কিছু আবর্জনা বিজেপি নিয়েছিল বলেই ২০২১-এ তৃণমূলের ভালো ফল : অভিষেক

Written by SNS April 28, 2024 2:01 pm

আজ ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক

নিজস্ব প্রতিনিধি— আগামী ১৩ মে-এর চতুর্থ দফার নির্বাচনকে সামনে রেখে শনিবারের তীব্র তাপপ্রবাহকে উপেক্ষা করে বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানে জোড়া জনসভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়৷ বীরভূমের দুবরাজপুর হোক কিংবা বর্ধমান পূর্বের জামালপুর, উভয় স্থানের মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রকে আক্রমণ শনিয়েছেন অভিষেকের৷ বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে বিজেপির দশ বছরের ‘ট্রেলার’ কি সেটি স্পষ্ট করেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড৷ এরপরই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন সাধারণ মানুষের দিকে, “এরপরেও সিনেমা দেখতে চান?” সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাসে এবং প্রতিবার্তায় অভিষেক তাঁর প্রশ্নের জবাব পেয়ে গিয়েছেন সভাস্থল থেকেই৷ নিজের ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ এর প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক মনে করিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রের চুপ থাকাই প্রমান করে দিয়েছে যে বিজেপি বাংলায় পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে৷ বীরভূমের সভা থেকে তৃণমূলত্যাগী বিজেপি নেতৃত্বদের ‘আবর্জনা’ বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক৷ সেই প্রসঙ্গে কটাক্ষের সুরে অভিষেক বলেন, “আমি ধন্যবাদ দিচ্ছি বিজেপিকে৷ কিছু আবর্জনাকে ২০২১ সালে বিজেপি নিয়েছিল বলেই তৃণমূলের ফল এতো ভালো হয়েছিল৷” সেই সাথেই প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধরকেও আক্রমণ করেছেন অভিষেক৷ তিনি বলেন, “উনি সরকারের আবর্জনা৷ পাপ বাপকেও ছাডে় না৷ বিজেপির টিকিট পেয়ে উনি তারাপীঠে পুজো দিতে গিয়েছিলেন৷ মা সুবিচার করেছেন৷” বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী বদল হওয়া নিয়েও এদিন বিজেপিকে আক্রমণ অভিষেকের৷ তিনি বলেন, “যাঁরা প্রার্থী ঠিক করতে পারছেন না, তাদের নিয়ে আর কী বলব৷ এখনও কেউ জানে না এখানে প্রার্থী কে৷ ১৫ দিনে দু’বার প্রার্থী বদল৷ কাল দেখলাম দেওয়াল মোছা হচ্ছে৷ স্টিকার তোলা হচ্ছে৷ কী দুর্গতি! বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে বিজেপি৷”

বাংলার সংস্কৃতিকে বিজেপি বারংবার অপমানিত করে, বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলের এই অভিযোগ নতুন নয়৷ সেই কারণেই বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী’ এবং ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষও করে তৃণমূল৷ এবার সেই প্রসঙ্গেই সরব হন অভিষেক৷ তাঁর ভাষায়, যেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য শান্তিনিকেতনকে গোটা বিশ্ব চেনে সেই শান্তিনিকেতনের ফলক থেকে কবিগুরুর নাম মুছে দিয়েছে এই বিজেপি সরকার৷ অমর্ত্য সেনের বাড়ির ওপরও অধিকার ফলাতে চেয়েছিলো বিজেপি৷ বিবেকানন্দকে অপমান করা থেকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে এই বিজেপির সরকারই৷ “তৃণমূল তার শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে”, দৃঢ় কণ্ঠে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে এমন বার্তাই দেন যুবরাজ৷ দুই সভা থেকেই ১৩ মেকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে উল্লেখ করেন তৃণমূল সেনাপতি৷ তিনি বলেন, “২০১১ এর ১৩ই মে বাংলার মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় এনে ৩৪ বছরের বামেদের অপশাসনকে উৎখাত করে পরিবর্তনের চাকা ঘুরিয়েছিল৷ ঠিক সেভাবেই ২০২৪ এর ১৩ই মে মানুষ ভোটদানের মাধ্যমে বিজেপিকে ক্ষমতাচু্যত করবে৷” বীরভূমের সভা থেকে রাজ্য বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে অভিষেক বলেন, “বীরভূমে ২০০০ বুথের মধ্যে একটা বুথে যদি বিজেপির কোনো নেতা একজন যুবক যুবতীর হাতে কর্মসংস্থানের নিয়োগপত্র তুলে দেয় বা একটা গ্রামের জন্য যদি দশ পয়সা কেন্দ্র থেকে নিয়ে আসে সেটি দেখান, তাহলে আমি মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবো না৷”

