• facebook
  • twitter
Thursday, 20 March, 2025

২৬ হাজার চাকরি প্রার্থীদের নতুন করে পরীক্ষার ভাবনা সুপ্রিম কোর্টের

বিচারপতি জানতে চান, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈধ এবং অবৈধদের বাছাই করা সম্ভব কি না

ফাইল চিত্র

সোমবারেও নিষ্পত্তি হল না ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানির। আজও প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে কোনও সুরাহা হল না। সোমবার দুপুর দুটো নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাশে দুই ঘন্টা ধরে মামলার শুনানি চলে। মূল মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ফিরদৌস শামিম। তাঁরা আদালতে নিয়োগের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের আবেদন জানান। যদিও এদিন শুনানির নিষ্পত্তি হয়নি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। সম্ভবত ওইদিনই শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি শেষ হতে চলেছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন করেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ওএমআর শিট সংক্রান্ত। শীর্ষ আদালতে বিচারপতি জানতে চান, ওএমআর শিটে নম্বর নিয়ম মেনেই কি প্রকাশ করা হয়েছিল? এই প্রশ্নের সওয়াল জবাবে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বিষয়টির বিরোধিতা করে বলেন, নিয়ম মেনে ওএমআর শিটে নম্বর প্রকাশ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে ওএমআর শিট প্রকাশ করা হয়, যার ফলপ্রকাশ অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। বিকাশবাবু অভিযোগ করেন, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ শিক্ষা দপ্তরের এই গোটা প্রক্রিয়া ছিল বিতর্কিত। সেজন্য গোটা প্যানেল বাতিল করা উচিত। রাজ্যের উচিত স্বচ্ছভাবে কাজ করা। অথচ বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রত্যেকে পৃথক কথা বলেছে। এই তিন বিভাগের একটির সঙ্গে আর একটির কথার কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিন শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি জানতে চান, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈধ এবং অবৈধদের বাছাই করা সম্ভব কি না। সেই প্রশ্নের জবাবে মূল মামলাকারীদের আইনজীবীরা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান। মামলাকারীদের একজন আইনজীবী বলেন, একটি বাছাই করতে গেলে অন্যটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। আবার অন্যটি বাছাই করতে গেলে আর একটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেজন্য এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বৈধ ও অবৈধদের বাছাই করা সম্ভব নয় বলে দাবি করেন। কারণ কে বৈধ এবং কে অবৈধ তা নির্দিষ্ট সংখ্যায় চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। ওই আইনজীবী বলেন, ‘এই মামলায় যাঁরা নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই দুর্নীতির অংশ। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এক-একটি প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে।’

অন্যতম মামলাকারীর আইনজীবী রউফ রহিমের দাবি, স্কুল সার্ভিস কমিশন, বোর্ড এবং রাজ্য সরকার মোট দেড় হাজার কোটি টাকা তুলেছে। প্রত্যেকে ৫০০ কোটি করে নিয়েছে। চাকরিপ্রাপক পিছু ৭-১০ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছিল। তাই এসএসসিকে ৫০০ কোটি টাকা জরিমানা করার পক্ষেও সওয়াল করেন বিকাশ।

এরপরই এই নিয়োগ মামলার জট কাটাতে নতুন পন্থা অবলম্বন করতে চান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না জানতে চান, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব কি না! সেক্ষেত্রে কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে? এ বিষয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, অনেকে আবেদন না করেও চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা চাকরির আবেদন করেছিলেন, তাঁদের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতেই পারে।

অন্যদিকে, সোমবার শুনানির সময় মূল মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁর মনে হয়েছে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম দু’টি কাউন্সেলিং পদ্ধতি মেনে হয়েছে। কিন্তু পরের কাউন্সেলিংগুলি মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। আবার নবম-দশম শ্রেণির জন্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তৃতীয় কাউন্সেলিং পর্যন্ত পদ্ধতি মানা হয়েছে। কিন্তু পরের কাউন্সেলিংগুলি মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকেই করা হয়েছে বলে দাবি করেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম।

উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি মামলার নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছিল। এর ফলে ২৫, ৭৫৩ জন চাকরি হারান। এরপরই হাইকোর্টের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে আলাদা করে মামলা করেছিল রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর, এসএসসি ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ গত ৭ মে ওই মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির যুক্তি ছিল, যদি যোগ্য ও অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা উচিত হবে না। এরপরই গত ১৫ জানুয়ারি মামলাটির পরবর্তী শুনানি হয়। কিন্তু সেদিন কোনও রায় দেওয়া হয়নি। ফের ২৭ জানুয়ারি সেই মামলারই শুনানি হল।