বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডগোল নিয়ে মামলার শুনানি চলে। এদিন যাদবপুর কাণ্ডে উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। ‘পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। কোনও ঘটনায় অতি সক্রিয়, আবার কোনও ঘটনায় নিষ্ক্রিয় থাকছে পুলিশ।’ এই অভিযোগ নিয়ে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে একটি মামলা দায়ের হয় ছাত্রদের একাংশের তরফে। সেই মামলার শুনানিতেই বিচারপতির স্পষ্ট নির্দেশ, ‘ইন্দ্রানুজ রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে আজই (বুধবার) এফআইআর গ্রহণ করতে হবে পুলিশকে’। এক পক্ষের বয়ানের ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অপরপক্ষের বয়ান কোথায়? এই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতি। রাজ্যের রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতি ঘোষ। আগামী ১২ মার্চের মধ্যে রাজ্যের রিপোর্ট তলব করেছে আদালত।
বিচারপতি এদিন এজলাসে বলেন, ‘রাজ্যকে রাজ্যের মতো আচরণ করতে হবে’। যাদবপুর কাণ্ডে ছাত্রদের তরফে করা মামলায়, এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘এই ঘটনা সহজেই এড়ানো যেত। সাদা পোশাকে পুলিশ তো থাকেই। অনেক কাজই আপনারা করেন যেটার অনুমতি থাকে না। পুলিশের গা ছাড়া মনোভাবের জন্য এই বিপত্তি।’ বিচারপতির প্রশ্ন, ‘স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর আধিকারিকরা কেন থাকেন? এই মামলায় আমি স্পেশাল ব্রাঞ্চকেও যুক্ত করব।’ এই ঘটনা গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বিচারপতি ঘোষ। ব্রাত্য বসুর মিটিংকে কেন্দ্র করে যে এতবড় গোলযোগ বাধতে পারে, গোয়েন্দারা কি মন্ত্রীকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন? মন্ত্রী কি সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছিলেন? মন্তব্য বিচারপতির।
বিচারপতি বলেন, ‘এই সব এখন থেকে লিখিত আকারে হওয়া দরকার, নইলে পুলিশ সমস্যায় পড়বে।’ পরিস্থিতির কড়া সমালোচনা করে বিচারপতি বলেন, ‘নিরাপত্তা-প্রাপ্ত ব্যক্তির কাছাকাছি যদি বিক্ষোভকারীরা চলে আসেন সে ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো যেন না হয়। এটা যদি উদাহরণ হয় তাহলে কিন্তু গোটা রাজ্যে এটা ছড়িয়ে পড়বে।’ দু’পক্ষকেই দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন বিচারপতি। বিচারপতি বলেন, মানুষ একবার বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লে সামলাতে সময় লাগবে।
এছাড়া আদালত মনে করছে, ‘যদি কেউ সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে তাহলে সেটা লিখিত আকারে হতে হবে। সামনে ভোট আসছে, সমস্যা কিন্তু বাড়বে।’ এদিন হাইকোর্টে যাদবপুর কাণ্ডের শুনানিতে উঠল বাংলাদেশ প্রসঙ্গও। পড়শি দেশের ‘নৈরাজ্য’-এর উদাহরণ টেনে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। মনে করিয়ে দিলেন, এখানকার পরিস্থিতি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মতো যেন না হয়। কড়া হাতে রাশ ধরার পরামর্শ দিলেন বিচারপতি। আগামী ১২ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি।