• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ভয়াবহ ভাঙনের কবলে জালুইডাঙা, আতঙ্কে ঘুম উড়েছে এলাকাবাসীর

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, যেভাবে ভাঙন বেড়ে চলছে, তাতে আগামী দিনে রাজ্য সড়কও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ ব্যপারে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি।

ভাগীরথী ও গঙ্গার জল বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের ভাঙনের শঙ্কা। আতঙ্কে ঘুম উড়েছে কালনাবাসীর। পূর্বস্থলী-১ ব্লকের জালুইডাঙা এলাকায় ভাগীরথীর পাড় ভাঙনের জেরে ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেলপথ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে। কারণ ভাঙন কবলিত এলাকাতেই রয়েছে এই রেলপথ। নদী ভাঙন ঠেকাতে না পারলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি সাংসদ, বিধায়ক, জনপ্রতিনিধিরা একযোগে রেল দপ্তর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ভাঙন রোধের আবেদন রেখেছেন। লোকসভাতেও বিষয়টি তোলা হয়েছে। তবে অভিযোগ, এখনও কেন্দ্রের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ভাগীরথী নদীর পাড় ভাঙনের জেরে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জালুইডাঙা গ্রাম। গ্রামের বেশিরভাগ অংশই চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। জলের তলায় চাষের জমি, বসতবাড়ি। ভাঙনের জেরে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে চলেছে। কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্তরা রুটি-রুজির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ব্যান্ডেল-কাটোয়া  শাখার রেললাইনের অবস্থা সবথেকে শোচনীয়। কারণ জালুইডাঙার কাছে নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে একেবারে রেললাইনের কাছে চলে গিয়েছে। নদীর পাড় থেকে রেললাইনের দূরত্ব মাত্র ৩০ মিটার। রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রেলপথ উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ বজায় রাখে। বর্তমানে ট্রেন চলাচল করলেও রেললাইন নদীগর্ভে চলে গেলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

Advertisement

এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় সরকার ও রেল দপ্তরের নজরে আনেন বিষয়টি। তিনি বলেন, তাঁর বা রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ভাঙন রোধের চেষ্টা হয়েছে। বিধায়ক তহবিলের টাকায় পাড় বাঁধানো, শ্মশান ঘাটও তৈরি হয়েছে। কিন্তু ভাঙন কমেনি। যার জেরে প্রতিদিন বিপন্ন হচ্ছে জনজীবন। এই করুণ পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সহযোগিতা মেলেনি বলে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মন্ত্রী।

Advertisement

এরই মধ্যে নদীপথে যাতায়াতে সুরক্ষা এবং দুর্ঘটনা এড়াতে  মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতায় ওই এলাকায় মোট ৬টি জেটি তৈরি করা হয়েছে। জেটিগুলির উদ্বোধন করেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। যদিও রেলপথ বাঁচাতে কেন্দ্রের তরফে কোনও সহযোগিতা না মেলায় স্থানীয়দের ক্ষোভ ক্রমশই বাড়ছে। ভোটে জেতার পর মন্ত্রীর সঙ্গে এই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সাংসদ শর্মিলা সরকার। পরে সংকটের কথা তুলে ধরেন লোকসভায়। ঘটনা লিপিবদ্ধও করা হয়। কিন্তু এত কিছুর পরেও রেললাইন বাঁচাতে কোনও পদক্ষেপ করেনি রেল দপ্তর। এমনটাই অভিযোগ সাংসদের।

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, যেভাবে ভাঙন বেড়ে চলছে, তাতে আগামী দিনে রাজ্য সড়কও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ ব্যপারে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি। অন্যদিকে পূর্বস্থলী-১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, নদী-ভাঙনে রেললাইনের ক্ষতি নিয়ে রেল দপ্তর পুরোপুরি উদাসীন। নদী ভাঙনের বিষয়টি কেন্দ্রের দায়। এ ব্যপারেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বঞ্চনা করছে। তিনি জানান, গ্রামের পর গ্রাম চলে যাচ্ছে ভাগীরথী ও গঙ্গাগর্ভে। এর আগে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে এই এলাকার উন্নয়নে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। রাস্তার জন্য খরচ করা হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু সবই নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। তাই বিশেষ করে যাঁরা মাটির কাঁচা বাড়িতে রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকটা দিন কাটছে আতঙ্কে।

Advertisement