছে, এই ঘটনা গত দশ বছরে ঘটেনি। ফলে ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বুধবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১০ বছরে উষ্ণতম বড়দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এদিন কাকভোরে এই তাপমাত্রায় হতবাক শহরবাসী। কারণ, বড়দিনে এই তাপমাত্রা গত দশ বছরে দেখা যায়নি। এর আগে ২০১৫ সালে উষ্ণতম বড়দিন দেখা দিয়েছিল শহরে। সে দিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার গত দশ বছরের সেই পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিল।

কিন্তু কেন এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হল? আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে পূর্বেই জানা গিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে একের পর এক পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে এই অকাল বসন্ত তৈরি হয়েছে। নতুন করে তৈরি হওয়া এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এবারের শীতকে হাইজ্যাক করেছে। এই ঝঞ্ঝা এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে গত সোমবার। শুক্রবার আরও একটি ঝঞ্ঝা প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই জোড়া ঝঞ্ঝার জেরে তাপমাত্রা আপাতত একই থাকবে। আগামী দুই থেকে তিনদিনে তার কোনও হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এই সময়ে আবহাওয়া ঠিক কেমন থাকবে? আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সময়ে সকালের দিকে হালকা কুয়াশা দেখা দিলেও পশ্চিমের জেলাগুলিতে মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা যাবে। ঘন কুয়াশা দেখা যাবে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম এবং মুর্শিদাবাদ জেলায়। চলতি সপ্তাহের এই সময়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথাও মেঘলা আকাশ, আবার কোথাও নির্মল আকাশ লক্ষ্য করা যাবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকবে ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। দক্ষিণবঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়া থাকলেও উত্তরবঙ্গে যথেষ্ট বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বড়দিনে শীত বিরূপ হলেও মাসের শেষে পারদ নামার সম্ভাবনা প্রবল।

প্রসঙ্গত মানব সভ্যতার ইতিহাসে ২০২৪ সম্ভবত উষ্ণতম বছর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। এ বছরের বেশির ভাগ সময়ই দেশের পূর্ব উপকূলকে চাপ রেখেছে বঙ্গোপসাগর। বছরের শেষের দিকেও সেই প্রবণতায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। আবহবিদরা জানিয়েছেন, গত দশ দিন ধরে সমুদ্রের উপর একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। ওই নিম্নচাপ জায়গা পরিবর্তন করেনি। যার জন্য একদিকে যেমন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তুমুল বৃষ্টিপাত হয়েছে, অন্যদিকে দক্ষিণবঙ্গ-সহ দেশের অনেকটা জায়গাতে বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করেছে।

এবিষয়ে সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা জানিয়েছেন, এখন বঙ্গোপসাগরের উপরিতলের গড় তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। সেজন্য ওই নিম্নচাপ সহজেই জলীয় বাষ্পের জোগান পেয়ে চলেছে। যার জেরে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেও শহরে শীতের দেখা নেই। সেই সঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে রাজ্যে ঠাণ্ডা হাওয়া প্রবেশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।