পুলিশের কাঁদানে গ্যাসেই কাহিল বিজেপি কর্মী সমর্থকরা

বিজেপির সাড়ম্বরে আয়ােজন করা ‘লালবাজার অভিযান’ অচিরেই ভােজবাজির মতে নিভে গেল। তবে আয়ােজনে কোনও অংশে কসর করেনি রাজ্যের অন্যতম ক্ষমতাশীল বিরােধী শিবির বিজেপি।

Written by SNS Kolkata | June 13, 2019 1:50 pm

'লালবাজার অভিযান'- বিজেপির ধিক্কার মিছিল (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

বিজেপির সাড়ম্বরে আয়ােজন করা ‘লালবাজার অভিযান’ অচিরেই ভােজবাজির মতে নিভে গেল। তবে আয়ােজনে কোনও অংশে কসর করেনি রাজ্যের অন্যতম ক্ষমতাশীল বিরােধী শিবির বিজেপি।

অভিযানে নবীন প্রবীণ সাংসদরাও সমারােহে শামিল হন। সেই তালিকায় কাকে ছেড়ে কাকে বাদ দেওয়া যায়। কৈলাস বিজয়বর্গীয়র নেতৃত্বে হাজির ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, অর্জন সিংয়ের মতাে দাপুটে নেতা। পাশাপাশি ছিলেন অনুপম হাজরা, সায়ন বসু সহ বেশ কিছু প্রথম সারির নেতাকর্মী। লালবাজার অভিযানের উপলক্ষ– রাজ্যের বর্তমান সরকারের অপশাসন ও সন্দেশখালিতে ঘটনার তীব্র ধিক্কার। প্রায় লাখ খানেক কর্মী-সমর্থক জড়াে করার ডাক দিলেও কার্যত সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারলনা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।

অন্যদিকে প্রস্তুত ছিল কলকাতা পুলিশও। শুরু থেকেই পুলিশের রণংদেহী মেজাজের কাছে কার্যত নতিস্বীকার করল বিজেপি। তাই বিজেপির এই ধিক্কার অভিযানে ‘যত গর্জায় তত বর্ষায় না’ নীতি কথাতেই এসে মিলে গেল।

বুধবার সকাল থেকেই সুবােধ মল্লিক স্কোয়ারে জমায়েত স্ক্র হয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। শহরের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকেও পিলপিল করে ওয়েলিংটন স্কোয়ার অভিমুখী মানুষের ভিড়ে আশঙ্কার মেঘ জমছিল। কেন্দ্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আসার পরেও শহরে সেভাবে বিজয় মিছিল করতে পারেনি বিজেপি। সেই ক্ষোভ যেমন ছিল, তেমনই রাজ্যজুড়ে কর্মীরা রাজনৈতিক হিংসার বলি হওয়াও ছিল আন্দোলনের ঘৃতাহুতি।

শুধু শহর নয়, তাই লালবাজার অভিযানে শামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন জেলার মানুষ। গণ্ডগােলের আশঙ্কায় নবান্নের গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পাহারায় ছিল বিশাল বাহিনী। বেলা বাড়তেই নির্ধারিত সময়ে মিছিল করে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের উদ্দেশে এগিয়ে যায় বিপুল মানুষের দল।

তবে পরিস্থিতি মােকাবিলায় প্রস্তুত ছিল কলকাতা পুলিশ। জলকামান থেকে টিয়ার গ্যাস, এমনকি ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে এদিন। লালবাজার লাগােয়া সবকটি রাস্তাতেই বাহিনী হাজির ছিল। এমনকি অলিগলিতেও নজরদারি ছিল মঙ্গলবার রাত থেকেই।ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার মােড়কে মুড়ে ফেলা হয়। এমনকি বিজেপির লালবাজার অভিযান মােকাবিলায় লালবাজারের ব্লুপ্রিন্টের গােপনীয় রক্ষার বিষয়ে কোনও রকম কসুর করেনি পুলিশ কর্তারা।

বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, সেন্ট্রাল এভিনিউ, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, ফিয়ার্স লেন, ডালহৌসি চত্বর জুড়ে পুলিশের বাহিনীতে ছয়লাপ। জয়েন্ট সিপি ও ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদর আধিকারিকদের নেতৃত্বে গােটা বাহিনী পরিচালিত হচ্ছিল। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে বিভিন্ন রাস্তায় ডাইভারশন করে যানবাহনের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজও একই সঙ্গে লক্ষ্য রেখে চলছিলেন ট্রাফিক বিভাগের কর্তারা।

তবে এর মধ্যেও সকলের চোখ এড়িয়ে কয়েকজন মহিলা বিজেপি কর্মী লালবাজারের সামনে আসার চেষ্টা করে। সেই সময়ই পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে সেন্ট্রাল এভিনিউ হয়ে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে এসে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে গার্ডবেল সরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায় বিজেপি কর্মীরা। প্রাথমিকভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়। ব্যারিকেড ভেঙে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা ঢোকার চেষ্ট করলেই ধস্তাধস্তি শুরু হয়। আর তখনই শুরু হয় পুলিশের জলকামান।

প্রবল জলস্রোতে কিছুটা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে বিরােধী শক্তি। কিন্তু ফের এক দফায় দুই প্রতিপক্ষের ধস্তাধস্তির সুযােগ না দিয়েই কাদানে গ্যাসের সেল ফাটায় পুলিশ। ফলে বিজেপির এই অভিযান অচিরেই বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সেই সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিলের সামনের দিকেই ছিলেন তিনি। মিছিলে স্লোগান তােলেন রাহুল সিনহা, ‘দ্যাখ বিজেপির ক্ষমতা, ভয় পেয়েছে মমতা’।

তবে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের সামনেই কার্যত পরাস্ত হন বিজেপি নেতৃত্ব। তবে সেই সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে একপ্রস্ত ইট ছেড়ারও চেষ্টা করে সমৰ্করা। তবে সেই সময় আন্দোলন আর দীর্ঘায়িত না করে অভিযান স্থগিত করার ডাক দেন দিলীপ ঘােষ। তবে মমতার সরকার আর বেশি দিন নেই বলেই শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেয় বিজেপি। মিছিল থেকেই মমতার পদত্যাগ দাবি করেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।