বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দেওয়া রক্ষাকবচ প্রত্যাহার করে নিল হাইকোর্ট। এবার থেকে বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা যাবে। এফআইআর দায়ের করতে আর আদালতের অনুমতি লাগবে না। যদিও বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর বেঞ্চ বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৫টি এফআইআর বাতিল করে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা চারটি মামলায় রাজ্য সরকার এবং সিবিআইকে যৌথ ভাবে সিট গঠন করে তদন্ত শুরু করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ বিরোধী দলনেতাকে রক্ষাকবচ দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত শুভেন্দু অধিকারীকে এই রক্ষাকবচ দিয়েছিল। রাজ্য পুলিশের দায়ের করা ২৬টি এফআইআরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। এফআইআর করতে গেলে আদালতের অনুমতির নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নানারকমের বহু অভিযোগ উঠলেও আদালতের অনুমতি না থাকায় এফআইআর দায়ের করা সম্ভব হয়নি।
Advertisement
বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ একের পর এক এফআইআর করছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা। ছোট বড়ো যে কোনও ঘটনার সঙ্গে তাঁর নাম জড়ানো হচ্ছে বলেও আদালতে জানান। এফআইআরগুলিকে ভুয়ো বলে উল্লেখ করে ২০২১ এবং ২০২২ সালে দু’বার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই সময়ে বিচারপতি মান্থা এফআইআরগুলিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন। আদালতের অনুমতি ছাড়া নতুন করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রক্ষাকবচের বিরুদ্ধে আদালতে যায় রাজ্য। তবে শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে হাই কোর্টের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেনি। শুনানি শেষে শুক্রবার রায়দান ছিল।
Advertisement
বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বলেন, শুভেন্দু অধিকারীকে যে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছিল, তা ছিল অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ। কোনও অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশই অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। তাই সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এরপরও শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ১৫টি মামলা খারজি করে দেয় আদালত। মানিকতলা-সহ মোট পাঁচটি মামলায় সিবিআই এবং রাজ্যের যুগ্ম সিট গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুভেন্দুর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘বিচারপতি সেনগুপ্ত অধিকাংশ এফআইআর বাতিল করে দিয়েছেন। চার-পাঁচটি এফআইআর শুধু বাতিল করা হয়নি। আদালত জানিয়েছে, সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশের সিনিয়র অফিসারদের নিয়ে সিট গঠন করতে হবে। তাঁরা ওই মামলাগুলির তদন্ত করবেন। আগের মামলাগুলির নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। তাই একে ঠিক রক্ষাকবচ প্রত্যাহার বলা চলে না।’
ছাব্বিশের আগে উচ্চ আদালতের এই রায়ে কিছুটা হলেও অস্বস্তি বাড়াল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর। আদালতের এই রায়ে কিছুটা হলেও শুভেন্দু অধিকারী চাপে পড়বেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছেন। এবার তাঁর বিরুদ্ধে জমে থাকা অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ করতে পারবে রাজ্য সরকার।
মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার মামলা আগামী দিনে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের অস্ত্র হতে চলেছে বলে মনে করছেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। রাজ্য সরকারের শুক্রবার শুনানিতে সওয়াল করেন আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রায়ের পর তিনি বলছেন, ‘বিরবাহা হাঁসদা যে অভিযোগ করেছিলেন, সেই মামলায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপ করতেই পারে। তাতে কোনও বাধা নেই।’
আদিবাসী সমাজের জনপ্রতিনিধি হলেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। শুধু বীরবাহা হাঁসদা নন, গোটা আদিবাসীদের অপমান করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। হাইকোর্টের রক্ষাকবচের জন্যই এসটি-এসসি আইনের মামলায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারেনি রাজ্য সরকার। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পুরনো মন্তব্য সমাজমাধ্যমের প্রচার করতে চাইছে শাসক দল।
Advertisement



