পাহাড়ি রাজ্য অসম। সেই অসমের মাটিতে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ অফ্রিকার ক্রিকেটাররা রানের পাহাড় গড়লেন। রবিবার ভারতের সামনে খেলার দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ অফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৪৮৯ রান করে দাপট দেখান। এই মুহূর্তে অস্বস্তিতে পড়ে গেল অধিনায়ক ঋষভ পন্থ ব্রিগেড। দিনের শেষে ভারত খেলতে নেমে বিনা উইকেটে ৯ রান করেছে। ভারত পিছিয়ে রয়েছে ৪৮০ রানে। স্বাভাবিকভাবে ভারত লক্ষ্যে যে রণকৌশল তৈরি করেছে তাতে কাজটা কঠিন হয়ে গেল। ইডেন উদ্যানে প্রথম টেস্ট ম্যাচে যেভাবে ভারত হার স্বীকার করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সেই কারণে ভারতের কাছে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ জেতার জন্যে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং মনোভাব নিয়ে লড়াই করার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। কিন্তু সেই কাজ এখন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেল।
ভাবতে অবাক লাগে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে ২৬৪ রান যোগ করেছেন। এদিন খেলার শুরুতে ২ ঘণ্টা ভারতের কোনও বোলার প্রতিপক্ষ দলের কাউকেই আউট করতে পারেনি। বরঞ্চ তাঁরা ছন্দে ব্যাট করেছেন। সুযোগ বুঝে বড় রান করেছেন। স্বাভাবিকভাবে অধিনায়ক ঋষভ পন্থকে প্রশ্নের মুখে পড়তেই হচ্ছে বোলারদের ব্যবহার নিয়ে। তারপরে রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং দক্ষিণ অফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে পারেনি। যেখানে ভারতের প্রয়োজন ছিল খুব তাড়াতাড়ি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের প্যাভেলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে বড় অঙ্কের রান করতে মাঠে নামা। সেই ভাবনা অমূলক হয়ে গেল। বরঞ্চ ভারত বেশ চিন্তায় পড়ে গেল কীভাবে প্রতিপক্ষ দলের বড় অঙ্কের রানকে জবাব দেওয়া যাবে। আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ঠাঁই পেয়ে যেভাবে সুনেরান মুথুস্বামী শতরান করলেন-তা অভাবনীয়। আবার মার্কো জানসেন শতরানের দোরগোড়ায় পৌঁছে যান। তবে তিনি ৯৩ রানে আউট হওয়ায় শতরান করা থেকে বঞ্চিত হলেন। এই দুই ব্যাটসম্যানের দুরন্ত ভূমিকা ভারতকে বেশ কিছুটা পিছনে ফেলে দিয়েছে। তাই ভারতীয় দলের জয়ের স্বপ্ন দেখতে ঠিকানা পাওয়া যাবে কীনা তা কেউই বলতে পারবেন না। যার ফলে সিরিজ ধরে রাখাটা এখন কঠিন হয়ে গেল।
Advertisement
শনিবার প্রথম দিনে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমারা ৬ উইকেটে ২৪৭ রান তুলে ছিল। আর দ্বিতীয় দিনে তারা ৪ উইকেটে ২৪৭ রান তুলে বুঝিয়ে দিল দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট কাকে বলে। ভাবতে পারা যায় শেষ তিন উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে ১৫৫ রান যোগ হয়েছে। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায় ভারতের বোলররা দিশেহারা হয়ে পড়েন। দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে ভারতীয় বংশোদ্ভুত অলরাউন্ডার সুনেরন মুথুস্বামী সাত নম্বরে খেলতে নেমে শতরান করলেন। তামিলনাড়ুর এই মুথুস্বামী দক্ষিণ আফ্রিকার নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করেছেন। ৩১ বছর বয়সী মুথুস্বামী পাকিস্তান সিরিজে বেশ নজর কেড়েছিলেন। আর এবারে ভারতের মাটিতে তিনি ১০৯ রান করে শিরোনামে উঠে এলেন। তারপরে ভেরেনের ৪৫ রান এই সময় অত্যন্ত জরুরী ছিল। পাশাপাশি জানসেনের ৯৩ রান দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডকে আরও উজ্জ্বল করে। জানসেন এই রান করার ফাঁকে ১০টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন। ভেরেন আউট হওয়ার পরে দলের হাল ধরেন জানসেন। বেশ গুছিয়ে খেলেছেন। শতরানের পথে এগিয়ে যাওয়ার পথে ভারতের কুলদীপ যাদবের বল সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। সরাসরি সেই বল উইকেট ভেঙে দেয়। তবে জানসেনের আগ্রাসী ব্যাটিং দেখে বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামের দর্শকরা শীতের বিকেলকে বেশ উপভোগ করেছেন। কেশব মহারাজ ১২ রানে অপরাজিত থাকেন। যখন জানসেন মাঠ ছেড়ে আসছিলেন তখন সবাই দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেনি। তিনি ব্যাট উঁচু করে সেই অভিন্দনের প্রত্যুত্তর দেন।
Advertisement
প্রথমদিনের শেষে কুলদীপ যাদব প্রতিপক্ষ উইকেট ভেঙে দিয়ে লড়াইয়ে রেখেছিলেন ভারতীয় দলকে-তা ধরে রাখতে পরাল না ভুল পরিকল্পনায়। যতই ব্যাটিং উইকেট বলে সান্ত্বনা বাক্য ছুঁড়ে দেওয়া হোক না কেন-নিজেদের দুর্বলতাকে স্বীকার করতেই হবে। কুলদীপ যাদব ৪টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। আর যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ ও রবীন্দ্র জাদেজারা ২টি করে উইকেট পান। নীতীশকুমার রেজ্জি এবং ওয়াশিংটন সুন্দর বোলার হিসেবে একেবারে ব্যর্থ।
দক্ষিণ আফ্রিকার বড় রানকে সামাল দেওয়ার ভাবনায় ভারতীয় দলকে সাবধানী হতে হবে। দিনের শেষ লগ্নে ভারতের প্রথম ইনিংস শুরু করেন যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল। যশস্বী ৭ ও লোকেশ রাহুল ২ রানে অপরাজিত রয়েছেন। তাই তৃতীয় দিনে তাঁদের লক্ষ্য থাকবে স্কোরবোর্ডে কীভাবে বড় রান উপহার দেওয়া যায়।
Advertisement



