আসানসোলের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করল সিপিএম। মুর্শিদাবাদের এক মহিলা নেত্রীকে সমাজমাধ্যমে নানা কুরুচিকর বার্তা পাঠানোর অভিযোগ ছিল বংশগোপালের বিরুদ্ধে। রবিবার ব্রিগেডের সভা শেষের পরেই ওই পোস্টগুলি ভাইরাল হয়েছে। এরপর দলীয় স্তরে তদন্ত করে বংশগোপালকে বহিষ্কারের পথে হাঁটল সিপিএম। শনিবার রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আনা হয়েছে আলিমুদ্দিনের তরফে। সিপিএমের রাজ্যস্তরের এক নেতা বলেন, ‘আমরা কোনওদিনই এই ধরনের ঘটনাকে দলের মধ্যে প্রশ্রয় দিইনি। ভবিষ্যতেও দেব না।’
ঘটনার সূত্রপাত গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের সময়। সেই সময় দলের ওই মহিলা নেত্রী ফেসবুকে পোস্ট করে অভিযোগ করেন, বংশগোপাল তাঁর সঙ্গে মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে অশ্লীল বার্তা আদানপ্রদান করেছেন। যদিও সেই সময় বিষয়টি নিয়ে দলীয় অন্দরে কানাঘুষো চললেও প্রকাশ্যে বড় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গত রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের পর ওই অশ্লীল চ্যাটের স্ক্রিনশট সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে বংশগোপালের পাল্টা দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
এরপর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘বিষয়টি দলের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর অভিযোগকারী মহিলা বলেন, ‘দলের হয়ে যে সমস্ত কাজ করে থাকি, তা ফেসবুকে পোস্ট করতাম। সেই সূত্রেই আলাপ বংশগোপাল চৌধুরীর সঙ্গে। প্রথমে উনি কমেন্ট করে উৎসাহ দিতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে পরিস্থিতি বদলে যায়। একদিন মধ্যরাতে বংশগোপাল নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে অশ্লীল মেসেজ শুরু করেন।’
এরপর ওই মহিলা প্রথমে দলের জেলা কমিটি, পরে রাজ্য কমিটির কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগকারিণীর দাবি, ‘গোটা বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করা হবে।’ এরপর সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে এই বিষয়ে চিঠিও দেন। সরব হন সোশাল মিডিয়ায়। এরপরই সিপিএমের নতুন সম্পাদক মণ্ডলীর বৈঠকে বংশগোপালকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে এক মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগ তন্ময় ভট্টাচার্যকে ৬ মাসের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।
এদিকে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত হয়ে দলের লোকজনের বিরুদ্ধেই আঙুল তুললেন প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। রবিবার রানীগঞ্জে নিজের বাড়িতে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রাক্তন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় লাগাতার কুৎসা করা হল। পার্টির তদন্তে আস্থা রেখেছিলাম। আর আমাকে দল থেকে বহিষ্কারের খবর আমিই জানতে পারলাম না। মধ্যরাতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এটা জানতে হল। তাহলে দলের শৃঙ্খলা কোথায়? আমি যে দল দেখেছিলাম, এখন আর সে দল নেই। আমি ট্র্যাপের শিকার। আমারই দলের লোকজন আমার বিরুদ্ধে ট্র্যাপ করল।’
বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর তৃণমূলও আমার বিরুদ্ধে ততটা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করেনি, যতটা চক্রান্ত করছে আমার নিজের দল আমার বিরুদ্ধে করেছে। যখন মন্ত্রী ছিলাম তখনও একটা অংশ চক্রান্ত করতেন। যখন সাংসদ ছিলাম তখনও আমার বিরুদ্ধে মহিলাঘটিত সাজানো ঘটনার চেষ্টা হয়েছিল। কলকাতা থেকে এসে এই জেলায় যাঁরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তাঁদের বিজেপির সঙ্গে তলে তলে আঁতাঁত রয়েছে। তাঁরা তোলাবাজ, সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত।’ অন্য দলে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিপিআই, তৃণমূল, নকশাল সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমি আপাতত সমাজের কাজ করে যাব।’