• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ, একের পর এক মৃত্যু রাজ্যে

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

এসআইআর ঘোষণার পর থেকে রাজ্যে একের পর এক মৃত্যু নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। পানিহাটির প্রদীপ কর, ইলামবাজারের ক্ষিতীশ মজুমদার, টিটাগড়ের কাকলি সরকারের পর এবার জামালপুরের বিমল সাঁতরা। এনআরসি, এসআইআর আতঙ্কে এই ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই মৃত্যুর জন্য বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে একযোগে দায়ী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আতঙ্কের আবহে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও চূড়ান্ত পদক্ষেপ না করারও বার্তা দিয়েছেন তিনি।
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একাধিকবার এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দিয়েছেন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকিও। এর জেরে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের আগে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তড়িঘড়ি এই প্রক্রিয়া কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
আগে থেকেই এনআরসি, সিএএ নিয়ে আতঙ্কে দেশবাসী। তার মধ্যে এবার নতুন সংযোজন এসআইআর। এসআইআর কী? এই প্রশ্ন দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা। সেক্ষেত্রে সঠিক প্রচার ছাড়া তড়িঘড়ি এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে এসআইআর নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার পথে নামছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মাস ছয়েক পরে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। এই আবহে ২৭ অক্টোবর রাজ্যে এসআইআর তথা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। পরের দিন অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে এসআইআর প্রক্রিয়া। এসআইআর ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খড়দহের পানিহাটিতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন ৫৭ বছরের প্রদীপ কর। তাঁর ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে তিনি সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছেন। দাবি করা হচ্ছে, তাঁর মৃত্যুর জন্য এনআরসিকে দায়ী করেছেন তিনি। প্রদীপের পরিবার জানিয়েছে, এনআরসি নিয়ে আতঙ্কে থাকতেন তিনি। এসআইআর ঘোষণার পর তা আরও বাড়ে। সেই কারণে এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রদীপ।
প্রদীপের মৃত্যুর ঠিক পরের দিন এসআইআর আতঙ্কে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন দিনহাটার বাসিন্দা ৬৩ বছরের খইরুল শেখ। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নামের বানান ভুল ছিল। সেই কারণে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার ইলামবাজারে ৯৫ বছর বয়সি ক্ষিতীশ মজুমদার আত্মহত্যা করেন। পরিবারের অভিযোগ, ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। সেই নিয়ে আতঙ্কে ভুগছিলেন তিনি।
এই তিন ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এনআরসি, এসআইআর আতঙ্কে ফের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে টিটাগড়ে। গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ব্যারাকপুর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেজি স্কুল রোড মনসা মন্দিরের বাসিন্দা কাকলি সরকার (৩৩)। বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ এলাকায় তাঁর বাবার বাড়ি। ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়ে ভারতে আসেন তিনি। এসআইআর ঘোষণার পর থেকেই তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে বলে চিন্তায় ছিলেন। সেই কারণে তিনি এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দাবি করে পরিবার।
সম্প্রতি, এসআইআর আতঙ্কে তামিলনাড়ুতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পরিযায়ী শ্রমিক বিমল সাঁতরার। তাঁর ছেলে বাপি সাঁতরার অভিযোগ, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বাবা। সেই চিন্তা থেকে অসুস্থ হয়ে ২৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার সন্ধ্যায় মরদেহ ফেরে গ্রামের বাড়িতে। মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এই সব মৃত্যুর দায় কার তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস এর জন্য বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে বিজেপি নিশানায় রাজ্যের শাসকদল। কিন্তু আসলে এর দায় কার তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। এখনও রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ এসআইআর কী তা জানেনই না। বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকার মানুষজনের এর সম্পর্কে ধারণা একেবারেই নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র ৬ মাস আগে এই প্রক্রিয়া রাজ্যে শুরু করায় আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া কী, কীভাবে সংঘটিত হবে, কে, কেন করছে? সেই সব প্রশ্নের উত্তরও নেই অনেকের কাছে। সঠিক প্রচার না হওয়ায় মানুষের কাছে অনেক কিছুই অজানা থেকে গিয়েছে। সেই কারণে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এদিকে এসআইআর আতঙ্কে যেখানে রাজ্যে একের পর এক মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসছে সেখানে এই নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, ‘বাঁকুড়ায় একটা চিতাবাঘ মারা গিয়েছে। এর পিছনেও এসআইআর আছে।’ তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্যের মানুষ মরল না বাঁচল তা নিয়ে বিজেপির কিছু যায় আসে না। গেরুয়া শিবির শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করে।

Advertisement

Advertisement