আর জি কর কাণ্ডে উত্তাল শহর কলকাতা। প্রতিদিন অগ্নিগর্ভে পরিণত হচ্ছে কলকাতার রাজপথ। এবার হাওড়া ব্রিজের মুখে চলল বিজেপি এবং পুলিশের খন্ডযুদ্ধ। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার হাওড়া ব্রিজ অভিযানের কর্মসূচি ছিল বিজেপির। সেতুতে ওঠার মুখে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। বসানো হয় ব্যারিকেড। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয় র্যাফ। সেই ব্যারিকেড ভেঙে এগনোর চেষ্টা করেন বিজেপি নেতা, কর্মীরা। তখনই পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এই ঘটনায় বিজেপি নেতা তথা পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো সহ কয়েকজনকে আটক করা হয়। সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে এই বিক্ষোভের কারণে তৈরি হয় তীব্র যানজট। এমজি রোড, স্ট্র্যান্ড রোডে আটকে পড়েন অফিস ফেরত বহু যাত্রী। এই পরিস্থিতিতেই শেষমেশ বাতিল হয় রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের কর্মসূচি। মঙ্গলবার সল্টলেকে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের উপস্থিতিতে একটি সরকারি কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁরও হাওড়া ব্রিজ অভিযানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি যাননি। বিজেপি সূত্রের খবর, বুধবার থেকে শ্যামবাজারে যে ধর্না কর্মসূচি রয়েছে দলের, সেই নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি দফতরে চলে যান।
তবে ঠিক কি হয়েছিল হাওড়া ব্রিজের মুখে? মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে বিজেপি-র হাওড়া ব্রিজ অভিযান মিছিল শুরু হয়। নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময়। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে হাওড়া ব্রিজে ওঠার রাস্তা বন্ধ করে দেয় কলকাতা পুলিশ। সে সময় ব্যারিকেড টপকে হাওড়া ব্রিজে ঢোকার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। এরপর জ্যোতির্ময় সমর্থকদের নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে ব্রিজের কাছে পৌঁছন। ব্রিজে উঠতে বাধা দিলে সেখানে বসে পড়েন তাঁরা। স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ তাঁদের সরানোর চেষ্টা করলে ধুন্ধুমার কাণ্ড হয় বলে অভিযোগ। বিজেপি কর্মীদের চ্যাংদোলা করে নিয়ে যায় পুলিশ। জ্যোতির্ময় সহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। হাওড়া ব্রিজের পরিস্থিতি উত্তাল। কিন্ত পিছু হঠতে নারাজ বিজেপি।
Advertisement
এদিকে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যভবন ঘেরাও করার ডাক দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু তার আগে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে বিক্ষোভ দেখায় সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি। প্রথমে সিটি সেন্টারে জমায়েত হয়। সেখান থেকে স্বাস্থ্যভবনের দিকে মিছিল করে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। পুলিশ অবশ্য মঙ্গলবার এবিভিপি নেতা-কর্মীদের সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের স্বাস্থ্যভবন পর্যন্ত যেতে দেয়নি। তার প্রায় দু-কিলোমিটার আগে ইন্দিরা ভবনের অদূরে আটকে দেওয়া হয় মিছিল। সেখানেই রাস্তায় বসে বৃষ্টির মধ্যে প্রথমে স্লোগান দিতে থাকেন এবিভিপি কর্মীরা। এরপর তাঁরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়ায়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় অশান্তি। ইট ছোঁড়াছুড়ি, লাঠিচার্জে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল গোটা এলাকা। বেশ কয়েকজন এবিভিপি কর্মীকে আটক করে ভ্যানে তোলে পুলিশ। এর মাঝেই মঙ্গলের সন্ধ্যায় বিজেপির হাওড়া ব্রিজ অভিযানেও চলল ধরপাকড়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যত বেসামাল হয়ে পড়তে হয় পুলিশকে।
Advertisement
Advertisement



