• facebook
  • twitter
Wednesday, 10 December, 2025

এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে মতুয়ারা, মাঠে নেমে আন্দোলন রঞ্জিতের

মতুয়া, নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে মাঠে নেমেছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া নমঃশূদ্র উদ্বাস্তু উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রঞ্জিত সরকার

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন তথা এসআইআর পর্বে মতুয়া, নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা রয়েছে, ভোটার তালিকা সংশোধনের পর এই সব সম্প্রদায়ের একাংশের নাম বাদ যেতে পারে। কারণ তাঁদের অনেকেরই নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই। পাশাপাশি তাঁদের কাছে কোনও বৈধ নথিপত্রও নেই।  মতুয়াদের নাম যাতে তালিকা থেকে বাদ না পড়ে সেই আবেদন তৃণমূল, বিজেপি সহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলই করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আতঙ্ক কাটছে না। এই পরিস্থিতিতে মতুয়া, নমঃশূদ্র ও উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে মাঠে নেমেছেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া নমঃশূদ্র উদ্বাস্তু উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রঞ্জিত সরকার। তাঁর নেতৃত্বে গোটা বাংলায় মতুয়া, নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ গর্জে উঠেছেন। রাজ্যের একাধিক জেলায় তিনি এসআইআর–এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন।
রঞ্জিত সরকারের ডাকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার মানুষ আবেগ, উদ্দীপনা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। এ এক অনন্য নজির। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জেলায় তিনি একাধিক কর্মসূচি পালন করেছেন। চলতি বছরের ৫ নভেম্বর তারিখে জলপাইগুড়িতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। এদিন এসআইআর নিয়ে আন্দোলন করে সমাজকে বার্তা দেন রঞ্জিত। ১০ নভেম্বর মালদায় আয়োজিত পদযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ পা মেলান। ১৪ নভেম্বর শিলিগুড়ি শহরে ৩ কিমি রাস্তা জুড়ে মতুয়া, নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের গোঁসাই, দল, দলপতি, মহিলা– সকলে মিলে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন। ১৫ নভেম্বর আলিপুরদুয়ার জেলায় জনসভা, প্রতিবাদ সভা এবং পদযাত্রার মাধ্যমে হাজার হাজার মতুয়া সমাজের মানুষ রাস্তায় নামেন।
১৬ নভেম্বর কোচবিহারে আয়োজিত কর্মসূচিতে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০ নভেম্বর নদিয়ার কল্যাণী শহরে প্রতিবাদ সভা ও পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচিতেও হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরেও মতুয়া, নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের হয়ে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন রঞ্জিত। ২৬ নভেম্বর এসআইআর ইস্যুতে বারাসাতে সাংগঠনিক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই কর্মসূচি থেকেও মতুয়াদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দেন রঞ্জিত। তিনি জানিয়েছেন, এক জন বৈধ ভোটারের নামও যেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যায়। তাঁর প্রতি ভরসা রেখে বিভিন্ন জেলায় এই সম্প্রদায়ের মানুষজন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেমেছেন।
উল্লেখ্য, মতুয়ারা হলেন ব্রাহ্মণ ধর্মের বিরোধী একটি সম্প্রদায়, যারা মূলত নমঃশূদ্র বর্ণের। মতুয়ারা ভারতের অন্যতম তফসিলি জাতি। ১৮৬০ এর দশকে হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারীরা তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুর জেলার ওড়াকান্দিতে (বর্তমানে বাংলাদেশে) একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ঠাকুরনগরে দ্বিতীয় আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথম দিকে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন ছিল। প্রাথমিকভাবে হরিচাঁদ ঠাকুরের বংশধরেরা মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। তবে ২০১১ সাল থেকে অনুসারীদের নিযুক্ত ট্রাস্টি মন্দিরটির দেখাশোনা করেন। প্রথম দিকে মতুয়া মহাসঙ্ঘ সরল আচার অনুষ্ঠান পালন করতেন। পরবর্তীকালে তাঁরা বৈষ্ণববাদে দীক্ষিত হন।
দেশ ভাগের সময় এবং তার পরে বিভিন্ন উৎপীড়নের কারণে ওপার বাংলা থেকে অনেক মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে চলে আসেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মতুয়াদের ভোটব্যাঙ্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই কারণে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে কোনও রাজনৈতিক দলই চাইছে না এই ভোটব্যাঙ্কের কোনও ক্ষতি হোক। তাই রাজ্যের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছে, এসআইআর পর্বে মতুয়াদের জন্য বিশেষ কোনও ব্যবস্থা করা হোক। মতুয়াদের নাম যাতে বাদ না যায় সেই আর্জিও জানিয়েছে। এই আবহে মতুয়াদের হয়ে মাঠে নেমে প্রতিবাদ কর্মসূচি করছেন লড়াকু নেতা রঞ্জিত সরকার।

Advertisement

Advertisement