ধর্মঘটী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি মমতার

রাজ্য জুড়ে নির্বাচন উত্তর দাঙ্গার কেন্দ্রবিন্দু এখন সরে গিয়েছে সরকারি হাসপাতাল চত্বরে।

Written by SNS Kolkata | June 14, 2019 4:36 pm

এসএসকেএম হাসপাতালে রোগীদের সাথে কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

রাজ্য জুড়ে নির্বাচন উত্তর দাঙ্গার কেন্দ্রবিন্দু এখন সরে গিয়েছে সরকারি হাসপাতাল চত্বরে। এনআরএস চত্বরে জুনিয়র ডাক্তারদের ওপর নিগ্রহের জেরে সােমবার থেকে রাজ্যজোড়া কর্মবিরতির জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা পাচ্ছে না অসুস্থ রােগীরা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্যের ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশন (আইএমএ)-এর সভাপতি নির্মল মাঝি শুরুতেই এনআরএস-এ গেলেও পরিস্থিতি আয়ত্বে আসেনি। বরং অবস্থানে বসা ডাক্তারদের আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে অসুস্থ রােগীদের হায়রানি।

এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার নবান্নে আসার আগে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়ে ধর্মঘটী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চার ঘন্টার মধ্যে কাজে যােগ না দিলে, হস্টেলে আর জায়গা দেওয়া হবে না বলেও বার্তা দেন। প্রয়ােজনে এসমা (এসেন্সিয়াল সার্ভিসেস মেনটেনান্স অ্যাক্ট) জারি করার কথাও বলেন মমতা।

পরে অবশ্য তিনি সিনিয়র ডাক্তারদের গরিব রােগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও তিক্ততার বরফ গলেনি। বরং আন্দোলন সর্বভারতীয় রূপ নেয়। মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকাকে হিটলারি আখ্যা দিয়ে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন মুকুল রায়।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর এসএসকেএম হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকেই ডাক্তারদের অবস্থান ধর্মঘটের রীতিমতাে সক্রিয় আন্দোলনের রূপ নেয়। এমনকী এই রাজ্য ছাড়িয়ে এইমস-এর ডাক্তাররাও এই আন্দোলনকে সমর্থন জানানােয় তা ক্রমশ সর্বভারতীয় রূপ নেয়।

আন্দোলনের গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখতে নবান্নে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব বৈঠক করেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী ফেসবুক পােস্টের মাধ্যমে, পুনরায় রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক করার জন্য আবেদন রাখেন।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বেলা বারােটার নাগাদ এসএসকেএম-এ পা রাখামাত্র তাঁর কাছে অসহায় অবস্থা জানানাের জন্য ছুটে আসেন চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়া অসহায় রােগী ও তাঁর আত্মীয়জনেরা। মুখ্যমন্ত্রী যখন তাদের কথা শুনছিলেন, তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে শুরু করেন অবস্থান ধর্মঘট করা ডাক্তাররা।

ডাক্তারদের দাবি, যারা রবিবার ডাক্তারদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করেছিলেন, তাদের জামিন অযােগ্য ধারায় গ্রেফতার চাই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সেদিনের ঘটনার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু তার পরেও কেন আন্দোলন হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রবিবারের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বলছে দু’তরফেই মারামারি হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এটা ঘটেছে। এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন একটা ইনজেকশন দেওয়ার পরে একজন রােগী মারা গেলেন, সেটাও তাে দেখতে হবে।

তদন্তের রিপাের্ট সবার সামনে আনা হবে। কিন্তু তার জন্য ডাক্তারা কেন হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করবে? ডাক্তাররা কী ভেবেছেন? কাদের বুদ্ধিতে এই আন্দোলন করছেন ডাক্তাররা। সেনাবাহিনীর কেউ মারা গেলে কি সেনারা তাদের কাজ বন্ধ করে দেন? পুলিশ কোনও এনকাউন্টারে মারা গেলে কি তাঁরা তাদের ডিউটি করেন না। তাহলে ডাক্তাররা কেন পরিষেবা বন্ধ করে দেবেন? ডাক্তাররা এমার্জেন্সি সার্ভিসের আওতায় পড়েন। তারা এভাবে পরিষেবা বন্ধ করে দিতে পারেন না।

তাছাড়া এনআরএস-এ যেদিন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে পাঠানাে হয়, সেদিন মুখ্যমন্ত্রী নিজে কথা বলতে চেয়েছিলেন ধর্মঘটীদের সঙ্গে। কিন্তু তাঁরা কথা বলতে চাননি। তাই মুখ্যমন্ত্রীর মতে, এই আন্দোলনের সঙ্গে বহিরাগত যােগ রয়েছে। এমনকী বিজেপি ও বামফ্রন্টের রাজনৈতিক মদতেই এই আন্দোলন হচ্ছে বলেই মনে করছেন মমতা।

এদিন মমতা অবস্থান-ধর্মঘট করা ডাক্তারদের অবিলম্বে কাজে যােগ দিতে বলেন। তা না হলে তাঁদের কোনও দায়িত্ব সরকার নিতে পারবে না বলেও জানিয়ে দেন। চার ঘন্টার মধ্যে কাজে যােগ না দিলে সরকারি ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলেও বার্তা দেন।

পরে অবশ্য তিনি এসএসকেএম-এর সিনিয়র ডাক্তারদের কাছে চিঠি লিখে জানান, তাঁরা অসুস্থ রােগীদের যত্ন নিলে বাধিত থাকব। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠিতে সহমর্মিতার অভাব রয়েছে। এই যুক্তিতে ধর্মঘটী ডাক্তারদের আন্দোলন আরও তীব্র আকার নেয়। সাগরদত্ত হাসপাতালে ডাক্তাররা গণ ইস্তফা দিতে থাকেন। জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থন জানান বহু জায়গার সিনিয়র ডাক্তাররাও। বিকেলের দিকে ফের অশান্ত হয়ে ওঠে এনআরএস চত্বর। সেখানেও বহিরাগতরা ঢুকে ধর্মঘটীদের ওপর হামলা চালায় বলেও অভিযােগ উঠেছে। এমনকী পুলিশও পরিস্থিতি পুরােপুরি সামাল দিতে পারেনি। পরিস্থিতির চাপে পড়ে দিনের শেষের ইস্তফা দেন এনআরএস-এর সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় এবং এমএসভিপি শৈবাল মুখােপাধ্যায়।