• facebook
  • twitter
Wednesday, 30 July, 2025

বীরভূমের দুটি পরিবারকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করল দিল্লি পুলিশ

চার পুরুষ ধরে বাংলায় বসবাস

মোদী জমানায় বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে চলছে একের পর এক তুঘলকি কাণ্ড! বিজেপির শাসিত ওড়িশার পর এবার বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি তকমা দিল্লিতেও। শুধু তাই নয়, চার পুরুষ ধরে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী ওই দুই পরিবারকে সটান বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছে দিল্লি পুলিশ। দানিশ শেখ, তাঁর স্ত্রী সোনালি বিবি ও তাঁদের পাঁচ বছরের শিশুপুত্রকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। একইভাবে পুশব্যাক করা হয়েছে সুইটি ও তাঁর দুই সন্তানকেও। তাঁদের সকলের বাড়ি বীরভূম জেলার মুরারইয়ের পাইকরে।

প্রসঙ্গত, মুরারইয়ের পাইকর গ্রামের দুটি পরিবারের মোট ছয়জনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশি তকমা দিয়ে পুশব্যাক করা দানিশ ও সুইটির পরিবারের সদস্যরা গত চার পুরুষ ধরে বসবাস করছে বীরভূমে। চার প্রজন্ম ধরে তাঁদের জন্ম বীরভূমের পাইকরেই। তবু কেন তাঁদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন পাইকরের বাসিন্দারা।

এই ঘটনার জেরে অথৈ জলে পড়েছেন এই দুই পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং আত্মীয়রা। দানিশের শ্যালিকা রোশনি বিবি বলেন, ‘আমার দিদি, জামাইবাবু, আর পাঁচ বছরের ভাইপো, কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।’ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সুইটি বিবির মাসি লুৎফা বিবিও। তিনি বলেন, ‘এত কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ওদের পুশব্যাক করা হয়েছে, এখন আমরা কী করব?’

বাংলার শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম বিপদে পড়া এই দুই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সামিরুল বলেন, ‘বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের এভাবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া নিছক অমানবিক নয়, এটা দেশের নাগরিকত্বের ধারণার উপরেই আঘাত। বিজেপি সরকার বুঝতেই চাইছে না যে, এঁরা সবাই প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক।’ তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা এই দুই পরিবারকে সম্পূর্ণ আইনি সহায়তা দেবেন। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ওই দুই পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।

জানা গিয়েছে, ১৮ জুন এই দুই পরিবারকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে দিল্লির রোহিনী জেলা পুলিশের কেএন কাটজু থানা। এরপরই ধৃতরা মুরারইয়ের পাইকর গ্রামে তাঁদের বাড়িতে খবর দিয়ে জানান, পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা দিল্লি রওনা হন। সেখানে থানায় পৌঁছেও কোনও কাজ হয়নি। পুলিশ জানায়, ধৃতদের বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেওয়া হয়েছে। কোন এলাকা দিয়ে তাঁদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়, তা জানানো হয়নি। দানিশ ও সুইটির পরিবারের দাবি, তাঁদের কাছে ভারতের বৈধ আধার, ভোটার, রেশন কার্ড রয়েছে। সব কিছু থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও কিছু যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিয়েছে।

পাইকর-১ গ্রামপঞ্চায়েতের উপ-প্রধান শামিমা বিবি জানিয়েছেন, দুই পরিবারই এখানে চার পুরুষ ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাঁদের চার পুরুষের বংশ তালিকাও রয়েছে তাঁর কাছে। তা সত্ত্বেও ওরা বাংলাদেশি হল কীভাবে?

উল্লেখ্য, পাইকর গ্রামের দর্জিপাড়ার বাসিন্দা দানিশ। সেখানেই তাঁর চার পুরুষের ভিটে রয়েছে। নিতান্ত দরিদ্র পরিবার। তাঁদের দিন আনি দিন খাওয়া অবস্থা। দানিশের বাবা মুন্না শেখ। তিনি পেশায় একজন কৃষক। পেটের তাগিদে গত বছর দশেক আগে দিল্লিতে যান দানিশ। সেখানে রোহিনীর ২৬ নম্বর সেক্টরের বাঙালি বস্তিতে থাকতেন। ভাঙা জিনিসপত্র কুড়ানো ও পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচা করেই সংসার চলত তাঁদের। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন সুইটি বিবি ও তাঁর দুই সন্তান। তাঁর বাড়ি পাইকরের হাসপাতালপাড়ায়। গত পাঁচ বছর ধরে দিল্লিতে রয়েছে সুইটির পরিবার। তাঁর স্বামী গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ। সুইটির বাবা সাইফুল শেখও পেশায় একজন চাষি। পাঁচ বছর আগে সুইটিও পেটের তাগিদে দিল্লিতে যান। তিনি সেখানে পরিচারিকার কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি পাইকর হাসপাতালপাড়ায়। সেখানে সুইটির শাশুড়িও থাকেন।