• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

ভারতীয় কমিশন সফল, নেপোবেবি বিপ্লব অচল

এই দেশের ভিত্তির অতলে চির বিরাজমান বিশ্ব মহিমান্বিত তীব্রতর গণতন্ত্র। আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখানে পারস্পরিক কাটাছেঁড়া অহরহ বিস্তর।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সুবীর পাল

তাহলে ভারতের কি হবে? ওরে বাবা নেপোকিড যে সেখানেও বিস্তর। তবে? তবে? তবে আর কি? এখানে তেমন কমিশন আছে। এক্কেবারে সর্ববিপ্লবের সর্ববিষহরি মহাঔষধ যাকে বলে। সময়ের চরকা কাটা বুড়িও তাই এদেশের আনাচে কানাচে অঢেল। তাই নাহি চিন্তা ওইসব ওরে সবুজ ওরে কাঁচা বিপ্লবীয়ানায়। এই দেশটির নাম মনে রেখো, ‘ভারতবর্ষ।’

Advertisement

সারা বিশ্বের তথাকথিত অচলায়তন রাষ্ট্রতন্ত্রের কাছে নেপোকিড যেন অধুনা এক সাক্ষাৎ যমদূত। আর দক্ষিণ এশিয়া তো এই ইস্যুতে যেন হয়ে উঠেছে জীবন্ত রসায়ণাগার। তাই বিশ্ববাসীর কাছে এখন একটাই মিলিয়নিয়ার অর্থ মূল্যের প্রশ্ন, ভারতের পালা আর কবে আর কবে?

Advertisement

উত্তরও অবশ্য একটাই, যা যা ভেল্কি লাগ। গিলি গিলি গো। ভ্যানিশ। ভারতীয় যাদুটোনায় কমিশনের শরশয্যায় নেপোকিড যে এদেশে স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রমাদ গুণতেই ব্যস্ত।
বিগত দিনের কথায় আছে, ‘কমিশন মানেই তো অমিশন।’
এই বাক্যটি কেমন জানি চেনা চেনা। অথচ ভুলে ভুলে যাওয়া যাওয়া।
ঠিক ঠিক। এইতো মনে পড়েছে। আরে এই কথাটা তো একদা বেশ প্রচলিত ছিল এই বাংলায়। একাংশ সাংবাদিকদের নিজস্ব মহলে।

এই বাংলায় তখন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর দাপুটে সময়কাল। ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সমান’, শিয়াল বনে গণহুক্কা হুয়ার প্যাটার্ণে এই মাস ভোকাল ট্যাগলাইনে বাংলার প্রাথমিক পাঠশালায় ততক্ষণে ইংরেজি ভাষার কফিন বন্দি সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।

কমিশন অর্থ কিছু বিষয় তদন্ত করে দেখার জন্য গড়ে তোলা কমিটি গোছের। তবে বহুক্ষেত্রে ওয়ান ম্যান কমিটিও গঠন করা হয়। আবার একাধিক সদস্যও মাঝেমধ্যে কমিশনে থাকে চেয়ারম্যানের অধীনে। কমিশনের কাজ হলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে তার লিখিত রিপোর্ট জমা দেওয়া নিয়োগকর্তার কাছে। রাজ্য বা কেন্দ্রীয় স্তরে এই কমিশনের সিংহভাগ নিয়োগ কর্তা হলো সংশ্লিষ্ট সরকার। তবে অভিধানগত ভাবে কমিশনের মানে হলো ‘কোন কর্ম সম্পাদন করা’।

অন্যদিকে, ডিকশনারিতে অমিশন শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো ‘বাদ দেওয়া’। আর সাংবাদিকদের নিজস্ব আলোচনার ক্ষেত্রে অমিশন বলতে সেই সময়ে বোঝাত, ফাইলের লাল ফিতের ফাঁসে দীর্ঘায়িত কালের চালনির মাধ্যমে হিমশীতল ইগলুতে সযত্নে চালান করে দেওয়া। অর্থাৎ সময়ের জঠরে নিষ্ক্রিয় করে রেখে দাও পরিকল্পনা মাফিক।

আসলে আমাদের দেশে দুই ধরণের সরকার রয়েছে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর মধ্যে। একটি হলো কেন্দ্রীয় সরকার। যা গোটা দেশের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকে। অপরটি হলো রাজ্য সরকার। যা বিভিন্ন প্রদেশের পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে পৃথক পৃথক রাজ্য সরকার। দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্য সরকার ও সময়ে সময়ে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকার নানাবিধ কমিশন গঠন করে থাকে। সেই কমিশন রেঁনেসাসের শুরু স্বাধীন ভারতবর্ষে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমল থেকে। বৃটিশ ভারত প্রশাসনের থেকে ঋণ করা এই চতুর টাইম কিলিং পদ্ধতির ট্র্যাডিশন যে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগেও আমাদের দেশে বহুল প্রাসঙ্গিক। মহামান্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালেও। অন্তত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছে মহার্ঘ রক্ষাকবচের হরিহর মর্যাদায়।

