নিউ টাউনে ‘দুর্গা অঙ্গন’-এর শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শিলিগুড়িতে মহাকাল মন্দিরের শিলান্যাস করা হবে বলেও এদিন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘দুর্গা অঙ্গন’ বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ‘মিলন ক্ষেত্র’ হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি। মমতার কথায়, ‘বাংলার জন্যে এটি একটি ঐতিহাসিক দিন, বাংলার মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হল।’ আগামী ২ বছর অর্থাৎ ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই অঙ্গন তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা।
নিউটাউন বাস স্ট্যান্ডের ঠিক বিপরীতে, অ্যাকশন এরিয়া–ওয়ানে প্রায় ১৭ একরেরও বেশি জমিতে এই প্রকল্পের সূচনা করা হল। দিঘার জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের দায়িত্বে থাকা হিডকোই ‘দুর্গা অঙ্গন’ নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে। প্রশাসনিক কর্তাদের মতে, ভবিষ্যতে এই প্রকল্প রাজ্যের অন্যতম বড় পর্যটন ও সাংস্কৃতিক আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রসঙ্গেই ইউনেস্কোর কথা তোলেন।
Advertisement
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘জাতীয় উৎসব হিসেবে ইউনেস্কোর থেকে যে সম্মান পেয়েছি সেটা সংরক্ষিত রাখার জন্য, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য, দুর্গা অঙ্গন প্রয়োজন।’ এর স্থাপত্য সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দু’লক্ষ বর্গফুট এলাকায় তৈরি হবে এটি। মন্দিরে উঠোনেই এক হাজার লোক একসঙ্গে বসতে পারবেন।
Advertisement
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ‘দুর্গা অঙ্গন’ নির্মাণে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা। মন্দির চত্বরের চারপাশে ২০ ফুট চওড়া ঘোরার পথ করা হচ্ছে। ১ হাজার ৮টি স্তম্ভ থাকছে এবং মূল গর্ভগৃহের উচ্চতা হবে ৫৪ মিটার। মূল মণ্ডপ ছাড়াও সিংহদুয়ার ও অন্য মণ্ডপও থাকবে এই ‘দুর্গা অঙ্গন’-এ। এটি বিশ্বের বৃহত্তম দুর্গাঙ্গন হবে এবং এখানে প্রতিদিন যাতে এক লক্ষ ভক্ত আসতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মূল গর্ভগৃহের উচ্চতা হবে ৫৪ মিটার। মন্দির শাস্ত্রীয় রীতি মেনে এখানে ১০৮টি দেব-দেবীর মূর্তি থাকবে। ৬৪টি সিংহ মূর্তি থাকবে। মূল মন্দির ছাড়াও পবিত্র কুণ্ড, সিংহ দুয়ার থাকবে। এ ছাড়াও শিব, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের পৃথক মণ্ডপ থাকবে। এর পাশাপাশি একটি সাংস্কৃতিক মিউজ়িয়াম তৈরি করা হবে। পুরো ‘দুর্গা অঙ্গন’-এ প্রতিদিন এক লক্ষ পর্যটক আসার সুযোগ পাবেন। পুরো জায়গার হাজারেরও বেশি গাছ লাগানো হবে। রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি ট্রাস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই ট্রাস্ট এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দেখাশোনা করবে।
এতে কর্মসংস্থানের আশা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘দুর্গা অঙ্গন সংস্কৃতি ও ধর্মচর্চার একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। এতে স্থানীয় শিল্প, কর্মসংস্থান বাড়বে। পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে। কেনাবেচা বাড়বে।’ অনেক স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই নির্মাণকে কেন্দ্র করে আয়ের সুযোগ পাবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার নিউটাউনে দুর্গা অঙ্গনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান থেকেই বাংলার সব থেকে বড় মহাকাল মন্দিরের শিলান্যাসের দিনক্ষণের কথা জানান তিনি। মমতা বলেন, ‘একটা সুখবর দিই। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মহাকাল মন্দিরের শিলান্যাস করব। জমি আমি দেখে নিয়েছি। রেডি করে দিয়েছি। পুজোর দিন মনে মনে ঠিক করে ফেলেছি। ট্রাস্টের একটা মিটিং করে বাদ বাকিটা করতে হবে। টাকাও জোগাড় হয়ে গিয়েছে। আমি বাজে কথা কম বলি।‘
দুর্গা অঙ্গনের শিলান্যাস মঞ্চ থেকে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা ‘তোষণের রাজনীতি’-র অভিযোগেরও জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিন্ন ধর্ম মানেই ভিন্ন রীতি, আর সেই রীতিকে সম্মান জানানোই তাঁর রাজনৈতিক ও মানবিক বিশ্বাসের অংশ বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘সব ধর্মের আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে গেলে সেই নিয়ম মানতেই হবে।‘ এই মন্তব্যের মধ্য দিয়েই নাম না করে বিজেপিকে নিশানা করেন তিনি। একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অনেক সহ্য করা হচ্ছে, কিন্তু সহ্যেরও একটি সীমা আছে। তিনি বলেন, ‘আমি সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। সব ধর্মের সব অনুষ্ঠানে থাকি। কারণ, আমি মনে করি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।‘ তিনি আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘শিখদের অনুষ্ঠানে গেলে মাথায় কাপড় ঢাকি – তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলে না। তাহলে রোজায় গেলে আপত্তি কোথায়?’
ধর্মীয় তোষণের অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি এসআইআর নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত এক মাসে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু বা আত্মহত্যার খবর তাঁকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে বলে জানান তিনি। উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন ‘এসব আর সহ্য হচ্ছে না।‘ একই সঙ্গে রাজনৈতিক বার্তাও দেন তিনি। সহিষ্ণুতাকে দুর্বলতার সঙ্গে গুলিয়ে না ফেলার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘ধৈর্য ধরছি, সহ্য করছি। সহ্যেরও একটা সীমা থাকে। বাংলার মানুষ মাথা নত করে না।‘ ছাব্বিশের নির্বাচনকে মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর পরোক্ষ ইঙ্গিত, ‘প্রত্যেক মানুষের অধিকার রক্ষা করতেই হবে। যত বাধাই আসুক, সেই লড়াই চলছে এবং চলবে।‘
Advertisement



