আরারিয়া, কাটিহার, কিষানগঞ্জ, পুর্ণিয়া— বাংলা লাগোয়া বিহারের এই চার জেলা একসঙ্গে পরিচিত সীমাঞ্চল নামে। এই এলাকার রাজনৈতিক ক্ষেত্র বিহারের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভোটের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। এখানকার মোট চব্বিশটি বিধানসভা আসনের মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম ভোট বিশেষ প্রভাব ফেলে। ২০০৫ সালের নির্বাচনের আগে মহাজোট আশা করেছিল, এই এলাকার ভোটই তাদের জন্য বড় ভরসার জায়গা হবে। কিন্তু ভোট গণনার পর দেখা গিয়েছে, সীমাঞ্চল থেকে মহাজোট প্রায় সম্পূর্ণভাবে হেরে গিয়েছে।
২০২০ সালের নির্বাচনে এই এলাকায় ওয়েইসির দল পাঁচটি আসনে জয় লাভ করেছিল। আবার বেশ কিছু আসনে দ্বিতীয় স্থানেও ছিল। সেই নির্বাচনের ফলাফলে মহাজোট ও ওয়েইসির দলের ভোট কাটাকাটিতে জাতীয় জনতাবাদী জোট বা এনডিএ আটটি এবং জনতা দল (ইউনাইটেড) চারটি আসনে জয়ী হয়েছিল। সেই সঙ্গে মহাজোটের পক্ষ থেকে কংগ্রেস পাঁচটি, বামপন্থী দল ও রাষ্ট্রীয় জনতাদল একটি করে আসন পেয়েছিল। এবারের নির্বাচনে মহাজোটের আশা ছিল, এসআইআর বা ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের ফলে মুসলিম ভোট একত্রিত হবে। কিন্তু তা হয়নি।
Advertisement
তবে ভোটের ফলাফলে দেখা গিয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। মহাজোট মাত্র একটি আসনে সামান্য এগিয়ে। কিষানগঞ্জ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী সামান্য এগিয়ে থাকলেও বাকি সব আসনে জয়ী জাতীয় জনতাবাদী জোট বা এনডিএ। পাঁচটি আসনে ওয়েইসির দল এগিয়ে এবং একাধিক আসনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। জাতীয় জনতাবাদী জোটে বিজেপি ও জনতা দল (সংযুক্ত) উভয়ই অধিকাংশ আসনে এগিয়ে। চিরাগ পাসওয়ানের দল, উপেন্দ্র কুশওয়াহার ও জিতন রাম মাঝির দলেরও কিছু আসনে শক্তিশালী অবস্থান লক্ষ্য করা গিয়েছে।
Advertisement
মহাজোটের আশা ছিল, এসআইআর বা ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের পরে মুসলিম ভোট একত্রিত হবে, কিন্তু তা ঘটেনি। এই অঞ্চলে ভোটার তালিকা আপডেটের ফলে সবচেয়ে বেশি ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। ফলে সংখ্যালঘু ভোটাররা মহাজোটের প্রতি আস্থা রাখতে পারেনি। ওয়েইসির দল এই সুযোগ নিয়ে মুসলিম ভোটের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
মহাজোট নিষাদ ও মাল্লা ভোটের জন্য উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মুকেশ সাহানির নাম ঘোষণা করেছিল। কিন্তু মুসলিম ভোটারদের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষোভ তৈরি হয়। ওয়েইসির দল এই ক্ষোভকে প্রচারের কাজে লাগিয়েছে। এই ভোট কাটাকাটির সুবিধা জাতীয় জনতাবাদী জোট বা এনডিএ পেয়েছে।
আবার তিন তালাক প্রথা বাতিলের পর মুসলিম মহিলাদের ভোটের একটি বড় অংশ এবারের নির্বাচনে জাতীয় জনতাবাদী জোটের পক্ষে গেছে। নীতীশ কুমার মহিলাদের জন্য দশ হাজার টাকা ঘোষণা করার পর মুসলিম মহিলাদের মধ্যে জোটের প্রতি সমর্থন বেড়েছে।
নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে, জাতীয় জনতাবাদী জোট রেকর্ড সংখ্যক আসন পেয়ে জয়ের দোরগোড়া পেরিয়ে গিয়েছে। জনতা দল (ইউনাইটেড)-কে পিছনে ফেলে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। মহাজোট ও কংগ্রেসের পরিকল্পনা এখানে কার্যকর হয়নি।
বিজেপি বর্তমানে ৮৯টি আসনে এগিয়ে, আবার জনতা দল (ইউনাইটেড) ৮৪টি আসনে এগিয়ে। তাদের জোট শরিকদের ফলও সন্তোষজনক। চিরাগ পাসওয়ানের দল ২৮টি আসনের মধ্যে ১৯টিতে এগিয়ে। উপেন্দ্র কুশওয়াহার ৬টির মধ্যে ৩টিতে এগিয়ে। জিতন রাম মাঝি ৬টির মধ্যে ৫টিতে এগিয়ে।
ফলে সীমাঞ্চল এলাকায় মহাজোটের রাজনৈতিক লড়াই অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংখ্যালঘু ভোট ও মহিলা ভোটের পরিবর্তিত ধারা, এছাড়া ভোটার তালিকা সংশোধন এবং ওয়েইসির দলের শক্তিশালী উপস্থিতি মিলিতভাবে এনডিএ-কে বড়সড় জয় এনে দিয়েছে। মহাজোটের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে এবং বিজেপি ও জনতা দল (ইউনাইটেড) জোটের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
Advertisement



