• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ঋণের ভারে ন্যূব্জ ভারত

অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে প্রাকবাজেট বৈঠকে সরকারকে কড়া বার্তা দিয়ে তাবৎ শিল্পমহল বলেছে, মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। পেট্রোপণ্যের উপর কেন্দ্রীয় শুল্ক কমাতে হবে।

ফাইল চিত্র

তৃতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মোদী সরকার দেশকে বৈদেশিক ঋণের শিখরে তোলার ব্যবস্থা করেছেন। সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ঋণ নিচ্ছেন। ভারত সরকার দেশের অর্থনীতি রক্ষায় ঋণ নিচ্ছে। দেশ নিমজ্জিত হচ্ছে ঘরে-বাইরের ঋণে।

অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে প্রাকবাজেট বৈঠকে সরকারকে কড়া বার্তা দিয়ে তাবৎ শিল্পমহল বলেছে, মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। পেট্রোপণ্যের উপর কেন্দ্রীয় শুল্ক কমাতে হবে। ১০০ দিনের কাজের মজুরি বাড়ানো দরকার। আয়কর ছাড় প্রয়োজন। মানুষের হাতে টাকা না থাকলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে না। দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে পারিবারিক ঋণ নেওয়ার পরিমাণ মোট জিডিপি-র ৪২ শতাংশ। বহু বছর পর দেশে বাড়ছে মর্টগেজ লোন। একদিকে সাধারণ মানুষের লোন নেওয়া এবং তা পরিশোধ করতে না পারার নিরাশজনক আবহ, অন্যদিকে ভারত সরকারের বৈদেশিক ঋণ বেড়ে চলা। ২০২৪ সালে বৈদিশিক ঋণের পরিমাণ ৭১ হাজার ১১০ কোটি ডলার। যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছিল ৬৩ হাজার ৭১০ কোটি ডলার। ২০২৪ সালের জুন মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।

Advertisement

নতুন বছরেই ভারত পা রাখল ঋণের পাহাড় মাথায় নিয়ে। বেড়েই চলেছে পার্সোনাল লোন। গৃহঋণ কিন্তু বাড়ছে না। আগস্ট মাস থেকে গৃহঋণ কমছে। কিন্তু যা বাড়ছে তা হল, গৃহঋণ পরিশোধ করতে না পারার প্রবণতা। সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালে ঋণের পরিমাণও যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে ঋণ পরিশোধ করতে না পারার প্রবণতা। বচরের শেষ লগ্নে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বীকার করেছে যে, ভারতে পরিবারগুলির মধ্যে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু শুধু দেশবাসীই নয়, ভারত সরকারও ঋণভারে নিমজ্জিত। ২০২৪ সালের শেষ পর্বে এসে জানা যায়, ভারতের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে। টাকার মূল্য ডলারের বিনিময়ে হয়েছে সর্বনিম্ন।

Advertisement

টাকার দাম শেষ পর্যন্ত কোন তলানিতে ঠেকবে, তা নিয়ে মুদ্রার বাজারে নতুন করে শুরু হয়েছে উদ্বেগ। ২০২৪ সালের শেষ দিনেও টাকার দাম পড়ল। তৈরি হল নতুন নজির। ১ ডলারের দাম ১২ পয়সা বেড়ে প্রথম বার হল ৮৫.৬৪ টাকা। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ প্রত্যাশার তুলনায় রক্ষণশীল পদক্ষেপ করায় এবং ভারতীয় অর্থনীতির বিভিন্ন মাপকাঠিতে শ্লথতার লক্ষণ স্পষ্ট হওয়ায় নতুন বছরেও টাকা দুর্বল থাকবে। বিদেশি পুঁজি প্রত্যাহার, ঘাটতি বৃদ্ধি, বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডার কমা, আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার পাশাপাশি, বাজারের আবেগও এখন টাকার পতনের পিছনে কাজ করছে। ডলার ৮৫ টাকা পার করার পর থেকে সেটাই দুই মুদ্রার নতুন মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে, টাকা নিজের শক্তিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা। নতুন বছরে তা না হলে হয়তো তাদের হস্তক্ষেপই করতে হবে।

গত বছরের গোড়ায় কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৬৪,১৫০ টাকা। বছর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৭৬,৭৫০ টাকায়। গত বছর ৩০ অক্টোবর তা ৮০,২০০ ছুঁয়ে নজির গড়েছিল। তারপরেও ২০২৪-এ সোনার ব্যবহার ২০২৩-এর তুলনায় বেড়েছে। ফলে নতুন বছরেও বিক্রিবাটা নিয়ে আশাবাদী স্বর্ণশিল্প মহল। বিভিন্ন দেশ সুদ কমালে বা মূলধনী বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লেও সোনায় লগ্নি বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ফলে দাম আরও বাড়তে পারে। সোনার দামের বৃদ্ধির কারণ হল, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা।

এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাধারণের হাতে নগদ অর্থের জোগান নেই। বেড়েই চলেছে অনাদায়ী লোন। ঋণের জালেই জড়িয়ে পড়ছে মোদীর অর্থনীতি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল, সাধারণ মানুষ ব্যাঙ্কগুলি থেকে যে লোন নিচ্ছে, সেটি পরিশোধ করতে পারছে না। এই প্রবণতা মার্চ মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দ্বিগুণ হয়েছে। একমাস থেকে ৬ মাস পর্যন্ত লোন বকেয়া পড়েছে। এই প্রবণতা উত্তরোত্তর বেড়েছে। গত আগস্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রতিটি ব্যাঙ্ককে সতর্ক করে বলেছিল, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযত ও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ গোটা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় সেক্টরের ব্যাঙ্কের ঋণ খেলাপি হার দ্রুত বাড়ছে। সাধারণত এই সেক্টরে ঋণ খেলাপ বেশি হয় না। কারণ ভোগ্যপণ্য ক্রয়, বাড়ি কেনা এবং পার্সোনাল লোন, এই তিনটি সেক্টরের লোন সাধারণ মানুষ সব থেকে বেশি নেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয় পার্সোনাল লোন। গৃহঋণ বাড়লেও, বৃদ্ধির হার কমেছে। ১০ লক্ষ টাকার বেশি লোন নেওয়ার যে হার ছিল, সেটা কমে গিয়েছে। বেড়েছে ১ লক্ষ টাকার মধ্যে থাকার লোন। বড় ঝুঁকি কেউ নিতে চাইছে না। যারা নিয়েছে তাদের মধ্যে বড় অংশের বেহাল দশা। কারণ তারা লোন পরিশোধ করতে পারছে না।

কেন্দ্রের মতো একই অবস্থা দেশের বিভিন্ন রাজ্যেরও। দেউলিয়া অর্থনীতির জন্য মূলত মোদীর আর্থিক নীতিই দায়ী। অর্থনীতিবিদদের পরামর্শকে গুরুত্ব না দিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের আর্থিক নীতি অনুসরণই এর জন্য দায়ী।

Advertisement