আসলে আমাদের দেশের অভ্যন্তরে কোনও আকস্মিক সমস্যা বা অপ্রত্যাশিত বেনিয়ম ঘটলেই সংশ্লিষ্ট সরকারের চোখের ঘুম উড়ে যায় কখনও কখনও। এমনকি সাধারণ নাগরিকের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর ও আন্দোলন ক্রমশ প্রশাসনের কাছে কিঞ্চিৎ মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে ওঠে ওই সমস্ত গোলযোগকে কেন্দ্র করে। আর তখনই জনগনের ক্রোধকে প্রশমণ করতে প্রয়োগ করে বসে সেই চিরাচরিত ব্রহ্মাস্ত্র ‘কমিশন’ গঠন প্রক্রিয়া। নবগঠিত কমিশনের কাজ তখন হয়ে ওঠে, ওই সংগঠিত অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করা এবং তার রিপোর্ট তৈরি করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে।

আরে কি, কি যেন বললেন, নির্দিষ্ট সময়সীমা? এই কথা শুনে ঘোড় দৌড়ের তেজি ঘোড়াও হঠাৎ রেসের ছোটা থামিয়ে চিঁচিঁ করে হাঁসতে শুরু করেছে যে। সিংহভাগ কমিশন সময়সীমার মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবে এটা যেন এই দেশের কাছে পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ওঠার মতো মহা আশ্চর্যের জাগতিক বিষয়বস্তু। তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া তো দূর অস্ত। কমিশনের বৈঠকই বসে না যুগ যুগ ধরে। আর ততক্ষণে পাবলিকের ওই ক্ষোভ কখন যে গলে বরফজল হয়ে যায় তার খবর আর কোন বান্দা রাখে। সরকারের এই ধারাবাহিক কমিশন কালচারকে তাই বঙ্গীয় সাংবাদিক বন্ধুদের অনেকেই একদা ব্যঙ্গ করে বলতেন, কমিশন মানেই তো অমিশন।
তা যাক আপাতত বঙ্গ সাংবাদিকের কমিশন-অমিশন’-এর অতীতের ঠেক কাহিনী। প্রয়োজনে না হয় পড়ে তা গরম তাওয়ায় আরও একবার সেঁকে নেওয়া যাবে। এখন কিন্তু এআই যুগের সাংবাদিকদের মগজে দুটো নতুন শব্দ বেশ চড়াম চড়াম করে ঘুরপাক খাচ্ছে, জানেন তো। না না, এটা মোটেও বাংলা শব্দ নয়। এখনও এসবের বাংলা অস্মিতার নিজস্ব সমার্থক শব্দ খুঁজেই পাচ্ছি না কোনও মুলুকে। সেগুলো হলো, এক্কেবারে লেটেস্ট ইংরেজি কেতাদুরস্ত হাই প্রোফাইল শব্দ, ‘নেপোকিড’ বা ‘নেপোবেবি’।

এই নেপোকিড বা নেপোবেবি কি? এর আসল অর্থইবা কি? আপাতত মোদ্দা কথায় যা বোঝায় তা হলো, ইংরেজি নেপোটিজম শব্দের থেকে এই দুটি শব্দের অধুনা উৎপত্তি। মূলতঃ কোনও রাষ্ট্রের মন্ত্রী, নেতা, আমলা সহ দেশীয় ক্ষমতায়ণের বৃত্তে থাকা পরিবারের সন্তানেরা সমাজের যাবতীয় সুবিধা ভোগ করে থাকে নির্লজ্জ ভাবে। সমাজের নিচুতলার দুর্দশাকে কার্যত উপেক্ষা করে তারা তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনকে প্রকাশ্যে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে দ্বিধাবোধও করে না। নিত্য অভ্যাস বশতঃ নানা দুর্নীতি থেকে আমদানি করা পারিবারিক অর্থ তারা দৈনন্দিন জীবনে দেদার ব্যয় করতে রীতিমতো গর্ব বোধ করে থাকে। এ হেন সন্তানদের বলা হয়ে থাকে নেপোকিড বা নেপোবেবি। আজকের দুনিয়ায় এরকম নেপোকিড বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই কমবেশি দেখা মেলে।

