হার মানলেন হার-না-মানা নেত্রী মমতা

তৃণমুলের বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ হল না। উল্টে বিজেপি দুই থেকে পৌছে গেল একেবারে দুই অঙ্কে। রাজনীতির অঙ্কে বােধ হয় এরকম অপ্রত্যাশিত ফলই হয়।

Written by Madhuchanda Chakraborty Kolkata | May 24, 2019 1:42 pm

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

তৃণমুলের বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ হল না। উল্টে বিজেপি দুই থেকে পৌছে গেল একেবারে দুই অঙ্কে। রাজনীতির অঙ্কে বােধ হয় এরকম অপ্রত্যাশিত ফলই হয়। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় শুধু কেন্দ্র কেন, রাজ্যে বিজেপির প্রােগ্রেস রিপাের্টে এরকম ফলের জন্য হয়তাে বা প্রস্তুত ছিলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবু হার মানতেই হল, হার না মানা লড়াকু নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

রাজ্যে এবার গেরুয়া ঝড়ে বহু জায়গায় প্রায় উড়ে গেল ঘাসফুল। তা সত্ত্বেও এদিন অবশ্য তৃণমূল নেত্রীকে রাজনৈতিক সৌজন্য জানাতে দেখা গেল। এদিন বিজেপির নাম না করলেও টুইটারে জয়ীদের অভিনন্দন জানালেন মমতা। একইসঙ্গে অনুগামীদের মনােবল জোগাতে দার্শনিক তত্ত্বের অবতারণা করে বললেন, হার মানেই পরাজয় নয়। ‘লুজার্স আর নট লুজার্স।’ পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করার পর স্কুলের দিদিমণিরা যেমন বলতেন। ‘ফেলিওর ইজ দ্য পিলার অফ সাকসেস।’ হেরে যাওয়া মানেই পরাজিত হওয়া নয়। একই সঙ্গে নেত্রী একথাও জানিয়ে দেন, এই হেরে যাওয়া নিয়ে পর্যালােচনা করা হবে। ইভিএম-এর ফলের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের ফল মিলিয়ে দেখা হবে।

বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার আগে যখন মমতা এই টুইট করছে, তখনও ভােটগণনা মাঝপথে। কিন্তু তখনই বােঝা হয়ে গিয়েছে, কী ঘটতে চলেছে। ততক্ষণে তৃণমূলের অর্ধেকের বেশি আসনে হেরে যাওয়ার ছবিটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবুও কোথাও একটা ক্ষীণ আশা ছিল, লড়াই করে উঠে আসা নেত্রী হয়তাে এই পরাজয়কে ‘স্পাের্টিং স্পিরিট’ নিয়ে মেনে নেবেন। বিশ্লেষণ করে জানাবেন কোথায় জয়, কোথায় পরাজয়।

সেইমতাে কালীঘাটে নেত্রীর বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের দীর্ঘ অপেক্ষা। এদিন তৃণমূল নেত্রীর বাড়ির সামনের চেনা ছবিটা একদম উধাও। মধ্যাহ্নেই ডেরেক ও ব্রায়েন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ফিরে গিয়েছেন। এদিন তৃণমূল নেত্রীর বাড়িতে নেতা মন্ত্রীর ভিড় নেই। নেই কর্মী সমর্থকদের ব্যস্ততা। নেই সবুজরঙা আবিরের ওড়াওড়ি। নেই টেলিভিশনে বা মােবাইলে চোখ রেখে মুহূর্তে মুহূর্তে ঘনঘন ভােটের ফল দেখে নেওয়া।

কালীঘাটের ৩০ বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের গলির মুখটা থমথম করছে। নিরাপত্তারক্ষীদেরও সেই অ্যাটেনশন হয়ে থাকার মুড নেই। পথচারীরা যে যার মতাে যাতায়াত করছে। কালীঘাট মন্দিরের দিকের রাস্তার ওপরে দিল্লি দখলের বার্তা দেওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্লেক্সটা তখন বাতাসে ঝাপট মারছে। এরই মধ্যে জনা কয়েক তৃণমূল সমর্থক দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে এবং প্রতীক গায়ে এঁকে হরিশ চ্যাটার্জির গলির মুখটায় এলেন বটে রাজ্যে তৃণমূলের এগিয়ে থাকা নিয়ে উল্লাস করতে, সেই উল্লাস ছিল উচ্ছাসহীন।

গায়ে আঁকা তৃণমূলের প্রতীকে গেরুয়া রংটাই বেশি করে চোখ পড়ছিল। এদিন বিকেল পর্যন্ত হরিশ চ্যাটার্জি স্টিটে গুটিকয়েক নেতা মন্ত্রী এসেছে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, রাজ্যসভার সদস্য শান্ত সেন– সকলেই সামান্য কিছুক্ষণ থেকে ফিরে গিয়েছেন। তখনও পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফলটা দাড়িপাল্লার মতে ওঠা নামা করছে।

একসময় তাে কুড়ি (তৃণমূল)-একুশ (বিজেপি)-এর ঘরে রীতিমতাে টানাপােড়েন চলছে দুই দলের। কে এগিয়ে যায়, কে পিছিয়ে যায়। অপেক্ষারত সাংবাদিকরাও ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন, এদিন আর সাংবাদিকদের মুখােমুখি হবেন না তৃণমূল নেত্রী মমতা। হলও তাই, বেলাশেষে খবর এল এদিন আর সাংবাদিক সম্মেলন হবে না।

লােকসভা নির্বাচনের দিনে কার্যত গৃহবন্দিই থাকলেন মমতা। শুধুমাত্র তৃণমূলের জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন টেলিফোনে। ফলপ্রকাশের আগের দিন বুধবার রাতেই সিন্থেসাইজারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাজিয়েছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর– ‘আরাে বেদনা, আরাে বেদনা, প্রভু দাও মােরে আরও চেতনা।’ কে জানে, কোন বেদনা কোন চেতনা দেবে!