• facebook
  • twitter
Wednesday, 31 December, 2025

কালীগঞ্জের নিহত তমন্নার মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা!

মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ পরিবার ও প্রতিবেশীরা মিলে স্থানীয় কালীগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাবিনাকে ভর্তি করা হয়

নদিয়ার কালীগঞ্জে নিহত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তমন্না খাতুনের মা সাবিনা বিবি হাসপাতালে ভর্তি। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেওয়ার জন্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানা গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে অচৈতন্য অবস্থায় সাবিনাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ পরিবার ও প্রতিবেশীরা মিলে স্থানীয় কালীগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সাবিনাকে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তবে ঠিক কী কারণে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন সাবিনা সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি পুলিশ।

দুষ্কৃতীরা লাগাতার হুমকি দিচ্ছে বলে দাবি করেছে পরিবার। সেই কারণে পরিবারের সকলেই আতঙ্কিত। একদিকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা অন্যদিকে হুমকি এবং আতঙ্ক নিতে পারেননি সাবিনা। তাই চূড়ান্ত পদক্ষেপ করেছেন। আপাতত তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। একসঙ্গে অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলেন তমন্নার মা, দাবি পরিবারের।  এখনও তমন্নার খুনের অনেক অভিযুক্ত অধরা বলে দাবি করেছেন সাবিনার পরিবারের সদস্যেরা।

Advertisement

তমন্নার বাবা হুসেন শেখ জানিয়েছেন, এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি সাবিনা। একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিচারের আশায়। হুসেন জানিয়েছেন, ‘চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যুর দৃশ্য ও ভুলতে পারেনি এখনও। বোমার আঘাতে মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহের ছবি এখনও ওর চোখে ভাসে। এই মানসিক অবস্থাতেও আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছু আসামি এখনও অধরা। আমাদের পরিবারকে তারা নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। তমন্নার মা তাই এখন আমার জীবন নিয়ে আতঙ্কিত। তাই রাতে অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিল। এখন চিকিৎসা চলছে।’

Advertisement

কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে আমরা মনে করছি, মেয়ের মৃত্যুর পর একটা বড় শোক পেয়েছেন তিনি। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন সাবিনা। তাই অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে ফেলছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, ঘুমের ওষুধের পাশাপাশি অবসাদের ওষুধ খেতেন সাবিনা। মঙ্গলবার রাতে সেই ওষুধও অনেক খেয়ে ফেলেছিলেন। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে আপাতত তিনি বিপণ্মুক্ত এবং স্থিতিশীল।

গত ১৯ জুন কালীগঞ্জে বিধানসভার উপনির্বাচন হয়েছিল। ২৩ জুন ছিল ভোটের ফলঘোষণা। গণনা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কালীগঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থীর জয় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সে দিন সময়ের আগেই বেরিয়েছিল শাসকদলের বিজয়মিছিল। স্থানীয় সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় ১০ বছরের তমন্নার। তাদের পরিবার এলাকার পরিচিত সিপিএম সমর্থক।

এরপর সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে কঠোরতম শাস্তির জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশও দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বোমাবাজির ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে কালীগঞ্জের নবনির্বাচিত বিধায়ক আলিফা আহমেদ জানান, অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। একটা বাচ্চাকে হারানো খুব বেদনার। তবে এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ করে দোষীদের গ্রেপ্তার করেছে।

পরবর্তীতে গত জুলাই মাসে মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কালীগঞ্জের নিহত নাবালিকা তামান্না খাতুনের পরিবার। সূত্রের খবর, সিবিআই তদন্ত চেয়েছে পরিবার। গত ১০ সেপ্টেম্বর এই ঘটনায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত দয়াল শেখ-সহ মোট ১০ জনের নাম ছিল চার্জশিটে। যদিও অনেক অভিযুক্ত বাইরে রয়েছেন বলে দাবি করেছিল তমন্নার পরিবার।

 

Advertisement