• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

টলিউড-মাস্টারপ্ল্যান ‘৬-৪-২’

পরিচালক ও প্রযোজকদের স্বরূপ বিশ্বাস অনুরোধ করেন, শুধু কলকাতা বা তার আশেপাশের জন্য নয়, মফস্বলের জন্যও ছবি ভাবতে হবে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অতনু রায়

ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইম্পা)-র সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত এবং ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বাংলা ছবির স্ক্রিনিং কমিটির বৈঠক বসেছিল ইম্পা হাউসে। প্রযোজক, পরিবেশক, প্রদর্শকদের এই বৈঠকে কথা হয় ২০২৬ সালের বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রির রূপরেখা তৈরি নিয়ে।

Advertisement

প্রথমত, পিয়া সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ‘মোট ১১টার মধ্যে যেকোনও প্রাইম রিলিজ উইন্ডো পাওয়ার জন্য কোনও ছবির বাজেট কমপক্ষে ২ কোটি টাকা হতে হবে, তবে সেটা যৌথ প্রযোজনা হলে হবে না।’ উল্লেখ্য, কোনও প্রাইম রিলিজ উইন্ডোতেই ৩টের বেশি বড় ছবি মুক্তি দেওয়া যাবে না, এই সিদ্ধান্ত আগের বৈঠকেই নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

দ্বিতীয়ত, পরিচালক ও প্রযোজকদের স্বরূপ বিশ্বাস অনুরোধ করেন, শুধু কলকাতা বা তার আশেপাশের জন্য নয়, মফস্বলের জন্যও ছবি ভাবতে হবে। মফস্বলের সিনেমা হল বাঁচলেই সিনেমার প্রসার ও প্রচার হবে। শহরকেন্দ্রিক ছবি দিয়ে মফস্বলের হারানো বাজার ধরা যাবে না, মত স্বরূপের।
তৃতীয়ত, প্রাইম রিলিজ উইন্ডোর ছবিগুলোকে ব্যবসার জন্য অন্তত দু’সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। যে প্রযোজনা সংস্থা ৬টা ছবি করবে, তার কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা লগ্নি হবে। সেটা ১৫ বা ২০ কোটিতেও পৌঁছতে পারে। সে যদি ব্যবসা করার সুযোগটাই না পায়, তাহলে তো সে দেউলিয়া হয়ে যাবে! স্বরূপ দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানিয়েছেন, ইন্ডাস্ট্রিতে লগ্নি আনতে হবে এবং লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। তবেই আরও লগ্নি আসবে। লগ্নি যত বাড়বে, ছবির সংখ্যা তত বাড়বে, এমপ্লয়মেন্ট তত বাড়বে। ফলে মানুষ আরো সিনেমামুখী হবে।

চতুর্থত, সূত্রের খবর, ফেডারেশন সভাপতি ডিস্ট্রিবিউটরদের হিন্দি ছবিকে নন-প্রাইমটাইম শো দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। বৈঠকে ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা এবং পঙ্কজ লাডিয়া জানান, নন-প্রাইমটাইম শো হলে হিন্দি ছবি দিতে চায় না। স্বরূপ তাঁদের বলেন, হিন্দি ছবি বাংলায় ব্যবসা করতে যদি না চায়, করবে না। করতে হলে এভাবেই করতে হবে। তবে, যখন বাংলা ছবি থাকছে না, সেই সময় হিন্দি ছবিকে প্রাইমটাইম শো দেওয়া যাবে।

বিশেষ সূত্রের খবর, এসভিএফের কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা বলেছেন, ৬টা ছবি বানানোর কথা দিলেও তেমন হলে তিনি ৮টা ছবিও বানাতে পারেন। তাঁর শর্ত, সেই অতিরিক্ত দুটো নন-প্রাইম রিলিজ উইন্ডোয় যেন অন্য একাধিক ছবিকে জুড়ে দেওয়া না হয়। বিষয়টা ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পিয়া ও স্বরূপ। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ২০২৬ সালে ৮টা ছবি আসতে পারে এসভিএফ-এর।
ইম্পা সূত্রের খবর, কোনো প্রযোজনা সংস্থা ১০টা ছবি বানিয়ে ফেললেও প্রাইম রিলিজ উইন্ডোর সংখ্যার কোনও বদল হবে না। প্রসঙ্গত, ফেডারেশন সভাপতি প্রাইম রিলিজ উইন্ডো বন্টনের জন্য ‘৬-৪-২’ তিনটি ক্যাটাগরির উল্লেখ করেছেন। ৬টা ছবির জন্য ৪টে, ৪টে ছবির জন্য ২টো আর ২টো ছবির জন্য ১টা প্রাইম রিলিজ উইন্ডো পাওয়া যাবে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, যে ইম্পা-ফেডারেশন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ‘৬-৪-২’ সামলে নিতে চাইছেন। খবর, এরপরে যাঁরা বছরে একটা ছবি বানাবেন, বা কম বাজেটের ছবি বানাবেন তাঁদের কী সুবিধা দিতে পারা যায় সেই বিষয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হবে।

আপাতত, বছরে ৬টা ছবি বানাতে চাওয়া প্রযোজনা সংস্থার তালিকায় রয়েছে এসভিএফ, সুরিন্দর ফিল্মস এবং নন্দী মুভিজ-এর নাম। ৪টে ছবি বানাতে চাওয়ার তালিকায় উইন্ডোজ প্রোডাকশন, ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন, ক্যামেলিয়া প্রোডাকশন এবং দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া-র নাম। ২টো ছবি বানাতে চায় পিয়া সেনগুপ্তর এপিপি প্রোডাকশন। দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স এবং অঙ্কুশ হাজরা মোশন পিকচার্স থেকে ২টো করে ছবি বানানোর কথা হলেও এখনও কোনো কনফার্মেশন মেইল আসেনি বলে জানা গেছে।

ইম্পার তরফে সমস্ত প্রযোজনা সংস্থাকে বলা হয়েছে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের আগামী বছরের ছবির সংখ্যা এবং বাজেট জানানোর কথা। আগামী ১৩ ডিসেম্বর এই বিষয়ের নির্ণায়ক বৈঠকেই ২০২৬-এর বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রির একটা স্পষ্ট রূপরেখা পেতে পারে ইন্ডাস্ট্রি।

বৈঠকে উপস্থিত এক প্রযোজকের বক্তব্য, ‘প্রাইম রিলিজ উইন্ডোতে ৩৩টা ২ কোটি বাজেটের ছবি পেতেই কালঘাম ছুটবে! এখনও পর্যন্ত পাওয়া হিসেব বলছে, দেব আর অঙ্কুশের দুটো করে ছবি ধরলে ২৩টা ছবি হচ্ছে। এমনিই ১০টা খালি প্রাইম রিলিজ স্লট রয়েছে। আর ৩৩টা ছবির ৩০ শতাংশ মানে ১০টা ছবিও যদি ঠিকঠাক লেগে গেলেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রি অক্সিজেন পেয়ে যাবে।’

ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিষয়টাকে ট্রায়াল অ্যান্ড এরর মেথড হিসেবে দেখা যেতে পারে। এইভাবে প্ল্যান করে বাংলা ছবির বাজারটা তৈরি করতে পারলে তো খুবই ভাল। অমল দত্তর ‘ডায়মন্ড’ সিস্টেমের মতো স্বরূপ বিশ্বাসের ফর্মুলায় যেমন ডিফেন্স মেকানিজম আছে, আছে মিডফিল্ড স্টেবিলিটি আর অন্য ভাষার ছবির সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য অ্যাটাকিং মেথড। তাই বলা যায়, ঠিকঠাক রূপায়ন হলে ‘৬-৪-২’ হতে পারে ‘টলিউড মাস্টারপ্ল্যান’।

Advertisement