অতনু রায়: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির নবনির্মিত ভবনের দারোদ্ঘাটন করার জন্য সঙ্গীতমেলাকেই বেছে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একতারা মঞ্চ থেকে বোতাম টিপে উদ্বোধন করলেন ভবনের। বিকেল ৫.০৫ মিনিটে হঠাৎ করেই রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গনে ঢুকে একতারা মঞ্চে পৌঁছোন মুখ্যমন্ত্রী।
সঙ্গে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির যুগ্ম কনভেনার ইমন চক্রবর্তী ও পন্ডিত দেবজ্যোতি বোস, শ্রীরাধা বন্দোপাধ্যায়, তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সচিব শান্তনু বসু সহ আরও কয়েকজন। বিকেল ৫:০৫ থেকে ৫:৫০। মাঝে ৪৫ মিনিটের জন্য হঠাৎই বদলে গেল নন্দন রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গন। একতারা মঞ্চ পরিণত হল মিলনমেলায়। প্রসঙ্গত, ডিসেম্বর ২৫ তারিখ থেকে চালু হওয়া সঙ্গীতমেলাতে চলবে ১ জানুয়ারি, ২০২৬ পর্যন্ত।
Advertisement
এদিন রবীন্দ্রসদন চত্বরকে কোনোরকম অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ফেলা হয়নি। সামান্য কয়েকজন পুলিশ, নিরাপত্তা রক্ষী। সারিবদ্ধভাবে তখন লোকসঙ্গীত ও লোকনৃত্যের শিল্পীরা গান-বাজনা-নাচ করছেন। চারদিক থেকে মানুষ আসছেন, ছবি তুলছেন। যেন পুজো পুজো ভাব। তারই মাঝে এসে উপস্থিত হলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী। লোকসঙ্গীত ও লোকনৃত্যের শিল্পীদের সঙ্গে পা মেলালেন মমতা, ইমন, শ্রীরাধা।
Advertisement
তারপর জনতায় মিশে গেলেন মমতা। চারিদিক থেকে ভেসে আসতে থাকলো মোবাইল ছবি শিকারিদের আনন্দের অভিব্যক্তি: ‘চারটে পরিষ্কার ছবি পেয়েছি! একদম সামনে থেকে তুললাম!’ অতর্কিতে এসে পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই আজকে তাঁর জন্য আলাদা কোনো চেয়ারের ব্যবস্থাও ছিল না। কয়েকদিন আগে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দুবার এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এবারের সঙ্গীতমেলায় এই প্রথম এলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী আজকে এলেন জনতার কাছে। পুলিশ, প্রশাসন, সংবাদকর্মীদের ভিড়ে তাঁকে দেখতে পাওয়া গেল না, তেমন অবস্থা নয়। সবাই তাঁকে দেখলেন, চেঁচিয়ে কথা বললেন, গান গাইতে বললেন। মঞ্চ থেকে মমতা আন্তরিক উত্তর দিলেন, যেমনটা করেন। ইমনকে গাইতে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ইমন জানান ওঁর গুরু মঞ্চের সামনে রয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে মমতা মঞ্চে ডেকে নেন ইমনের গুরু রাজকুমার রায়কে। ইমনের কাছে মমতার উপস্থিতিতে একতারা মঞ্চ যেন হয়ে উঠল অকাল গুরু পূর্ণিমার মঙ্গলসন্ধ্যা!
একতারা হাতে বাউল যাঁরা ছিলেন, হঠাৎ করে তাঁরা বলে উঠলেন, ‘দিদি আপনার সঙ্গে ছবি তুলব’। তাঁদের মঞ্চে ডেকে নিলেন। বললেন, তাড়াতাড়ি এসো। বাদ্যযন্ত্রী ভাইদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ’ বাজানোর। গাইবেন বাউল ভাই-বোনেরা। তাঁরা গাইলেন, সঙ্গ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জনতার আবদার, দিদিকেও গাইতে হবে। গলা খারাপের অজুহাতে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, সকলের জোরাজুরিতে গাইতেই হল।
গান, সিনেমা অনেকবার প্রতিবাদের সাক্ষ্য দিয়েছে বা হয়েছে স্বয়ং প্রতিবাদ। কোনোরকম পরিবেশ নষ্ট না করে, সঙ্গীতমেলার ছন্দপতন না ঘটিয়ে নাগরিক অধিকারের বার্তাও যেন দিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। জনতা গলা মেলালো তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে: ‘আমার এই দেশেতেই জন্ম, যেন এই দেশেতেই মরি! এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী, সে যে আমার জন্মভূমি’। ৪৫ মিনিট কাটিয়ে মমতা বেরিয়ে যাওয়ার পরেও যেন ঘোর কাটেনি অনেকের! শীতসন্ধ্যার ভিড়ের মধ্য থেকে যে কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার উঠে আসল, ‘জনসংযোগে মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী…শুধু মমতাই’।
Advertisement



