নজিরবিহীন ভাবে আচার্য ছাড়াই সমাবর্তন যাদবপুর

মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সাক্ষী রইল এক বেনজির ঘটনার। আচার্য তথা রাজ্যপাল ছাড়াই সমাবর্তন হয়ে গেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Written by SNS Kolkata | December 25, 2019 7:22 pm

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। (File Photo: IANS)

মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সাক্ষী রইল এক বেনজির ঘটনার। আচার্য তথা রাজ্যপাল ছাড়াই সমাবর্তন হয়ে গেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রবল ছাত্রবিক্ষোভের মধ্যে পড়ে আমন্ত্রিত রাজ্যপাল প্রবেশই করতে পারলেন না বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এই পরিস্থিতির জন্য যাদবপুরের উপাচার্যকেই দায়ী করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকেও বিধলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্য। ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল পনেরাে দিনের মধ্যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন। আলােচনায় বসতে অনুরােধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। 

সােমবার যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাের্ড মিটিং-এ গিয়েই ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। কিন্তু সেদিন তাঁকে মেজাজ হারাতে দেখা যায়নি। বরং তিনি যাদবপুরের পড়ুয়াদের আলােচনায় ডেকে, তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবার কথা জানিয়ে শান্ত করেছিলেন পড়ুয়াদের। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে যাদবপুরের বার্ষিক সমাবর্তনে যােগ দিতে এসে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন আচার্য জগদীপ ধনকড়। যাদবপুরের পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করতে গেলে প্রথমে তাঁকে আটকে দেয় তৃণমূল সমর্থিত শিক্ষাকর্মী সংগঠনের সদস্যরা। কালাে পতাকা দেখানাে হয় রাজ্যপালকে। গাে ব্যাক ধবনি দিতে থাকে যাদবপুরের পড়ুয়ারা। রাজ্যপালের গাড়ি আটকে যায়। বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে গেট থেকেই রাজ্যপাল উপাচার্যকে ফোন করে পরিস্থিতি জানান। কিন্তু আচার্যকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে। ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল সমাবর্তন বন্ধ করে দিতে বলেন। প্রায় দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর রাজভবনে ফিরেই যান রাজ্যপাল। ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল টুইটে লেখেন, ‘আই অ্যাম শকড অ্যান্ড সারপ্রাইজড। 

এদিকে ‘নো এনআরসি’ ব্যাজ পরে বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যােগ দেয় পড়ুয়ারা। সমাবর্তনের মঞ্চে শুন্যই পড়ে থাকে রাজ্যপালের জন্য নির্দিষ্ট আসন। আচার্য জগদীপ ধনকড়কে ছাড়াই শুরু হয়ে যায় বার্ষিক সমাবর্তনের অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে উপাচার্যের হাত থেকে স্বর্ণপদক ও শংসাপত্র নিতে ওঠে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শীর্ষস্থানাধিকারী ছাত্রী দেবস্মিতা চৌধুরী। তারপর দর্শকদের দিকে ফিরে সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিলিপি ছিড়ে ফেলে দেবস্মিতা। জনবিরােধী ও সাম্প্রদায়িক আইনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে প্রশ্ন করতে চায় সে। বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও উত্তাল হয়ে ওঠে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আজাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। 

এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে যাওয়ার পরে একের পর এক টুইট করতে থাকেন রাজ্যপাল। তাঁর আক্রমণের তির ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দিকে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য উপাচার্যের কোনও সদর্থক ভূমিকা ছিল না। আমার নির্দেশ সত্ত্বেও বিধি না মেনেই সমাবর্তন ডাকলেন উপাচার্য। রাজ্যপাল প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঘটতে পারে? কর্তৃপক্ষ কিছুতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। কীভাবে উপাচার্য নীরব দর্শকের ভূমিকায় রইলেন? নানা অছিলায় দায় এড়িয়ে গেলেন? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এই আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার অবস্থা গােটা শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকারক বলে টুইটে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৩ জানুয়ারি সকাল এগারােটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠকে ডেকে পাঠিয়েছেন আচার্য তথা জগদীপ ধনকড়। যদিও সরকার না চাইলে, উপাচার্যরা আদৌ রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে যােগ দিতে পারবেন কিনা এই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। 

রাজ্যপাল এদিন জানিয়েছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীও উদীসান হয়ে থাকতে পারেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইভাবে অশান্তি মাথা চাড়া দেওয়ার বিষয়টি তারও দেখা উচিত। মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় রাজ্যপাল শুধু উপাচার্যের ওপরই ক্ষোভ উগরে দেননি। বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে আক্রমণের নিশানা করেছে রাজ্য সরকারকেও। জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনায় আমি মর্মাহত। এক্ষেত্রে যাদবপুরের উপাচার্যকে নেপথ্যে থেকে চালনা করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যপালের অভিযােগ, রাজ্যের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মসুচি কোনও কারণ ছাড়াই স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। অথচ আচার্য হিসেবে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি তাঁকে জানানাে উচিত ছিল। 

পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, সেখানে অদুর ভবিষ্যতে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর রাজ্য সকারের আর কোনও নিয়ন্ত্রণই থাকবে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ই হােক বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়– তাদের যে কোনও কর্মসুচি নির্দিষ্ট করা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিবকে জানিয়ে। এমনকী আচার্য তথা রাজ্যপালকেও উপাচার্যের সঙ্গে যােগাযােগ রাখতে হচ্ছে উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিবের মাধ্যমে। রাজ্য সরকারের হাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রিমােট কন্ট্রোল থাকছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইভাবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাম্য নয় বলেই মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল।