যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশৃঙ্খলার ঘটনার পর তদন্তে আরও কড়া অবস্থান নিল রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে দেওয়া তদন্ত কমিটির পরামর্শ মেনেই মঙ্গলবার চার সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে রাজ্য পুলিশ। এ বার সেই সিটের সদস্য সংখ্যা চার থেকে বাড়িয়ে আট করার ভাবনা চলছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ফুটবল তারকা লিয়োনেল মেসির অনুষ্ঠানে কেন এমন বিশৃঙ্খলা তৈরি হল, কার গাফিলতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল— এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তদন্ত শুরু করেছে সিট। সেই লক্ষ্যে বুধবার যুবভারতীতে পৌঁছয় ফরেন্সিক দলও। স্টেডিয়াম চত্বর ঘুরে পড়ে থাকা জলের বোতল, ভাঙা অংশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলির একাধিক ছবি তোলা হয়েছে। সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার যে চার সদস্যের সিট গঠন করা হয়েছে, তাতে রয়েছেন রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা পীযূষ পাণ্ডে, অতিরিক্ত মহাপুলিশ অধিকর্তা (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম, অতিরিক্ত মহাপুলিশ অধিকর্তা (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার মুরলীধর। প্রশাসনিক মহলে আলোচনা, তদন্তের পরিধি বাড়ায় সিটে আরও চার জন আধিকারিক যুক্ত হতে পারেন। ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিককে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনাও রয়েছে।
Advertisement
এর আগে যুবভারতীকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী যে অনুসন্ধান কমিটি গড়েছিলেন, তাতে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব-সহ শীর্ষ আধিকারিকেরা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার রায়ের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটি সোমবার রাতে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে বলা হয়, মেসির কলকাতা সফরের সার্বিক দায়িত্বে ছিল পুলিশ ও ক্রীড়া দপ্তর। দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই বলেও মত এই তদন্ত কমিটির।
কমিটির তরফে পুলিশ এবং ক্রীড়া দপ্তরের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘটনার দিন কোন আধিকারিকরা দায়িত্বে ছিলেন, আগে থেকে কী কী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, সব প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিচারপতি অসীমকুমার রায় জানান, ঘটনার নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্তের জন্য সিট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সুপারিশ মেনেই মঙ্গলবার রাতেই বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক স্তরেও কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং বিধাননগর পুলিশ কমিশনার অনীশ সরকারকে শো কজ করেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। ক্রীড়া ও যুববিষয়ক দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজেশকেও শো কজ করা হয়েছে। পাশাপাশি অপসারণ করা হয়েছে যুবভারতীর সিইও তথা অবসরপ্রাপ্ত ডব্লিউবিসিএস আধিকারিক দেবকুমারকেও।
বুধবার সকাল পৌনে দশটা নাগাদ ফের যুবভারতীতে যায় তদন্তকারী দল। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তারা বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অফিসে গিয়ে বৈঠক করে। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান তদন্তকারীরা।
ভাঙচুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে আরও অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
Advertisement



