বাংলাদেশি সন্দেহে মহারাষ্ট্রের পুলিশের অত্যাচারে মৃত্যু হয়েছে হাবড়ার এক পরিযায়ী শ্রমিকের। এমনই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন মৃতের মেয়ে। চারদিনের সেই টানা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওই পরিযায়ী শ্রমিক। অবশেষে গোলাম মণ্ডল (৫৫) নামের ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যেই রাজ্যের শ্রমিক সংগঠনগুলি এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই মাস আগে মহারাষ্ট্রের এক নির্মাণ সাইটে কাজ করছিলেন গোলাম মণ্ডল। সেই সময় বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার লিস্টে বাবার নাম দেখানোর পরেও কিছুই শুনতে চায়নি পুলিশ। পুলিশকর্মীরা দাবি করেন, এই সব নথিপত্র ৫০ টাকা দিলেই বানানো যায়। গোলামের মেয়ে মর্জিনা খাতুনের অভিযোগ, বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁর বাবাকে চারদিন ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
Advertisement
দিনে শুধুমাত্র এক বোতল করে জল ও একটি করে সিঙাড়া দেওয়া হত। সেই সঙ্গে চলত অত্যাচার। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ও জলের অভাবে তাঁর শরীর ভেঙে পড়েছিল। অবশেষে কোনও রকমে ছাড়া পেয়ে হাবরার বাড়িতে ফেরেন গোলাম। পুলিশের সেই অত্যাচার সহ্য করতে পারেননি তিনি। শরীরিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হতে থাকে। অবশেষে তাঁকে হাবড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই সময় কিছুটা সুস্থ হলেও পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। রবিবার বারাসাত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
Advertisement
এরপরই মহারাষ্ট্র পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হন মৃতের মেয়ে মর্জিনা। তাঁর অভিযোগ, মহারাষ্ট্র পুলিশের অত্যাচারেই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে। দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর অনুরোধ, পরিযায়ী শ্রমিকদের যেন এরকম পরিণতি না হয় তা নিশ্চিত করুক সরকার। উল্লেখ্য, সাত মাস আগেই মৃত্যু হয়েছিল মর্জিনার মায়ের । এবার বাবার মৃত্যুতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে তুলে নিয়ে গিয়ে হেনস্থার ঘটনায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফেরাতে চালু হয়েছে শ্রমশ্রী প্রকল্প। পাশাপাশি বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে ভাষা আন্দোলন। এই আবহে একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
আতঙ্কে অনেকে নিজে থেকে বাড়িতে ফিরে আসছেন। বিজেপি শাসত রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের মেরে হাত পা ভেঙে দেওয়ার মতো ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে। এই আবহে ফের বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে নিগ্রহের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে হাবরা এলাকা। এই ঘটনায় মহারাষ্ট্র প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
Advertisement



