মোবাইলে-মাউসে হাত ছোঁয়ালেই মমতা, শহরে গ্রামে পাত পাড়বেন জননেতারা

বিরােধী নেত্রী হিসেবে পথে নেমে আন্দোলন কিংবা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রশাসনিক বৈঠক- জনতার সঙ্গে সরাসরি যােগাযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিলই।

Written by SNS Kolkata | July 30, 2019 2:14 pm

উইপ্রাে এবং মাইক্রোসফট (File Photo: IANS)

জনসংযােগের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই প্রথম সারিতে তৃণমূল নেত্রী। বিরােধী নেত্রী হিসেবে পথে নেমে আন্দোলন কিংবা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রশাসনিক বৈঠক- জনতার সঙ্গে সরাসরি যােগাযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছিলই।

কিন্তু তা সত্ত্বেও হয়তাে বা জনসংযােগে ফাঁক থেকে গিয়েছিল। সেই ফাঁক গলেই বিজেপির ভােটের পালে জোর হাওয়া লেগেছে। যা বিজেপিকে একধাক্কায় দুই থেকে আঠেরােয় পৌঁছে দিয়েছে। জনসংযােগের সেই ফাঁক ভরাট করতে এবার প্রযুক্তির হাত ধরতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একদিকে মােবাইল কিংবা কম্পিউটারের হাত ছোঁয়ালেই নাগাল মিলবে মমতার। অন্যদিকে আগামী ১০০ দিনের মধ্যে তৃণমূলের ১০০০ জনপ্রতিনিধি, নেতা-মন্ত্রী, শহর থেকে ১০,০০০ গ্রাম ও শহরে মানুষের বাড়িতে গিয়ে সরাসরি জনসংযােগ করবেন। প্রয়ােজনে পাত পাড়বেন তাদের বাড়িতে। এমনকী রাতও কাটাবেন আমজনতার সঙ্গে, বুথকর্মীদের বাড়িতে।

সােমবার নজরুল মঞ্চে জনসংযােগের এই নতুন পদ্ধতির কথা জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমাে। এদিন তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারিদিকে ব্যানার, ফেস্টুনে মােড়া জায়গায় সাংবাদিক সম্মেলনের পরিবেশ ছিল পুরােপুরি কর্পোরেট স্টাইলের।

কালাে টি শার্ট আর নীল ডেনিম জিন্স পরা বিলি করেছেন ছাপানাে লিফলেট। যেখানে ছিল একটি ফোন নম্বর (৯১৩৭০৯১৩৭০) এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানা (www.didikebolo.com)। আমজনতার কোনও অভিযােগ কিংবা মতামত জানানাের দরকার হলে এই ফোন নম্বরে নিজের কথা দিদিকে বলা যাবে। বিকল্পে ওয়েবসাইটেও যােগাযােগ করা যাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। তিনি নিজেই এই কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন।

ইতিমধ্যেই নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে একটি গ্রিভান্স সেল তৈরি হয়েছে। কিন্তু নেতাদের টপকে যে কথা মুখ্যমন্ত্রীকে বলা সম্ভব হয়ে ওঠে না, সেই কথা সরাসরি ফোন করে বলা যাবে মুখ্যমন্ত্রীকে। এখানে মতামত এবং সমস্যা জানাতে গেলে নিজের নাম-ধাম, ফোন নম্বর, হােয়াটস অ্যাপ নম্বর এবং বিধানসভা কেন্দ্রের নাম জানাতে হবে।

আমজনতার সঙ্গে এভাবেই ‘দিদিকে বলাে’ কর্মসুচিতে জনসংযােগ বাড়াতে চান নেত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের মতাে এবার মমতাও ‘দিদিকে বলাে’ ওয়েবপথে প্রযুক্তিনির্ভর জনসংযােগের পথে হাঁটতে চাইলেন। যার মাধ্যমে আশি শতাংশ মানুষের কাছে মােবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে যােগাযােগ করতে পারবেন মমতা।

এই কর্মসূচিকে করপােরেটাইজেশন না বলে মর্ডানাইজেশন বলতে চান তৃণমূল নেত্রী।

অন্যদিকে এদিন দলীয় বিধায়ক, মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, লালবাতি গাড়ি চেপে আর গ্রাম শহরে ঘুরে বেড়ানাে নয়। এখন থেকে পাহাড়-জঙ্গল, গ্রাম-শহরে সরাসরি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযােগ করতে হবে নেতা মন্ত্রীদের। দরকার মতাে জনতার বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়া এমনকী রাত্রিবাস করেও তাদের কাছাকাছি পৌঁছতে হবে।

শােনা যাচ্ছে, তৃণমূলের রাজনৈতিক স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশােরের ফর্মুলা অনুযায়ীই জনসংযােগের এই নতুন স্ট্রাটেজি নিতে চাইলেন। কোন কোন নেতা কবে কোথায় যাবেন, সেকথা দলের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আগামী ২ আগস্ট থেকে জনপ্রতিনিধিরা এই নতুন পদ্ধতিতে জনসংযােগের কাজে নামবেন। শহর ও গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা শুনবেন। সাধ্যমতাে সমাধান দেবেন। গ্রামের অরাজনৈতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের বাড়িতে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে যােগাযােগ রাখবেন, বিভিন্ন গ্রামের মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এই জনসংযােগের কাজ ঠিকমতাে হচ্ছে তার নজরদারিতে পাঁচ সদস্যের একটা স্টিয়ারিং কমিটি তৈরি করা হবে। এই কমিটিতে থাকবেন সুব্রত বক্সি, ইন্দ্রনীল রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাম পিয়ারি রাম, ফিরহাদ হাকিম।

দলের একদম তৃণমূল স্তরে গিয়ে এভাবে জনসংযােগ বাড়ানাের পথে হাঁটতে চলেছে তৃণমূল। সরাসরি মানুষের অভাব অভিযােগ শােনার পাশাপাশি গত আট বছরে তৃণমূল সরকারের উন্নয়নও জনতার কাছে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

আগামী ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এভাবেই জনসংযােগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখতে চাইলেন মমতা। যাতে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার আগে একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে থাকে। এবং এই কাজে সমস্ত দলকেই মমতা এবার কাজে লাগাতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।