রাহুল গান্ধি যখন রাজনীতিতে ঢুকলেন, তখন একজন বড় রাজনীতিবিদ তাঁকে খুব হালকাভাবে নিয়ে বলেছিলেন, বসন্তের ককিল। অর্থাৎ তিনি এসেছেন, আবার চলেও যাবেন।
কিন্তু যখন তিনি এই তরুণ বয়সে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম দল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে দলের হাল ধরলেন, তখন এই রাজনীতিবিদ কী মনে করেছিলেন তা জানা যায়নি। এখন কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানাে, অনেকের মতে ‘দল একজন তরুণ যােদ্ধাকে হারাল’।
গত লােকসভা নির্বাচনে তিনি নিজেকে ভালভাবেই মেলে ধরেছিলেন। তাঁর আগে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেস যে ক্ষমতা দখল করল তার মূল কারিগর ছিলেন তিনিই। গুজরাতের নির্বাচনেও কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাল ফল করল, যদিও ক্ষমতায় আসতে পারেনি।
তিনটি রাজ্যে কংগ্রেসের সাফল্যের পিছনে রাহুল গান্ধির অনলস পরিশ্রম, অনেকগুলি নির্বাচনী জনসভায় তিনি বিজেপি শাসনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতা মানুষের সামনে তুলে ধরেছিলেন। কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আনার জন্য তাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই তিনটি রাজ্যে রাহুলের দেওয়া উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, কৃষকদের সমস্যা সমাধান, তাদের উন্নতির জন্য নানা প্রকল্প এবং ঋণ মকুবের আশ্বাসের কথায় মানুষ আস্থা রেখেছিলেন। এই সাফল্যে দলও উজ্জীবিত হয়েছিল।
আশা করা গিয়েছিল লােকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস ভাল ফল করবে এবং কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। রাহুল গান্ধি নির্বাচনের প্রচার শুরু হওয়ার অনেক আগের থেকে সারা দেশ ঘুরে ঘুরে, মানুষের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশে বুঝতে পারছিলেন মােদি সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিভঙ্গ এবং নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় তারা হতাশ। বিকল্প হিসেবে তারা কংগ্রেসকে চান।
মানুষের এই মনােভাব বুঝতে পেরেই লােকসভা নির্বাচনে তিনি ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। দেশের প্রতিটি রাজ্যে একের অধিকবার এসে জনসভা করে মােদি শাসকের দুর্নীতি এবং নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কথা বলেছিলেন। যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী দফাদার তথা দেশের মানুষের পাহারাদার হয়ে যে ‘চোর’ বনে গিয়েছিলেন, তাও তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তা ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে প্রতিটি জনসভায় ফাস করে দেন।
নির্বাচন প্রচারকালে তিনি পাশে পেয়েছিলেন তাঁর বােন প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে, যিনি সর্বদা দাদার পাশে থেকে তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন। রাহুল গান্ধি তাঁর বােনের ওপর উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভাবমূর্তি তুলে ধরা এবং দলীয় সংগঠনকে মজবুত করার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, যা তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও একাগ্রতার সঙ্গে পালন করেছিলেন।
মােদি সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে রাহুল গান্ধি যে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন তার ফলে হাওয়াটা অনেকটাই কংগ্রেসের দিকে বইতে শুরু করেছিল। কিন্তু মােদি ঝড়ের ক্ষিপ্রতা যে অনেক বেশি ছিল তা তখন বােঝ যায়নি।
তাছাড়া মােদির সঙ্গে প্রচারে আরও বিজেপি নেতা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, দলের নির্বাচন স্ট্রাটেজি নিরূপণের মস্তিষ্ক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ। সে তুলনায় রাহুল একাই লড়েছেন কংগ্রেসের হয়ে। যে রাজ্যে কংগ্রেস সাংগঠনিক দিক থেকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, সেখানেই তিনি ছুটে গিয়েছেন। একবার নয়, দুই, তিনবার।