পরিবেশবান্ধব বিসর্জনের ব্যবস্থা করেছে দিল্লি সরকার। দুর্গাপুজো এগিয়ে আসার আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিল দিল্লি সরকার। যমুনায় দূষণ রোধ করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনে যমুনা নদীর দূষণ রোধ করতে এই বছর দিল্লি জুড়ে বেশ কিছু কৃত্রিম পুকুর তৈরি করা হয়। শুধুমাত্র দিল্লিতেই সেই সংখ্যা ১৫১। প্রতিটি জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে আগেই প্রতিটি পুজো কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম পুকুরের তালিকা। কোন পুজোর প্রতিমার বিসর্জন কোথায় হবে, তাও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বিসর্জন করা হয়েছে নয়ডা, গাজিয়াবাদ, ইন্দিরাপুরমের বিভিন্ন পুজোর প্রতিমা। সমস্ত জেলাশাসকের সঙ্গে প্রস্তুতি পর্যালোচনা করে পরিবেশমন্ত্রী মঞ্জিন্দর সিং সিরসা বলেন, এই প্রচেষ্টা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে উতসব উদযাপনের জন্য। সিরসা আগেই বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান কর্তব্য হল প্রতিটি ভক্তকে উদযাপনের জন্য সঠিক পরিবেশ দেওয়ার পাশাপাশি যমুনাকে পরিষ্কার রাখা। বিসর্জনের জন্য পুকুর তৈরি করে আমরা ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
পশ্চিম দিল্লি, পূর্ব দিল্লি, উত্তর-পশ্চিম দিল্লিতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লিকে আলাদা আলাদা জোনে ভাগ করে একাধিক পুকুর তৈরি করা হয়। শাহদরা, মধ্য দিল্লি, দক্ষিণ দিল্লি, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর দিল্লিতে আরও ছোট ছোট কৃত্রিম প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি পাড়ায় সহজে যাতে এই কৃত্রিম জলাশয়ে প্রবেশ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে বিধায়ক এবং আবাসিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে স্থানগুলি নির্বাচন করা হয়েছে। দিল্লি জল বোর্ড পুকুরগুলি পূরণ করে, অন্যদিকে সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ খনন ও নির্মাণের কাজ তদারকি করেছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, আগের বছরগুলির মতো এবার পুকুরের জল নষ্ট হবে না। একবার বিসর্জন শেষ হয়ে গেলে, জল পরিশোধন করে ব্যবহার করা হবে । রাস্তায় ছিটানো এবং পার্ক সেচের জন্য এই জল আবার ব্যবহার করা হবে। দিল্লি পুলিশকে যান চলাচল, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও তার নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা সহায়তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিটি বিসর্জনের জায়গায় ১টি অ্যাম্বুলেন্স এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রতি বছরই উৎসব শেষে যমুনায় দূষণ বৃদ্ধি পায়। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন যে প্লাস্টার অফ প্যারিসের মূর্তিগুলি জলে গলতে কয়েক মাস সময় নেয় নদীর তলদেশের ক্ষতি করে। অন্যদিকে উজ্জ্বল রঙ, যেমন সীসা, পারদ এবং ক্যাডমিয়ামের মতো বিষাক্ত পদার্থ জলের সঙ্গে মেশে। প্লাস্টিকের ফুল, থার্মোকল এবং ঠাকুরের সাজসজ্জার জন্য ব্যবহৃত চকচকে ক্ষতিকারক জিনিস জলের সঙ্গে মেশে। এগুলি একসঙ্গে নদীতে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং জলজ জীবনকে সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব মাটির মূর্তি এবং কৃত্রিম পুকুর বিশেষভাবে সহায়ক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জোরের সঙ্গে বলেন, যমুনার ক্ষতি না করে বহু বছরের পুরনো আচার-অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার এটাই একমাত্র টেঁকসই উপায়। ।
Advertisement
এদিকে এবার দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল জুড়ে হয়েছে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতেও তার পূর্বাভাস ছিল। সেই কারণে এবার প্যান্ডেল তৈরির সময় ব্যবহার করা হয়েছে ত্রিপল।
Advertisement
Advertisement