এই নেপোকিডের আচার আচরণ দিনের পর দিন লক্ষ্য করতে করতে এবং নিজেরা ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের কুপ্রভাবে অন্যায়রকমে নিঃপেষিত হতে হতে তাঁরা প্রাথমিক ভাবে নেপোকিডদের উপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত এই চুড়ান্ত অব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশের যুব সম্প্রদায় দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেয়। সঙ্গে আমজনতা মিলে মিশে এক রাষ্ট্রীয় বিদ্রোহের জনজাগরণে সামিল হয়ে পড়েন অচিরেই। আর এই মোওকা বুঝেই রাষ্ট্রীয় শাসক উল্টাতে বারেবারে বিদেশি স্বার্থান্বেষী শক্তি পিছন থেকে মদত যোগাতে থাকে আন্দোলনকারীদের অনেকটা দিকভ্রান্ত করে দিয়ে। এই বিক্ষোভ অপারেশন এখন মোটামুটি ভাবে ইউরোপের সার্বিয়া ও ফ্রান্সের মাটিতে গনগনে আঁচ হয়ে দেখা দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিতে তো এখন এই নেপোকিড কেন্দ্রিক বিদ্রোহ যে ইতিমধ্যেই সাফল্যের হ্যাটট্রিক করে ফেলেছে। বিশেষতঃ ভারতীয় মহাদেশে এ যে সার্থকতার ত্রিবেণী সঙ্গম ঘটে গেছে একদম মাখনের উপর ছুড়ি চালানোর নিখুঁত মসৃণতায়।

সবে কোভিড মহামারীর হার্ডেল পেড়িয়ে ধরিত্রী মোটামুটি শান্ত হয়েছে। জনজীবনে নিত্য বাঁচার ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে। আর্থিক অভাব যেন প্রসারিত হয়েছে আমজনতার কাঁধে দ্বিগুণ অভিশাপের ছোবলে‌। এদিকে সেই নেপোকিডদের ভোগ বিলাসের খামতি কিন্তু একেবারেই দেখা নেই। তাই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শিখায় উন্মুক্ত হয়ে ওঠে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কার জনগণ। দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনের প্রথম উইকেটটি ভূপাতিত হয় এই দ্বীপ দেশে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে। তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার দাদা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের বিপক্ষে সেই দেশের মানুষ রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে। একসময় তাঁদের সরকারি বাসভবণ দখল করে নেয় সাধারণ নাগরিকেরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে উভয়েই পালিয়ে যায় বিদেশে। তখনকার মতো শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন রণিল বিক্রমসিঙ্ঘে।

একই মহাদেশে অনেকটা একই কারণে দ্বিতীয় উইকেটে পড়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের থেকে জন্ম নেওয়া নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে। সেই দেশের আপাতত শেষতম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসে ভারতে। আজ বাংলাদেশ অনেকটা মৌলবাদের কব্জায়। মহম্মদ ইউনুসের প্রতিকী চালিকা শক্তিতে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস। এটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে এখানকার সরকার বিরোধী আন্দোলনের মূল আলোচ্য বিষয় সেই নেপোকিড ফলিত সামাজিক বৈষম্যবাদ। একই ঘরানায় প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে বিদেশে বসবাস আপাতত পাকা করেছেন নেপালের কেপি শর্মা ওলি। ফলে নেপাল পেল ভারতবন্ধু প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কিকে। নেপাল ও বাংলাদেশেও শ্রীলঙ্কার অনুকরণে দেশের সর্বোচ্চ সরকারি বাসভবণ আন্দোলনকারীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে। তবে এটাও ঠিক এই তিন দেশের সেনাবাহিনী কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের পাশ থেকে সমর্থনের হাত গুটিয়ে নেয়। ফলে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায় অনেকটা বিদ্রোহীদের ইচ্ছানুসারে।

ভারতের তিনটি সীমান্ত ঘেঁষা দেশে এই নেপোকিড ঘটিত আন্দোলনের জেরে সরকার পরিবর্তিত হয়ে গেলেও ভারতে এর প্রতিঘাত এখনও আছড়ে পড়েনি কেন? এই প্রশ্ন কিন্তু স্যোশাল মিডিয়া সম্প্রতি ঘুর্ণি ঝড় তুলেছে। তবুও ভারতের সামাজিক অবস্থান যেন শান্ত অন্তঃসলিলা নদীর মতো কুল কুল এখনও।

