জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা রাজ্যের

নয়া শিক্ষানীতির ফাঁকফোকর খতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গড়ার কথা এদিন ঘোষণা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Written by SNS Kolkata | August 4, 2020 12:02 pm

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। (File Photo: IANS)

জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে তামিলনাড়ুর মতো পশ্চিমবঙ্গও কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতের পথেই হাঁটছে। সোমবার বেহালায় রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্টভাবে বলেন, এই শিক্ষানীতি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। সেকথা লিখিত আকারে কেন্দ্রকে জানানোও হয়েছে। পড়াশুনোর নিয়মনীতির পরিবর্তন হল, অথচ রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হল না।

এই শিক্ষানীতির ফাঁকফোকর খতিয়ে দেখতে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গড়ার কথা এদিন ঘোষণা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পনেরোই আগস্ট এই কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার কথা। শিক্ষা দফতর থেকে কেন্দ্রের কাছে ফের চিঠি পাঠানো হবে বলে জানান পার্থবাবু।

এই ছয় সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন শিক্ষাবিদ সৌগত রায়, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, পবিত্র সরকার, অভীক মজুমদার, সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী, সুরঞ্জন দাস। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হলে এই রাজ্যে কী কী সমস্যা হতে পারে, তাই বিশ্লেষণ করবে এই কমিটি।

পার্থবাবু এদিন বলেন, নতুন শিক্ষানীতি চালু করতে হলে আগে অনেক কিছু করতে হয়। পাঁচ বছরে এই শিক্ষানীতি চালু করা সম্ভব নয়। এছাড়া নতুন শিক্ষানীতি চালু করতে হলে পরিকাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজন। সেই অর্থ কে বহন করবে?

রবিবার মন কী বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলোচান করেই এই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। সোমবার শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন এই শিক্ষানীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করেনি কেন্দ্র।

এদিন শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় শিক্ষানীতিকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যপালের মতামতেরও সমালোচনা করেন। কটাক্ষের সুরে পার্থবাবু বলেন, ওঁকে (রাজ্যপালকে) পদ্মপাল বলেই সকলে জানেন। বিজেপি যেকথা বলে, ভালোমন্দ বিচার না করে তাতেই সায় দেন রাজ্যপাল।

নরেন্দ্র মোদি মন্ত্রিসভার সিলমোহর দেওয়া নয়া শিক্ষানীতির যে প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকার এনেছে, তাতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর সব স্তরেই আমূল বদল ঘটতে চলেছে। এই শিক্ষানীতির পক্ষে ও বিপক্ষে নানান মত তৈরি হয়েছে। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আগেই এই শিক্ষানীতির সমালোচনা করে বলা হয়েছিল, এই শিক্ষানীতি গরিবদের বিপক্ষে যাবে।

অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন এই শিক্ষানীতি কার্যকর হলে দেশের পড়ুয়াদের বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পৌছনো সহজ হবে। কারণ পুরনো শিক্ষাক্রমের ধাচ বদলে, স্নাতক স্তরের আগে চার বছরের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি কোর্স পড়ানোর ফলে বিষয় নির্বাচন সুযোগ অনেক বাড়বে পড়ুয়াদের।

স্কুলস্তরে বোর্ডের পরীক্ষা সহজতর হবে। সিলেবাসের আয়তন কমিয়ে জরুরি বিষয়ের ওপর ধারণা করার সুযোগ বাড়ানো হবে। তবে নয়া শিক্ষানীতিতে কৌশলে অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলির ওপর হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা করা হয়েছে। এই কারণে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই কে পালানীস্বামী এই শিক্ষানীতি তাঁর রাজ্যে চালু করবেন না বলে জানিয়েই দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি ইতিমধ্যেই এই শিক্ষানীতি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

ষাটের দশকে যখন কংগ্রেস সরকার হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করেছিল, তখনও তার বিরোধিতা করেছিল তামিলনাড়ু। এতদিন পর্যন্ত এই রাজ্যে ইংরেজি ও তামিল ছাড়া আর কোনও ভাষাই পড়ানো হয় না। অভিন্ন জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় স্থানীয় ভাষাকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেও আপত্তি জানিয়েছিল। সোমবার রাজ্য সরকার যে নতুন কমিটি গড়েছে, সেখানে এই ভাষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।