এবার থেকে কোনও বিধায়ক ব্যক্তিগত দেহরক্ষী সঙ্গে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রবেশ করতে পারবেন না। সোমবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিনেই এই ঘোষণা করলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা এই নিয়মের আওতায় পড়বেন না বলে স্পষ্ট করেন তিনি। অধ্যক্ষ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা সাধারণত অস্ত্র নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করেন না।
লোকসভাতেও একই রকম নিয়ম বহাল রয়েছে। দেশের একাধিক রাজ্যের বিধানসভাতেও এই নিয়মই অনুসরণ করা হয়। বিমানবাবু বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে এবার থেকে বিধানসভায় কোনও নিরাপত্তা কর্মীই প্রবেশ করতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছাড়া কারও কোনও নিরাপত্তা রক্ষী থাকবেন না বিধানসভার অন্দরে।’ এই মর্মে নোটিসও দেওয়া হয়েছে বিধানসভায়।
Advertisement
প্রসঙ্গত, বাংলার তৃণমূল বিধায়কেরা রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়কদের নিরাপত্তার দায়িত্বে সাধারণত থাকেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। বিধানসভার অধিবেশনের সময়ে বিজেপি বিধায়কদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিধানসভার চৌহদ্দির বাইরে থাকতে হয়। বিধানসভার বাইরে ছাউনি দিয়ে একটি অস্থায়ী বিশ্রামস্থলের ব্যবস্থা করা হয়।
Advertisement
সোমবারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে চলা একটি মামলা। বিজেপি বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন, যাতে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও বিধানসভা চত্বরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল বিধায়করা রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করলেও বিজেপি বিধায়কদের কেন্দ্রীয় বাহিনীর রক্ষীরা প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন না।
এই প্রসঙ্গে হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলে, বিধায়কদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি কেন গ্রহণ করা হচ্ছে? বিচারপতি শম্পা সরকার অধ্যক্ষ এবং বিধানসভার সচিবের কাছে হলফনামা চেয়ে পাঠান। সেই আবহেই সোমবার অধ্যক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনও বিধায়কই আর দেহরক্ষী নিয়ে বিধানসভায় প্রবেশ করতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা কর্মীদের ক্ষেত্রে ছাড় থাকবে।
মূল ঘটনার সূত্রপাত ২০২৪ সালে। গত বছর আগস্টে শুভেন্দু অধিকারী যখন বিধানসভার ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছিলেন, তখন তাঁকে লক্ষ্য করে কিছু প্রশ্ন করতে দেখা গিয়েছিল পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়কে। ওই ঘটনায় কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডাও চলে দু’জনের মধ্যে। সেই সময় তপন চট্টোপাধ্যায় তাঁকে ধাক্কা মারেন বলে অভিযোগ করেছিলেন শুভেন্দু।
এই ব্যাপারে বিজেপি বিধায়কদের নিরাপত্তা চেয়ে পদ্মশিবিরের তরফে স্পিকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, বিজেপির সেই অভিযোগের ব্যাপারে স্পিকার কর্ণপাত করেননি। বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। এরপরই সেই বাহিনীর জওয়ানদের বিধানসভার অভ্যন্তরে প্রবেশের আর্জি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন শুভেন্দু।
Advertisement