এই কুল কুল’এর কারণ কিন্তু পর্যালোচনা করতে গেলে নানাবিধ ভারত সরকারের সহায়ক ইস্যু পিংপং বলের মতো উঠে আসে। তবে কি এই দেশে নোপোকিডের অস্তিত্ব নেই? আলবাৎ আছে। আত্মীয়তাবাদ থেকে পুত্রকন্যাবাদ কে নেই? আসলে এই দেশে বহুল প্রদেশে বিভক্ত। তাদের সংস্কৃতি, রাজনীতি, জীবনযাপন সবই আলাদা। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরস্পর বিরোধীও। আর রাজনৈতিক ভাবে অনেক প্রদেশ তো বহু প্রতিবেশী প্রদেশের আবার জাতশত্রুও। তার উপর সেনাবাহিনী ত্রিখণ্ডিত। বায়ু, স্থল, জল বাহিনী নিজস্ব নির্দেশে এই দেশে চলতে বরাবরই অক্ষম। যতক্ষণ না পিএমও দফতর সবুজ সংকেত দিচ্ছে ততক্ষণ ভারতের সেনাবাহিনী যে প্রকৃতই ন যযৌ ন তস্থৌ। ফলে এখানে সর্বস্তরে সার্বিক পর্যায়ে দেশের সরকার বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধার সম্ভবনা অনেকটাই নেই বললেই চলে। আর যদিও বা কালেভদ্রে তা বাঁধে তখন তো সেনাবাহিনী নির্বিকার শীতঘুমে ব্যস্ত থাকে।

মনে পড়ে যায়, রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্ব কালে প্রবল বিরোধী হিসেবে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং দেশব্যাপী আওয়াজ তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন, ‘অলি গলি মে সোর হ্যায়, রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়।’ কিন্তু তিনিও তাঁকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উৎখাত করতে পারেননি যদিও রাজীব গান্ধীকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল ঘনঘন বিরোধী শিবির থেকে। যদিও নির্বাচনী যুদ্ধে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং জিতে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখল করেন পরবর্তীতে। আসলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে এখনও পর্যন্ত গণতন্ত্রের মূল কাঠামোর উপরেই ভারত আজও যথেষ্ট আস্থাশীল তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে পৃথিবীবাসীর দরবারে।

এর উপর তো রয়েছেই কমিশন মানেই তো অমিশনের সরকারি তুখোড় হাতযশ। কিছু একটা সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেই হলো। হল্লা চিৎকার পাড়ায় পাড়ায় জমায়েত বাড়তে শুরু করেছে যথারীতি। অমনি সরকার প্রমাদ গুনতে পেরে একটা কমিশন গঠন করে ফেললো। ব্যাস জনগণ খুশ। প্রশাসনিক কর্তাও বিন্দাস। ততক্ষণে কমিশনের তদন্ত জনিত ঔরস পতিত হয়ে গেছে হাতির জঠর সম সময়ের গর্ভে। রিপোর্ট সম হস্তিশাবক জন্মাতে যে একটা যুগ মোটামুটি নিশ্চিত। আর ততক্ষণের পাবলিক মেমোরি? ও তো কচুপাতায় বৃষ্টি বিন্দু পড়ার মতো। একটু হাওয়া দিলেই টুপিয়ে পড়ে যাবে টুপ করে। এসবই আন্দোলনের তাসের ঘরে টাইমপাসের ট্রাম্পকার্ড ফেলা মশাই। তাই ওইসব নোপোকিড বা নেপোবেবি ইস্যু টিস্যু ভারতের ক্ষেত্রে নোপোয় মারে দইয়ের কেল্লা ফতে ছাড়া আর কিচ্ছুটি নয়। কমিশন এদেশে আসলে অমিশনের দি গ্রেট যাদুটোনা, বুঝলে ত্রিদেশীয় বাছাধন! ভারতের বিরুদ্ধে তোমাদের প্রশ্ন নিজেদের বুক পকেটে রেখে দাও ভাইসব।

এই দেশের ভিত্তির অতলে চির বিরাজমান বিশ্ব মহিমান্বিত তীব্রতর গণতন্ত্র। আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখানে পারস্পরিক কাটাছেঁড়া অহরহ বিস্তর। তবু দেশীয় অহংকারের প্রশ্নে স্বনাগরিকদের বৃহত্তম অংশের মতধারাই এখানে অসীমতায় প্রতিষ্ঠিত। হতেই পারে নেপোকিড নতুন প্রজন্মের নব রাষ্ট্রমতের যৌবনদূত। তবু দেশটির নাম যে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র। এই ভূমে নেপোবেবি নয়, প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্রই অনন্ত পূজিত। এই কথাটি মনে রেখো তোমাদের এই হাসি খেলায়। তাছাড়া সমুহ বিপদে তো সমস্যা নিরসনের কল্পতরু কমিশন গুপ্ত মন্ত্র তো আছেই। সময় ব্যয়ের মেক ইন ইন্ডিয়ার ওয়াশিং মেশিনের লাগাতার ঘুর্ণনে অমিশন ব্যান্ডের ডিটারজেন্ট লিক্যুইড সহায়তায় আপাতত সব কেতাদুরস্ত বিপ্লব ধুয়ে মুছে সাফ করে এসেছে। ও আসবেও।

Advertisement