রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর প্রকল্প সার্থক করতে পরীক্ষার দিন বদলের নির্দেশ রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকল্পের নাম ‘ভারত বোধ আইকেএস’। প্রকল্পের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এটি বিদ্যাভারতী উচ্চশিক্ষা সংস্থানের একটি শিক্ষামূলক প্রকল্প। ‘বিদ্যাভারতী’ আবার আরএসএস-এর শিক্ষা সংগঠন। সেই প্রকল্পের অধীনে দেশজুড়ে ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থার প্রতি যুহ সমাজকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে আগামী ২৯ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি একটি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েএেছ। সেই পরীক্ষার জন্যই সেমিস্টারের পরীক্ষাসূচি পরিবর্তনের নির্দেশ জারি করেছে বিশ্বভারতী। ‘ভারত বোধ আইকেএস’-এর প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষার লক্ষ্য, কাঠামোবদ্ধ পরীক্ষা, সাংস্কৃতিক সংযোগ এবং আধুনিক প্রয়োগের মাধ্যমে যুব সমাজকে ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থার সঙ্গে পুনরায় যুক্ত করা, ভারতীয় ঐতিহ্যভিত্তিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ও উৎসবের মাধ্যমে ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থাকে একীভূত করে প্রাচীন জ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষার মধ্যে ব্যবধান দূর করা ইত্যাদি।’
‘ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থা’-র প্রতি যুব সমাজকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে হতেই পারে পরীক্ষা। কিন্তু বেসরকারি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরীক্ষার জন্য বিশ্বভারতীর সেমিস্টারের পরীক্ষার সূচি পুননির্ধারণের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। বিশ্বভারতীর এক প্রবীণ অধ্যাপকের মন্তব্য, ‘বিশ্বভারতীর ইতিহাসে এমন ধরনের ঘটনা এই প্রথম।’ যদি আরএসএস-এর এক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার দাবি, ‘বিশ্বভারতী এমন কোনও পরীক্ষার আয়োজক করছে বলে জানা নেই। তবে ভারতবর্ষের গৌরব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি। হতে পারে তারই অঙ্গ হিসাবে এই ধরনের কোনও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’
Advertisement
আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্বভারতীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের সমস্ত বিভাগের সেমিস্টারের পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। কিন্তু গত ১১ ডিসেম্বর আরেকটি নির্দেশিকা জারি করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে, ‘ভারত বোধ আইকেএস’-এর পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য ২৯ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনও পরীক্ষা নেওয়া যাবে না।’ এদিকে পরীক্ষার নির্ঘণ্ট প্রায় সেরে ফেলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ। ছোট ছোট বিভাগগুলি যেমন আরবি, ফারসি, বি-ডিজাইন প্রভৃতি বিভাগের পরীক্ষাসূচি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য বিভাগগুলি বিজ্ঞপ্তি জারি না করলেও সূচি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল। যেমন, শিক্ষাভবনের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, ‘নতুন নির্দেশের পর ফের আমাদের পরীক্ষার সূচি পাল্টাতে হবে। শুধু তাই-ই নয়, ভারত বোধ পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যায় পরীক্ষার্থী পাঠানোরও ফরমান এসেছে মৌখিকভাবে।’
Advertisement
‘ভারত বোধ’ পরীক্ষার জন্য বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, কর্মী, আধিকারিকদের নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, ‘দর্শন, কলা, সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। শুধু বিশ্বভারতী নয়, সারা দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই পরীক্ষা হবে। তার মধ্যে খড়্গপুর আইআইটিও রয়েছে। যুক্ত আছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ও। আসলে ভারতী জ্ঞান ব্যবস্থার সঙ্গে পড়ুয়াদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই পরীক্ষা।’
শিক্ষায় গৈরিকীকরণের আরও এক ধাপ হলো এই পরীক্ষা। এর নেপথ্যে কেন্দ্রের মদত রয়েছে আড়াল থেকে। সরকারি ক্ষমতার ব্যবহার করে ‘ভারত বোধ আইকেএস’-কে সামনে রেখে আরএসএস তার ভাবনার বীজ আরও গভীরভাবে পুঁততে চাইছে কবিগুরুর হাতে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও।
Advertisement



