• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বিশ্ব শান্তির ভক্ষক

ট্রাম্পের দাবি, ‘গুনে গুনে সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছি। আগে কখনও কেউ একাজ করতে পারেনি। এর পরেও আমায় প্রমাণ দিতে হবে।’

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নিজেকে বিশ্ব শান্তি রক্ষার দাবিদার বলে ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশনে গিয়ে খোদ ওই সংস্থার বিরুদ্ধেই কামান দাগলেন ট্রাম্প। রাষ্ট্রসঙ্ঘকে ‘ব্যর্থ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সর্বনাশা’ বলে মন্তব্য করলেন। তাই রাষ্ট্রসঙ্ঘের বদলে বিশ্বশান্তি রক্ষার দায়িত্ব তাঁকেই দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের দাবি, ‘গুনে গুনে সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছি। আগে কখনও কেউ একাজ করতে পারেনি। এর পরেও আমায় প্রমাণ দিতে হবে।’ যথারীতি এই সাত যুদ্ধের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতও রয়েছে। এইরকম আরও একগুচ্ছ প্রলাপে ট্রাম্প একাধারে পশ্চিমা দেশগুলিকে অভিবাসীদের দেশছাড়া করার পরামর্শ দিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের আশঙ্কা নস্যাৎ করে ‘নেট জিরো’র উদ্দেশ্যে নেওয়া যাবতীয় যৌথ কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। রাশিয়ার পাশাপাশি ভারত ও চিনকে একঘরে করার হুমকি দিয়েছেন।

Advertisement

স্বাধীন প্যালেস্তাইনের ভবিষ্যৎ, গাজা গণহত্যা, অভিবাসন সঙ্কট সহ আরও নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার ৮০তম অধিবেশন এখন চলছে। সেই উপলক্ষে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দপ্তরে হাজির হয়েছিলেন। প্রথম ও দ্বিদীয় দফা মিলিয়ে ছয় বছরে এই প্রথম রাষ্ট্রসঙ্ঘে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সামনে বক্তব্য রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

Advertisement

প্রথম থেকেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতো বিভিন্ন বহুদেশীয় সংস্থাকে ‘ব্যর্থ’ বলে কটাক্ষ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমা দেশগুলির ‘সর্বনাশ’ করতে রাষ্ট্রসঙ্ঘ এক ‘আধিপত্যকামী’ অভিবাসন নীতি চাপিয়ে দিয়েছে। তার জন্য বাধ্য হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকাকে নাকি হাজার হাজার বেআইনি ভিনদেশীয়দের আশ্রয় দিতে হচ্ছে। অধিবেশনে উপস্থিত বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেছেন, ‘পশ্চিমা বিশ্বকে দখল করার এক চক্রান্তকে মদত দিচ্ছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। মুক্ত সীমান্তের ভাঁওতাবাজি ছুঁড়ে ফেলার সময় এসেছে। এখনই তা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অভিবাসন নীতি ইউরোপীয় দেশগুলির সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়।’

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার উপর ফের চড়া হারে শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। ইউরোপীয় দেশগুলিকে রাশিয়ার থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে বলে হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রসঙ্গত, এমন হুমকি ট্রাম্পের আগে বাইডেনও দিয়েছেন। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েও অর্থনৈতিক দিক থেকে মস্কোকে কোনওভাবেই পঙ্গু করা যায়নি।

তবে ট্রাম্পের সবথেকে জোরালো আক্রমণের শিকার হয়েছে জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলায় তৈরি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও বিধিবদ্ধ সংস্থা। বামপন্থীদের প্রচার করা ভাঁওতা বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নির্মাণে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আমেরিকা কোনও সাহায্য করবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর মতে, এর মাধ্যমে উন্নত দেশগুলিকে তাদের উৎপাদনী শক্তি, পরিকাঠামো ও প্রযুক্তি এমন সব দেশকে দিতে হবে যারা দেদার দূষণের জন্য দায়ী এবং নিয়মবিধি ভেঙে মুনাফা করছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জলবায়ু সঙ্কট সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অধিবেশনে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নির্মাণে আমেরিকার মতো বিভিন্ন প্রথম বিশ্বের দেশের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে অন্তত ১ লক্ষ কোটি ডলার সাহায্য করা উচিত বলে দাবি করা হয়েছে। ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বিভিন্ন দেশ এই দাবি করেছে। তবে ট্রাম্পের মতো অতি দক্ষিণপন্থীরা এর বিরোধিতা করেছে।

একদিকে বিশ্ব শান্তির রক্ষক হওয়ার দাবি জানাচ্ছেন, অন্যদিকে গাজায় গণহত্যায় ইজরায়েলকে দায়ী না করে মদত দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এত বিরোধিতা সত্ত্বেও প্যালেস্তাইনকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। বিশ্বশান্তির স্বঘোষিত রক্ষক ট্রাম্প অবশ্য এখনও ইজরায়েলের পক্ষে ওকালতি করে চলেছেন।

Advertisement