• facebook
  • twitter
Friday, 26 December, 2025

‘মানবে না হার, তৃণমূল আবার’: অভিষেক

আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, কারণ ২০২৯-এর ভিত তৈরি হচ্ছে ২০২৬ থেকেই। ‘মানবে না হার, তৃণমূল আবার’—এই বার্তা রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

নিজস্ব চিত্র

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনের ভিত আরও মজবুত করতে বড়সড় রাজনৈতিক বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতায় দলের মেগা সাংগঠনিক বৈঠকে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে তিনি তৃণমূলের রণকৌশল ও ‘ভিক্টরি ব্লুপ্রিন্ট’ তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাধিপতি ও বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব।

বৈঠকের শুরুতে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে রাজ্যে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট কার্ড মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। তিনি জানান, সেই কর্মসূচির রূপরেখা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই ব্যাখ্যা করবেন। এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেক বলেন, মানুষ পরপর তিনবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। ২০১১ সালের আগে রাজ্যের অবস্থা কী ছিল এবং ২০২৫ সালে এসে রাজ্য কোথায় দাঁড়িয়ে—এই তুলনামূলক চিত্রই উন্নয়ন রিপোর্টের মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে।

Advertisement

উন্নয়নের প্রচারকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে বলে জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম পর্বের নাম ‘উন্নয়নের সংলাপ’, যা আগামী পয়লা জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। এই কর্মসূচির জন্য রাজ্যজুড়ে ৩৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক তিনটি করে টিম থাকবে, যেখানে পাঁচ থেকে দশজন সদস্য থাকবেন। এই টিমগুলিতে মন্ত্রী, রাজ্যসভা বা লোকসভার সাংসদ, বিধায়ক এবং সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা থাকবেন। এদিকে, তৃণমূলে ফিরছে পর্যবেক্ষক কালচার। সব জেলায় কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা হবে। আজ জেলাওয়াড়ি সেই তালিকা ঘোষণা করা হবে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, রাজ্যজুড়ে প্রায় ১৮০০ জন গুণী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের নিয়ে শুরু হচ্ছে ‘বাংলার সমর্থনের সংযোগ’ ও ‘বাংলার সমর্থনের সংলাপ’ কর্মসূচি। এই ১৮০০ জনের মধ্যে প্রায় ২০০ জনের কাছে সরাসরি পৌঁছবেন মন্ত্রী ও সাংসদরা। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বিধায়ক ও জেলা সভাপতিরা। জানুয়ারির এক তারিখ থেকে শুরু হয়ে এক মাসের মধ্যেই এই কর্মসূচি শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিটি নির্বাচিত ব্যক্তিকে একটি বিশেষ কিট দেওয়া হবে বলে জানান অভিষেক। ওই কিটে থাকবে ‘উন্নয়নের পাঁচালি’, বাংলার গৌরবোজ্জ্বল ১৫ বছরের উন্নয়নের বিবরণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের হাতে লেখা চিঠি, একটি স্মারক এবং সরকারের ১৫ বছরের বিস্তারিত রিপোর্ট কার্ড। অভিষেক বলেন, ক্ষমতায় থেকে কী কাজ করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব শ্বেতপত্রের মতো বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সাহস একমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসেরই আছে।

বক্তব্যে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারকেও তীব্র আক্রমণ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা বিনয়ের সঙ্গে আমাদের কাজের রিপোর্ট কার্ড জমা দেব। বিজেপির জবাবদিহি কোথায়? তারা ২০২৪ সালে কোনও রিপোর্ট কার্ড দেয়নি। তারা আমাদের দুই লক্ষ কোটি টাকার তহবিল আটকে রেখেছে, আর এখন জ্ঞান দিচ্ছে তৃণমূল কী করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন অভিষেক। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেছেন—‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই’। এই চারটি শব্দের মধ্যে গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। বাঁচাতে চাই মানে আসলে মারতে চাই। তাই আমাদের বলতে হবে—বাঁচতে চাই, বিজেপি বাই। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, কারণ ২০২৯-এর ভিত তৈরি হচ্ছে ২০২৬ থেকেই। ‘মানবে না হার, তৃণমূল আবার’—এই বার্তা রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।”

বৈঠকের শেষ পর্যায়ে জনসংযোগের ক্ষেত্রে কর্মীদের আচরণ নিয়েও কড়া বার্তা দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় কোনও রকম ঔদ্ধত্য দেখানো যাবে না। মানুষের ব্যবহারই মানুষের পরিচয়—এই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কর্মীদের আচরণে যেন সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, সততা ও মূল্যবোধকে স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারেন।

Advertisement