চাকরি বাতিল নিয়ে আগেও মুখ খুলেছিলেন অভিষেক৷ বিচারব্যবস্থার একাংশ বিজেপির দ্বারা প্রভাবিত, এমনই দাবি করেছিলেন অভিষেক৷ এবার নাম না করে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “যাঁরা বসে চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছে তাঁরা আজ বিজেপির প্রার্থী৷ যাঁরা আমার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে লাগিয়েছিল তাঁরা আজ বিজেপির প্রার্থী৷ বিজেপি বলে ছিল বোম ফাটাবো৷ কি বোম ফাটল? প্রায় ছাব্বিশ হাজারের চাকরি বাতিল হলো৷ তর্কের খাতিরে মেনে নিচ্ছি কিছু লোক দুর্নীতি করেছেন৷ অন্যায় করেছেন৷ কিন্ত্ত ওই ২৬ হাজারের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ মেধাবী৷ একদিকে মমতা বন্দোপাধ্যায় চাকরি দিচ্ছেন, অন্যদিকে বিজেপি চাকরি খাচ্ছে৷

একদিকে মুখ্যমন্ত্রী টাকা দিচ্ছে, অন্যদিকে বিজেপি টাকা খাচ্ছে৷” এদিন জামালপুরের সভা থেকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, “কেন্দ্রের সরকার বদলাতে চলেছে শুধু সময়ের অপেক্ষা৷ ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসবে তার মূল চালিকা শক্তি হবে তৃণমূল কংগ্রেস৷ ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করলেই গরিব পরিবার বছরে গ্যাস সিলিন্ডার পাবেন বিনামূল্যে, লক্ষীর ভান্ডার পাবে গোটা ভারতের মহিলারা৷” পাশাপাশি আক্রমণ শানিয়েছেন বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারকেও৷

অসীমের উদ্দেশ্যে অভিষেক বলেন, “কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায় বিচার মন্ত্রলয় রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছে, ২০১৭ সালে তপশিলি জাতি, উপজাতি মানুষের ওপর প্রায় ৪৩ হাজার অপরাধের ঘটনা ঘটেছিলো৷ ২০২০-২১ এ সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার৷ এই অপরাধের শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ৷ এরপর রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার৷ হরিণঘাটার বিধায়ক, তাঁকে পাঠিয়েছে বর্ধমান পূর্বে! অসীম সরকারকে জিজ্ঞেস করবেন কেন তপশিলি জাতি, উপজাতি মানুষের ওপর হওয়া অপরাধ বিজেপি শাসিত রাজ্যে বেশি?” এদিন অভিষেক গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলা থেকে বিজেপি হঠানোর বার্তা দেন সাধারণ মানুষকে৷ তাঁর ভাষায়, “প্রথম দফায় মাথা ভেঙেছি, দ্বিতীয় দফায় ঘাড় ভেঙেছি, তৃতীয় দফায় কোমর ভাঙবো আর ১৩ তারিখ আপনাদের ভোট, পা টা আপনারা ভাঙবেন৷ বোতাম এমনভাবে টিপবেন যেন দিল্লিতে ভূমিকম্প হয়৷” পাশাপাশি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে বলেন, “পূর্ব বর্ধমানের উন্নয়নের দায়ভার আমি আমার কাঁধে নিয়ে যাচ্ছি কথা দিলাম৷” এখানেই শেষ নয়, আজ নিজ কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের সাতগাছিয়ায় জনসভা করবেন অভিষেক৷ নিজ কেন্দ্র থেকে তিনি কি বার্তা দেন এখন সেই দিকেই তাকিয়ে বাংলা৷