• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

রঞ্জির প্রথম ম্যাচেই ইডেনে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নিল বাংলা

শামি প্রমাণ করে দিলেন তিনি পুরোপুরি ফিট

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ক্রিকেটের পরিভাষায় সবসময় উল্লেখ করা হয়ে থাকে অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় অঘটন এবং অকল্পনীয়। তাই এই কথাগুলো শনিবার ইডেন উদ্যানে রঞ্জি ট্রফি ক্রিকেটে প্রথম সাক্ষাৎকারে বাংলার নামের পাশে লেখা হয়ে গেল। প্রতিপক্ষ উত্তরাখণ্ড যেভাবে শেষ দিনে বাংলার কাছে ধরাশায়ী হয়ে গেল, তা তো নাটকীয়। কেউই ভাবতেই পারেননি বাংলা এইভাবে জয়ের পতাকা হাতে নিয়ে সারা ইডেন ছুটবেন খেলোয়াড়রা। অনেক স্বপ্ন সুখের বার্তা এনে দেয়। ঠিক তাই। বাংলার সাহসী ক্রিকেটাররা যেভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে উত্তরাখণ্ডের কাছ থেকে ম্যাচটা ছিনিয়ে নিলেন, তা অবাক করার মতো। গত শুক্রবার তৃতীয় দিনের শেষে যে অবস্থায় খেলাটা দাঁড়িয়েছিল, সেখান থেকে ম্যাচ বের করে আনা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু বাংলার আগ্রাসী ভূমিকার কাছে ধরাশায়ী হয়ে গেল উত্তরাখণ্ড।

অভিমন্যু ঈশ্বরণের বাংলা দল ৮ উইকেটে উত্তরাখণ্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠল। আর জোর গলায় বলতে হবে, ভারতের নির্বাচকমণ্ডলী বাংলার বোলার মহম্মদ শামির উপরে যে অন্যায় করেছেন, তার জবাব দিয়েছেন। শামি দুই ইনিংসে সাতটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছেন। কিন্তু এই দুরন্ত বোলারের জায়গা হয়নি অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলে। তাহলে কি বলতে পারা যাবে না, ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম ম্যাচেই নির্বাচকদের জানান দিয়েছেন মহম্মদ শামি, আমি পুরোপুরি ফিট।

Advertisement

প্রথম ইনিংসে উত্তরাখণ্ড ২১৩ রান করে সবাই আউট হয়ে গিয়েছিল। আর ওই ইনিংসে বাংলার সূরজসিন্ধু জয়সওয়াল চারটি উইকেট নিয়েছিলেন। সুরজের পাশে তিনটি করে উইকেট পেয়েছিলেন ঈশান পোড়েল ও মহম্মদ শামি। অবশ্য ওই ইনিংসে প্রথম দিকে শামি সেইভাবে বড় ভূমিকা না নিলেও, পরবর্তীতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাকে কীভাবে এগিয়ে রাখা যায়। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলা ৩০৩ রান করেছিল। অল্পের জন্য সুদীপ চট্টোপাধ্যায় শতরান থেকে বঞ্চিত হন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৯৮ রান। সেই সঙ্গে বাংলার স্কোরবোর্ডকে ভালো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন সুমন্ত গুপ্ত ৮২ রান করে। বাংলা এগিয়েছিল ১১৩ রানে। উত্তরাখণ্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৫ রান করে গুটিয়ে যায়। আর এই ইনিংসে দুরন্ত ভূমিকা পালন করেন মহম্মদ শামি। তিনি পেয়েছেন চারটি উইকেট। আর ঈশান পোড়েল দুটি উইকেট তুলে নিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাকে ১৫৬ রান করলেই জয় চলে আসবে হাতের মুঠোয়। বেশ কঠিন জায়গায় বাংলা দাঁড়িয়েছিল।

Advertisement

কিন্তু যে দলে মহম্মদ শামির মতো বোলার থাকে আর তার পরে অধিনায়ক হিসেবে অভিমন্যু ঈশ্বরণকে পাওয়া যায়, সেখানে কঠিন শব্দটা হয়তো বড় করে দেখা দিতে পারে না। সত্যিই তাই হল। অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের উপরে আস্থা রেখে যেন তাঁর ব্যাট ঝলসে উঠল। অভিমন্যুর ব্যাট থেকে একের পর এক রান আসতে শুরু করে। যতই অভিমন্যু ব্যাট চালিয়ে খেলতে থাকেন, ততই যেন ইডেন তপ্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ৮২ বলে ৭১ রান করে অপরাজিত থাকলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ। আর সুদীপকুমার ঘড়ামি ৪৭ বলে ৪৬ রান করে বাংলার জয়কে নিশ্চিত করে দেন। অভিমন্যুর সঙ্গে অপরাজিত ছিলেন বিশাল ঘাটি ১৬ রানে। সিএবি’র সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি হওয়ার পরেই রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার জয় অবশ্যই গর্ব করার মতো।

রঞ্জি ট্রফির প্রথম ম্যাচে বাংলা জিতলেও ইডেনের উইকেট নিয়ে খুশি নন বাংলার দুই বোলার মহম্মদ শামি ও আকাশদীপ। অভাবনীয় ভাবে বাংলা এই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পেলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বোলাররা। তাঁদের অভিমত, পিচে দু’রকমের গতি দেখতে পাওয়া গেছে। কখনও বল নিচু হয়ে যাচ্ছে, কখনও ব্যাট করতে সমস্যা হচ্ছে। তাই বোলারদের পিচ সেইভাবে সাহায্য করতে পারেনি। তবুও সৌরভ গাঙ্গুলি বোলারদের এগিয়ে রাখলেন এই জয়ের জন্য। ইডেনের উইকেট নিয়ে পিচ কিউরেটর সুজন মুখার্জি কোনও অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেছেন, উইকেটে বাউন্স কম, এটা আমি বিশ্বাস করি না। প্রতিপক্ষ দল তো এই উইকেটকে প্রশংসা করে গেলেন। তাহলে বাংলার বোলাররা এমন কথা কেন বলছেন? যাঁরা খেলা দেখেন, তাঁরাও সংশয় প্রকাশ করেননি। তৃতীয় দিনের শেষে উত্তরাখণ্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ১৬৫। সেখান থেকে তারা আর ১০০ রান করে সবাই আউট হয়ে যান।

আর এরপরেই বাংলা জেতার জন্য যে রানের প্রয়োজন ছিল তা তো সহজেই তুলে নিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। তাই এসমস্ত কথা বলে বিতর্ক তৈরি করতে যাঁরা চাইছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ ক্রিকেটারদের পাশে থাকুন, বাংলা জয়ের মুখ দেখুন।

Advertisement