তদন্ত যতই এগোচ্ছে ততই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে নিউটাউনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায়। তদন্তকারীদের দাবি, খুনের দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল মোট ছ’জন। এদের মধ্যে দু’জন জেরায় স্বীকারও করেছে যে তারা সরাসরি ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া গাড়িচালক রাজু ঢালী দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দা, বাকি পাঁচজনের বাড়ি উত্তরবঙ্গে।
অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গিয়েছে, প্রথমে বেল্ট দিয়ে এবং পরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। সেই তাঁর হঠাৎ মাথার পেছনে আঘাত লাগে। তখনই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর নিথর দেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয় নীলবাতি লাগানো একটি সরকারি গাড়িতে। তদন্তকারীদের দাবি, পরে নিউটাউনের যাত্রাগাছি এলাকার এক খালের ধারে ব্যবসায়ীর নিথর দেহটি ফেলে দেওয়া হয়।
Advertisement
সূত্রের খবর, খুনের পরদিন একই নীলবাতি যুক্ত গাড়িতেই অভিযুক্ত রাজু ঢালী জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মনকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন। তদন্তে উঠে এসেছে, যে গাড়িটি দিয়ে বিডিওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই গাড়িই ব্যবহার করা হয়েছিল খুন ও দেহ লোপাটের জন্য। ফলে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় চলে এসেছেন বিডিও প্রশান্ত বর্মনও।
Advertisement
প্রায় আট দিন আগে যাত্রাগাছির খালপাড় থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশের নজর ছিল প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত গাড়ির দিকে। পুলিশের হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাট থেকে একটি গাড়ি দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গিয়ে নতুন ব্রিজ পেরিয়ে যাত্রাগাছির দিকেই এগোচ্ছে। তাতে স্পষ্ট নীলবাতি জ্বলতে দেখা গিয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, গাড়িটি বিডিও প্রশান্ত বর্মনের দপ্তরের সরকারি গাড়ি।
এই ঘটনায় গাড়িচালক রাজু ঢালী ও তাঁর এক সহযোগীকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, বিডিও প্রশান্ত বর্মনের গ্রেপ্তারির দাবিতে স্থানীয় থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। যদিও প্রশান্ত বর্মনের দাবি, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও যোগ নেই। কলকাতায় আমার কোনও বাড়ি নেই। আমার কোনও সোনা চুরি যায়নি।’
এলাকায় ‘দাবাং বিডিও’ নামে পরিচিত প্রশান্ত বর্মন আরও বলেন, ‘আমার তিনটি বাড়ির কথা বলা হচ্ছে— তার কাগজপত্র দেখাক। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করে দেখা হোক। আমি ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে চিনি না, কোনও চোরকেও চিনি না।’
এই ঘটনায় তদন্তকারীরা এখন খতিয়ে দেখছেন, খুনের আসল মোটিভ কী এবং সরকারি গাড়িটি কী ভাবে অভিযুক্তদের হাতে পৌঁছে গেল। পুলিশের হাতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজই এই রহস্যময় খুনের তদন্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
Advertisement



