আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই। এবার তাঁকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছেন প্রাক্তন সিআইএ আধিকারিক জন কিরিয়াকু। কিরিয়াকুর দাবি, ২০০১এর ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে হামলার পর মহিলার ছদ্মবেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন বিন লাদেন। এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে কিরিয়াকু একথা জানান।
কিরিয়াকুর দাবি, সেন্ট্রাল কমান্ডের অনুবাদক হিসাবে যিনি ছিলেন, তিনিই আল কায়েদার হয়ে গোপনে কাজ করছিলেন। তাঁকে বিশ্বাস করে ঠকে যায় মার্কিন সেনা। তিনি মার্কিন সেনার যাবতীয় গোপন তথ্য ফাঁস করে দিতেন। বিষয়টি সবার অজ্ঞাতসারে ঘটে চলেছিল। প্রাক্তন সিআইএ কর্তার কথায়, ‘অনুবাদক যে আসলে আল কায়েদার সদস্য, সেটা আমরা জানতাম না।আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে ঢুকে পড়ে। আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে লাদেনকে ধরে ফেলেছি। ওঁকে বলা হয়েছিল, পাহাড় থেকে চুপচাপ নেমে আসতে। কিন্তু অনুবাদকের মাধ্যমে লাদেন ভোর পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে বলেন। মহিলা এবং শিশুদের নিরাপদে বার করে দিয়ে উনি আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানান। আমাদের জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক্সকে এই পরিকল্পনায় রাজি করান অনুবাদক।’ রাতে মহিলা ও শিশুদের বেরিয়ে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু ভোরে টোরা বোরার পাহাড়ি গুহায় পৌঁছে আমেরিকার সেনাবাহিনী দেখে, সবাই পলাতক, সেখানে কারও চিহ্নমাত্র নেই। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নামতে হয়।
Advertisement
কিরিয়াকু দাবি করেছেন, রাতের অন্ধকারে মহিলার ছদ্মবেশে একটি ট্রাকের পিছনে চেপে আফগানিস্তান ছাড়েন লাদেন। অনুবাদকের বিশ্বাসঘাতকতার কথা যখন জানা গিয়েছিল, তত ক্ষণে সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা পাকিস্তানে প্রবেশ করে গিয়েছে। তাদের নাগাল আর মেলেনি। ১০ বছর পরে ২০১১ সালে ২মে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অ্যাবটাবাদে লাদেনের সেফ হাউসে অভিযান চালিয়ে লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন সেনা।
Advertisement
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে যে জঙ্গি হামলা হয়, তার মূল মাথা ছিলেন আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। হামলার পর মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে আল কায়েদার বিভিন্ন ডেরায় অভিযান চালায়। পূর্ব আফগানিস্তানের নাঙ্গারহার প্রদেশে অবস্থিত টোরা বোরা পাহাড়ে লাদেনকে হাতের মুঠোয় পেয়েও তাঁকে ধরা যায়নি। মহিলার ছদ্মবেশে মার্কিন সেনাকে বোকা বানিয়ে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন আল কায়েদা প্রধান। সেখানে ছিলেন ২০১১ সাল পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, এই টোরা বোরা সাফেদ কোহ পর্বতমালার অংশ যা পাকিস্তান সীমান্তের খুবই কাছে। এখানে রয়েছে একাধিক গুহা।
কিরিয়াকু ১৫ বছর ধরে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তানে সিআইএ-র সন্ত্রাসদমন শাখার প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর দাবি, মার্কিন বাহিনীর ভিতরে লাদেনের এক সহকারী ঢুকে পড়েছিলেন। তিনি জঙ্গিদের হয়ে কাজ করছিলেন।
২০০১ সালে আমেরিকায় আল-কায়েদার হামলায় ১৯ জন আল কায়েদা জঙ্গি ৪টি বিমান ছিনতাই করে।২টি বিমান নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে আঘাত করে, তৃতীয়টি ওয়াশিংটনের পেন্টাগনে হামলা চালায় এবং চতুর্থ বিমানটি একটি মাঠে ভেঙে পড়ে। এই হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হন, আহন হন কয়েক হাজার।
Advertisement



