• facebook
  • twitter
Tuesday, 23 December, 2025

ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে আপত্তি নিউজিল্যান্ডের শাসকজোটের

সিদ্ধান্তের বিরোধিতা সেদেশের বিদেশমন্ত্রীর

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি বা এফটিএ চূড়ান্ত করার ঘোষণার রেশ কাটতে না কাটতেই নিউজিল্যান্ডের শাসকজোটে প্রকাশ্যে অনৈক্যের ছবি ধরা পড়ল। প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন চুক্তি নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার কথা জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরাসরি এর বিরোধিতা করলেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, এই চুক্তি কার্যকর হলে লাভের তুলনায় নিউজিল্যান্ডের ক্ষতিই বেশি হবে।

সোমবার যৌথভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। প্রস্তাবিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, নিউজিল্যান্ড থেকে ভারতে আমদানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৯৫ শতাংশের উপর শুল্ক কমানো হবে অথবা পুরোপুরি শুল্কমুক্ত করা হবে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার দিন থেকেই নিউজিল্যান্ডের রপ্তানি করা প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্যে এই ছাড় মিলবে।

Advertisement

অন্যদিকে, ভারত থেকে নিউজিল্যান্ডে রপ্তানি হওয়া পণ্যের উপর কোনও শুল্ক আরোপ করা হবে না। ফলে নিউজিল্যান্ডের বাজারে ভারতীয় পণ্য তুলনামূলকভাবে সস্তা থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এই চুক্তির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে ডেয়ারি শিল্পকে। আর এই বিষয়টিকেই কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি আপত্তি তুলেছেন নিউজিল্যান্ডের বিদেশমন্ত্রী পিটার্স।

Advertisement

সমাজমাধ্যমে দীর্ঘ একটি পোস্টে পিটার্স দাবি করেন, ‘ভারত-নিউজিল্যান্ড মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি আসলে মুক্ত নয়, স্বচ্ছও নয়। এটি নিউজিল্যান্ডের জন্য একটি খারাপ চুক্তি। এখানে অনেক ছাড় দেওয়ার কথা বলা হলেও বিনিময়ে দেশের মানুষ তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা পাবেন না।’ তাঁর আশঙ্কা, এই চুক্তির ফলে নিউজিল্যান্ডের রপ্তানি নির্ভর শিল্প, বিশেষ করে ডেয়ারি ক্ষেত্র বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে।

উল্লেখ্য, উইনস্টন পিটার্স জাতীয়তাবাদী দল ‘নিউজিল্যান্ড ফার্স্ট’-এর নেতা এবং শাসকজোটের অন্যতম শরিক। তিনি আরও আপত্তি তুলেছেন প্রস্তাবিত চুক্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভারতীয় পেশাদারদের ভিসা দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও। পিটার্সের দাবি, তিনি আগেই শাসকজোটের প্রধান দল ন্যাশনাল পার্টির নেতৃত্বকে এই চুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, আরও সময় নিয়ে ভারতের সঙ্গে দর কষাকষি করা উচিত ছিল। কিন্তু সেই পরামর্শ উপেক্ষা করেই দ্রুত এক ‘নিম্নমানের’ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিদেশমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে এই চুক্তিতে সিলমোহর দেওয়ার বিরোধিতা করবেন তাঁরা। ফলে সংসদে চুক্তিটি পাশ হবে কি না, তা নিয়েই ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ন্যাশনাল পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ক্ষমতায় এলে তারা ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করবে। সেই লক্ষ্যেই গত মার্চ মাসে ভারতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী লাক্সন। তার পর প্রায় ন’মাস ধরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চলে।

সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, এই চুক্তির ফলে ভারতের কৃষি, পর্যটন, গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করবে। তবে বিষয়টি নিয়ে নিউজিল্যান্ডের শাসকজোটের মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসায় এই এফটিএ অর্থাৎ মুক্ত বাণিজ্যনীতি আদৌ চূড়ান্ত হবে কি না, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement