নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে ‘দাগি’ প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হল রাজ্য এবং এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন)। মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে বিচারপতি সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। আজ এই আবেদনের শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার এসএসসির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য নির্দেশ দেন, ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থীদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। কোনও ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থী যদি ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকেন, সেই আবেদনপত্র বাতিল করতে হবে। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য এবং এসএসসি। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইতিমধ্যে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের একাংশও।
চলতি বছর এপ্রিলের শুরুতে ২০১৬ সালে এসএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত গোটা প্যানেলটি ‘অসাংবিধানিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি রাতারাতি বাতিল হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করে এসএসসি। ওই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের জানিয়ে দেন, ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই চূড়ান্ত। সেই নির্দেশ মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।’ যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট ৩১ ডিসেম্বরের নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার কথা নির্দেশ দিয়েছে, তাই সেই দিকে নজর রেখে প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
সোমবার নির্দিষ্টভাবে ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থীদের নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি যে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা বয়সজনিত ছাড় পাবেন না। যদি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ না নিতে পারেন, তাহলে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া অসফল চাকরিপ্রার্থীরাও অংশ নিতে পারবেন না।’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য বলে চিহ্নিত না হওয়া ব্যক্তিদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দিয়েছে। তার মানে এটা নয় যে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যদের গোটা প্রক্রিয়া থেকে বের করে দিয়েছে।’
স্কুল সার্ভিস কমিশন আদালতে বলে, ‘একবার এই ব্যক্তিদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে, বেতন ফেরতের কথা বলা হয়েছে। এখন যদি আবার নিয়োগে অংশ নিতে না দেওয়া হয়, তাহলে তাদের একই অপরাধের জন্য দু’বার শাস্তি দেওয়া হবে।’ সবপক্ষের মতামত শুনে সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, শুধু দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। তবে গত ৩০ মে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল এসএসসি, তাকে সামনে রেখেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলবে। সোমবার বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের দেওয়া এই নির্দেশের বিরুদ্ধেই এবার আদালতের দ্বারস্থ হল রাজ্য এবং এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন)।