আম্ফানে তছনছ শহর, রাতভর নবান্নের কন্ট্রোল রুমে মুখ্যমন্ত্রী

প্রতিবারই ঝড়ের সরাসরি ধাক্কা থেকে বেঁচে গিয়েছে এই শহর। কিন্তু আম্ফানের তাণ্ডব একেবারে তছনছ করে দিল শহরকে।

Written by SNS Kolkata | May 21, 2020 1:00 pm

আম্ফানে তছনছ শহর। (Photo by Kazi Shanto / AFP)

আয়লা কিংবা ফণীর কিংবা বুলবুলের তাণ্ডব এতটা বিপর্যন্ত করতে পারেনি তিলোত্তমাকে। প্রতিবারই ঝড়ের সরাসরি ধাক্কা থেকে বেঁচে গিয়েছে এই শহর। কিন্তু আম্ফানের তাণ্ডব একেবারে তছনছ করে দিল শহরকে। রাস্তায় গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, দোকানের চাল উড়ে, শহর কলকাতাকে একেবারে নাড়িয়ে দিল আম্ফান। ২০ মে, ২০২০ আম্ফানের আগমনে তিন বিশের ছোবলে ঘায়েল হল কলকাতা।

বুধবার সকাল থেকেই গতি বাড়াচ্ছিল ঘূর্ণিঝড়। বেলা একটু বাড়তেই ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র বারিপতন শুরু হয়ে যায়। দুপুর আড়াইটার পর থেকেই পূর্ব ঘোষণামতো আম্ফানের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

বুধবার সকাল থেকেই নবান্নে কন্ট্রোল রুমে বসে গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই চব্বিশ পরগণা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসককে তিনি প্রতি মুহুর্তে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে যে সব অঞ্চলে ঝড়ের দাপট বেশি হব, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন আম্ফানের লেজের ঝাপটাতেই সবচেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বলেন এই ঘূর্ণিঝড় একটি বিশাল স্ট্রাকচার। এর মধ্যে রয়েছে চোখ বা আই অংশ। তার বাইরে ওয়াল ক্লাউডের আস্তরণ। তার বাইরে থাকে আউচার পেরিফেরি। প্রথমে ফরওয়ার্ড সেকশন যাওয়ার পর আই অংশ উপকূলে হিট করবে। তারপর শেষ অংশটা আছড়ে পড়বে মাটিতে। আবহবিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী মাঝরাত পর্যন্ত তাণ্ডব চলবে আস্ফানের।

বুধবার সকালে যেটুকু দোকানপাট খোলা ছিল, বেলা বাড়ার আগেই তা বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর থেকেই হাওয়ার গতিবেগ বাড়তে থাকে। তিনটে থেকে কলকাতায় রাজপথেই হাওয়া সোঁ সোঁ আওয়াজ শুনে সমুদ্র গর্জনের মতো মনে হয়েছে। বিকেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ও বৃষ্টির দাপট পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিভিন্ন রাস্তায় বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছে।

কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নিউ আলিপুর, হেস্টিংস, ময়দান, পশ্চিম বন্দর, বালিগঞ্জ, চিৎপুর, কসবা, চেতলা, শেক্সপীয়র সরণী, হরিদেবপুর, একবালপুর, উল্টাডাঙা ইত্যাদি অঞ্চলে বহু গাছ ঝড়ে পড়ে গিয়েছে। কোথাও কলকাতা পুরসভা এবং কোথাও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পক্ষ থেকে এই গাছ সরানোর কাজ করা হয়েছে।

বুধবার শহরে হাওয়ার দমক ঘন্টায় একশ কিলোমিটারেরও বেশি হয়েছে। উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, মধ্য কলকাতার চাদনি চক, ম্যাডান স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ’এর বেশ কিছু জায়গায়, লোটাস সিনেমার কাছে বড় বড় গাছ উপড়ে গিয়েছে। নিউ মার্কেট অঞ্চলে রাস্তার ওপরের একসঙ্গে সংলগ্ন দোকানগুলির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের কাছে গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় গড়িয়াহাটে উলটে যায় ট্রাফিক সিগনাল। বহু জায়গায় ছিড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের তার। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্র এদিন আম্ফান তার তাণ্ডব চালিয়েছে।

আম্ফানের জন্য শহরের উড়ালপুলগুলিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল দুপুর থেকেই। বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে বুধবার আগে থেকেই শহরের চার হাজার মানুষকে বিপজ্জনক বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নিকটবর্তী স্কুল এবং কমিউনিটি হলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিপজ্জনক ও পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের। এমনকী ফুটপাতবাসীদেরও নিকটবর্তী স্কুল ও কমিউনিটি হলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিমানবন্দরের সমস্ত পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আম্ফানের প্রভাবে গঙ্গায় প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সময় কেউ যাতে গঙ্গায় না নামে সেজন্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটা দল পাহারা দিয়েছে। আর গাছ পড়লে তা সরানোর কাজেও নিযুক্ত থেকেছে এই বাহিনীর আর একটি দল।