রাজ্যে ভােট বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে সূর্য-বিমানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন সিপিএম নেতারা

মঙ্গলবার সিপিএমের বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরির সামনেই রাজ্যে ভােটে ভাড়াডুবি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সর্বস্তরের নেতারা।

Written by SNS Kolkata | June 5, 2019 3:36 pm

সীতারাম ইয়েচুরি (File photo: IANS)

মঙ্গলবার সিপিএমের বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরির সামনেই রাজ্যে ভােটে ভাড়াডুবি নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সর্বস্তরের নেতারা। সূর্য-বিমানকে উদ্দেশ্য করে দলের ছােট বড় নেতা প্রকাশ্যে এই মক্তব্য করলেন ‘আপনাদের আর কেউ বিশ্বাস করছে না আপনারা এবার সরুন’।

সূর্যকান্ত মিশ্র সহ কারাের কারাের আবার দাবি রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী এক্ষুনি ভেঙে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের মুখ অবিলম্বে না পাল্টালে সিপিএমের আর কোন ভবিষ্যত নেই বলে ক্ষোভ উগরে দেন সিপিএম সমর্থকেরা। বাধ্য হয়ে সীতারাম ইয়েচুরিকে বলতে হয় দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের এখন তারুণ্যে জোর দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যাতে দলে তরুণ নেতারা উঠে আসেন।

বামেদের ভােট রামের দিকে গেছে, তা অস্বীকার করতে পারছে না সিপিএম। আর এই নিয়েই মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে তুমুল শােরগােল হল। যে সিপিএম নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে সবথেকে সােচ্চার ছিল, সেই দলের কর্মী ও নেতাদের একাংশ বিজেপিকে ভােট দেওয়ায় জেলা নেতৃত্বকে সতর্ক করে দিয়েছেন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা।

২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগে দলকে যে কোনওভাবে ঘুরে দাঁড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে সিপিএম নেতৃত্ব। ভােট বিপর্যয় এক জোট ভেস্তে যাওয়ার প্রশ্নে কংগ্রেসকেই দুষতে ছাড়লেন না সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বামেদের ভােট বিজেপির দিকে গেলেও হতাশাজনক ফলাফল নিয়ে কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি বলেছেন, আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা করতে চেয়েছিলাম। চেষ্ঠাও করেছিলাম। কিন্তু সেটা কংগ্রেসের জন্য সম্ভব হয়নি। আসন রফা মেনে আমরা কংগ্রেসের দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিইনি। কংগ্রেস দুটি আসনে জয়ী হয়েছে। আসন রফার সূত্র কংগ্রেস মেনে নিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না বলে মনে করছেন সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধাশ সম্পাদক।

তাঁর ধারণা, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে দলের ফলাফল ভালােই হত। কিন্তু এর জন্য কংগ্রেসকে জবাবদিহি করতে হবে। কংগ্রেসকে উদ্দেশ করে তাঁর কড়া বার্তা, আমরা তাে আসন রফা সূত্র মেনেই কাজ করছিলাম। কিন্তু কংগ্রেসকে বলতে হবে কেন তাঁরা এই কাজ করলেন।

মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর উপস্থিতিতেই ভােটে গোহারা হেরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অধিকাংশ সদস্য শােরগােল শুরু করেন। সকলের প্রশ্ন, দলীয় সদস্য এবং বিধায়করা দলে দলে গেরুয়া শিবিরে যােগ দিচ্ছেন। অথচ কোনও অবস্থাতে দলের ভাঙ্গন ঠেকানাে যাচ্ছে না। উল্টে বামেদের ভােট বিজেপির ভােটবাক্সে পড়েছে।

বিজেপি বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ফের কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন ইয়েচুরি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের সাফ কথা, বিজেপি সারা দেশের মতাে পশ্চিমবঙ্গে ভােটে জিততে প্রচুর টাকা খরচ করেছে। রাজ্যে এই দল প্রায় দুহাজার কোটি টাকা খরচ করছে। ধর্মীয় মেরুকরণ করা হয়েছে। বালাকোটের ঘটনাকে কাজে লাগানাে হয়েছে। তবে তৃণমূল এবং বিজেপিকে ফের চরম শত্রু বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তিনি স্পষ্টতই দলকে জানিয়ে দিয়েছেন, এই দুটি দলের বিরুদ্ধে তাঁদের লাগাতার আন্দোলন জারি থাকবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইভিএম নয়, ব্যালট পেপার ফেরানাের দাবিতে সােচ্চার হয়েছেন। সুপ্রিমাের নির্দেশে তৃণমুল এদিন রাস্তায় নেমেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযােগ ছিল, এবারের নির্বাচনে ইভিএমে কারচুপি হয়েছে। বিরােধী দলগুলির সঙ্গে কথা বলে তথ্যনুসন্ধান কমিটি গঠনের দাবির কথা জানিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সীতারামের সাফ কথা, তাঁরা ইভিএমের বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন তাঁদের দাবিকে মান্যতা দেয়নি। তবে আগামী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলােচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাজ্য কমিটির তরফে বলা হয়েছে, মিডিয়া জগৎকে তৃণমূল, বিজেপি এমনভাবে প্রচারে নামিয়েছিল যে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী লড়াই শুধু বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে সীমিত। বামফ্রন্ট ও অন্যান্য দলের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমাদের বিপর্যয়ের মূলে এটিও অন্যতম কারণ।নিবিড় প্রচার ও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক গণসংযােগের বিরাট ঘাটতির কারণে এই অস্বাভাবিক এবং অভূতপূর্ব পরিবেশে বামপন্থীদের অবস্থান মানুষের কাছে গ্রহণীয় করে তােলা যায়নি।

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব ভােট বিপর্যয় নিয়ে আরও বলেছেন, পরিস্থিতি একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে না। এখন থেকেই সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার লড়াই আন্দোলন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।