• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

রাজস্থানে চলন্ত বাসে যাত্রীদের হামাগুড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচান কন্ডাক্টর, মৃত ২০, প্রধানমন্ত্রীর শোকপ্রকাশ

রাজস্থানের জয়সলমেরে চলন্ত বাসে ভয়াবহ আগুন

রাজস্থানের জয়সলমীরে বাসে ভয়াবহ আগুন। মঙ্গলবার চলন্ত একটি বাসে আচমকা আগুন লেগে যায়। আগুনে ঝলসে যায় একাধিক যাত্রী। এখনও পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আরও বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হয়েছেন। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মৃতদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্যও ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে জয়সলমীর থেকে যোধপুরগামী একটি বেসরকারি যাত্রীবাস থাইয়াত সামরিক ঘাঁটির সামনে পৌঁছোয়। সেই সময় ইঞ্জিনের দিক থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। কিছু বোঝার আগেই বাসটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করে। আতঙ্কিত যাত্রীরা জানলা ভেঙে লাফিয়ে নামতে শুরু করেন। তাতেও অনেকে আহত হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘটনায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

আগুন দেখতে পেয়ে চালক প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাস থামিয়ে দিয়েছিলেন। এসি বাসের দরজা, জানলা বন্ধ থাকায় যাত্রীরা বেরোতে পারছিলেন না। অনেকে বাসের জানলার কাচ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। বাসের কন্ডাক্টর রফিক খান আগুনের শিখা এড়িয়ে কোনও রকমে বাসের দরজার কাছে পৌঁছোন। বাসের দরজা খুলে দেন। আগুনের পরোয়া না করে যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কন্ডাক্টর রফিক খান এখন হাসপাতালে ভর্তি। শরীরে রয়েছে পোড়া ক্ষত।

Advertisement

তাঁর ভাই জানিয়েছেন, যখন বাসে আগুন লাগে, তখন রফিক বাসের পিছন দিকে ছিলেন।  পিছনের আসনের যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করছিলেন। আচমকা আগুন দেখে সবাই ভয় পেয়ে যান। রফিক ছুটে দরজার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কয়েক পা এগোতেই বাসের ছাদ থেকে আগুনের শিখা নীচের দিকে নেমে আসে।

বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। আগুনে গুরুতর জখম হন রফিক খান। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না। কোনও রকমে হামাগু়ড়ি দিয়ে দরজার কাছে পৌঁছোন এবং দরজাটি খুলে দেন। অনেক যাত্রীকে তিনি নিজে টেনে বাস থেকে নামান। স্থানীয় বাসিন্দারাও যাত্রীদের উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিল।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি কে কে ট্রাভেলস কোম্পানির বলে খবর। রেজিস্ট্রেশন হয় ১ অক্টোবর। মাত্র পাঁচ দিন আগেই জয়সলমীর-যোধপুর রুটে বাসটি চালু হয়েছিল। সূত্রের খবর, বাসটিকে এসি স্লিপার কোচ বদলানো হয়। এর জন্য বাসের ভিতরে দাহ্য ফাইবার বডি প্যানেল এবং পর্দা ব্যবহার করা হয়েছিল।

সূত্রের খবর, ওই বাসের এসি-র বিদ্যুতের তার থেকে শর্ট সার্কিট হয়। তা থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাসে। বাসের সামনের দিকে একমাত্র বেরোনোর দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়। বাসের জানালার কাঁচ খুব শক্ত হওয়ায় অনেকে চেষ্টা করেও তা ভাঙতে পারেননি। এর ফলে অনেক যাত্রী বাসের ভিতরেই আটকে পড়েন। যদিও তার মধ্যেই কয়েকজন যাত্রী জানালা ভেঙে বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন।

আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের সামনে একটি সেনা ছাউনি থেকে একদল সেনা দ্রুত সেখানে পৌঁছয়। তাঁরা সেখানে পৌঁছে আর্থ মুভার ব্যবহার করে বাসের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। সূত্রের খবর, দমকলকে খবর দেওয়ার প্রায় ৪৫ মিনিট পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।

আহতদের প্রথমে জওহর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ১৬ জন যাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের যোধপুরের একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করে লিখেছেন, ‘জয়সলমেরের দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। মৃতদের পরিবারদের প্রতি সহানুভূতি জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।‘ মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ও এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এর পাশাপাশি এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজনলাল শর্মা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

 

 

Advertisement